এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রবাসীর স্ত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিবস্ত্র করে ভিডিও ও আপত্তিকর ছবি তুলে তা ফেসবুকে ভাইরালের ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় সুবিচার না পেয়ে ওই গৃহবধূ শিশুসন্তান নিয়ে স্বামী বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অভিযুক্ত মঞ্জুর রহমান (২৬) উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের ইন্নছ আলীর ছেলে।
প্রতারণার শিকার প্রবাসীর স্ত্রী জানান, তার স্বামী বিদেশ থাকার মঞ্জুর তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। আমি তার কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখাতো। এক পর্যায় তার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার বাড়িতে গিয়ে গোপনে কৌশলে ভয়ভীতি ও হুমকি দেখিয়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও এবং ছবি ধারণ করে।
পরে বিবস্ত্র ভিডিও এবং ছবি ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কয়েক দফায় তার নিকট থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মঞ্জুর। ফের গত আগস্ট মাসের শেষ দিকে মঞ্জুর আবারও ৬ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে বিবস্ত্র ছবি ভাইরাল করার হুমকি দেয়। টাকা না দেওয়ায় মঞ্জুর গৃহবধূর বিবস্ত্র ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল করে দেয়। এমনকি প্রবাসে থাকা ওই গৃহবধূর স্বামীকে ভিডিও ও ছবির কথা বলে দেয় মঞ্জুর। এই ভিডিও ও ছবি তার কয়েকজন আত্মীয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠায়। এই অবস্থায় সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন তিনি। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশে ওই বখাটেকে শান্তি দিলেও সে সংশোধন হয়নি, বরং আরও কয়েকজনকে ভিডিও ও ছবি পাঠায়। বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও প্রচার হওয়ার কারণে স্বামীর বাড়ি থেকে শিশু সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হন ওই গৃহবধূ।
এদিকে প্রবাসীর স্ত্রী অভিযোগ করেন, ন্যায় বিচার চেয়ে প্রথমে মির্জাপুর থানায় মামলা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন এবং এলাকার কয়েকজন মাতব্বর গ্রামে বিষয়টি মীমাংসা করার কথা বলেন। কিন্তু এতে কালক্ষেপণ হওয়ায় নিরুপায় হয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মির্জাপুর আমলী আদালতে মঞ্জুর রহমানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পর মঞ্জুর রহমান ও তার সহযোগীরা ওই গৃহবধূ ও তার পরিবারকে নানা ভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মঞ্জুর রহমান বলেন, প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কের কারণেই আপত্তিকর অবস্থায় বিবস্ত্র ভিডিও এবং ছবি তুলেছি। আমার মোবাইলে ভিডিও এবং ছবি ছিল। কিন্তু আমি ভিডিও এবং ছবি ভাইরাল করিনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য কে বা কারা আমার মোবাইল থেকে ভিডিও এবং ছবি ফেসবুক থেকে হ্যাক করে নিয়ে ভাইরাল করেছে।
এ ব্যাপারে ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। ওই ভিডিও ও ছবি তিনি দেখেছেন। গ্রাম্য সালিশের তারিখ দেওয়া হয়। তার আগেই ওই গৃহবধূ টাঙ্গাইল আদালতে মামলা দায়ের করেছে বলে তিনি শুনেছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর ওসি (তদন্ত) এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ওই প্রবাসীর স্ত্রী ও মঞ্জুর রহমানের সাথে প্রেমের সম্পর্কের কারণে আপত্তিকর অবস্থার বিবস্ত্র ছবি ভাইরাল হয়েছে। গৃহবধূ পর্নোগ্রাফী আইনে মামলা করেছেন। আদালত থেকে মামলার তদন্ত চেয়েছেন। তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি বলেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply