রাকিব হোসেন, শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধিঃ পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোতে আর অ্যাঙ্করিং (নোঙর) জনিত সমস্যার কারণে পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান ‘ওয়ান ডি’ বসানো সম্ভব হয়নি। শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা করেও ক্রেনবাহী ভাসমান জাহাজটি নোঙরে ব্যর্থ হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কম্পানি। তবে আজ রবিবার সকালে এটি আবারো বসানোর কাজ চলবে।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল একজন প্রকৌশলী দুসস কে জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্প্যান ‘ওয়ান ডি’ ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ তিয়ান ই-তে তোলা হয়। স্প্যানটি শনিবার সকালে সেতুর মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫নং পিলারের উপর বসানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। শনিবার সকালে স্প্যানবাহী জাহাজটি নিয়ে রওনা হবার প্রাক্কালে দেখা দেয় বিপত্তি। পদ্মার প্রচুর স্রোতের সাথে ভেসে আসা পলিমাটিতে ভাসমান জাহাজটির নোঙরটি আটকে যায়। তাই পূর্ব ঘোষিত সকাল সাড়ে ৯টায় জাহাজটি নিয়ে রওনা দেয়া সম্ভব হয়নি। পলি অপসারণ করে আটকে পড়া নোঙরটি তোলতে প্রায় দুপুর হয়ে যায়। পরে দুপুর ২টায় স্প্যানবাহী ভাসমান জাহাজটি কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের অতি কাছের পদ্মা সেতুর ৪ ও ৫নং পিলারের উদ্দেশ্যে রওনা। অতি স্রোতে কারণে জাহাজটি পৌঁছতে বেশ সময় লাগে। তার পর দীর্ঘ চেষ্টায়ও প্রতি সেকেন্ডে ২ দশমিক ৫ মিটার গতির স্রোতের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকটে না পেরে স্প্যানবাহী ভাসমান জাহাজটি পদ্মায় ৪ ও ৫নং পিলারের মাঝামঝি নোঙর করা সম্ভব হয়নি। বিকেল পোনে ৫টার দিকে শনিবারের জন্য কাজ স্থগিত ঘোষনা করা হয়। রবিবার সকাল হতে আবার স্প্যানটি পিলালের উপর বসানোর কাজ চলবে। স্প্যানটি এখন সেতুর ৪ ও ৫ নং পিলারের কাছাকাছি নোঙর করে রাখা হয়েছে।
পদ্মা সেতু বিভাগ সূত্র জানা যায়, সেতুতে মোট ৪২টি পিলারের উপর ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। ওয়ান ডি স্প্যানটি বসে গেলে বাকি থাকবে আরো ৯টি স্প্যান বসানোর কাজ।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, চলতি বছরের ১০ জুন পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ ৩১তম স্প্যান বসানো হয়েছিল। করোনা আর বন্যা পরিস্থিতির কবলে সেতুর অন্যান্য কাজ চললেও এরপর আর কোনো স্প্যান বসানো সম্ভব হয়নি। বন্যা পরিস্থিতি কেটে যাওয়ায় পদ্মায় পানির উচ্চতা কমতে শুরু করেছে। চীন থেকেও ফিরে এসেছে বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা। সেতুর ৩২তম স্প্যান শনিবার বসানোর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয় সেতু কর্তৃপক্ষ। শনিবার বিকেলে এটি ভাসমান জাহাজে করে পিলালের কাছে নিয়ে গেলেও সেন্টারিং করে যথাযথ স্থানে নোঙর করা সম্ভব হয়নি বলে স্প্যানটিও পিলারের উপর তোলা যায়নি। তবে রবিবার সকাল থেকে আবার এটির কাজ চলবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, পদ্মায় পানি কমেছে, তবে পদ্মা এখনও অনেক ঢেউ ও সোত রয়েছে। ওয়ান-ডি ছাড়াও স্প্যান ‘ওয়ান-এ’, ‘ওয়ান-বি’ এবং ‘ওয়ান-সি’ সম্পূর্ন প্রস্তুত রয়েছে। পরবর্তীতে আরো ৫টি স্প্যান পিয়ার ১-২, ২-৩, ৩-৪ ও ৮-৯ এবং ৯-১০ নং পিলালে এ বসানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আর ডিসেম্বরে ৩২তমসহ বাকি ১০টি স্প্যান পিয়ারের উপর বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এর পূর্বে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ৫টি স্প্যান পিলারের ওপর বসানোর লক্ষ্য ছিল। তবে মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত থাকায় একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি। ১০ জুন জাজিরা প্রান্তে ৩১তম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে বর্তমানে দৃশ্যমান ৪ হাজার ৬৫০ মিটার পদ্মা সেতুর। এরপর নদীতে পানি বাড়তে শুরু করলে গত ২৪ জুন ৩২ নম্বর স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা বাতিল করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পদ্মার পানি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ৪ দশমিক ৮ মিটারের বেশি পানি হলে কাজ করা সম্ভব হয় না, সেখানে এ বছর এখনো নদীতে পানির উচ্চতা ৫ দশমিক ৫ মিটারের বেশি। একই সঙ্গে স্রোতে গতি এখন প্রতি সেকেন্ডে ২ দশমিক ৫ মিটার। স্বাভাবিক স্রোতের গতি থাকে ১ দশমিক ৫ মিটার।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতুর অবকাঠামো। এরপর একে একে বসানো হয় ৩১টি স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ৪ হাজার ৬৫০ মিটার। ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। সব কটি পিয়ার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আব্দুল মোমেন লিমিটেড।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply