টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলে এক শালিসী বৈঠকে মাতাব্বররা পরিকল্পিতভাবে এক কাপড় ব্যবসায়ী ও ক্রেতা গৃহবধুর উপর অনৈতিক সম্পর্কের দায় চাপিয়ে ব্যবসায়ীকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ক্রেতা গৃহবধুকে তার দেনমোহরের টাকা দাবী না করার শর্তে তার কাতার প্রবাসী স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করান।
জানা যায়, কাপড় ব্যবসায়ী মো. রতন মিয়া (৩৫)। দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে থ্রি-পিসের (মেয়েদের জামা) ব্যবসা করে আসছেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে। তার শ্বশুরবাড়ি একই উপজেলার কাউলজানি ইউনিয়নের বাদিয়াজান গ্রামে।
ব্যবসায়ী ও কাস্টোমার পরিচয়ের সূত্র ধরে সম্প্রতি বৃষ্টি নামের এক গৃহবধূর কাছে এক হাজার টাকা বাকিতে এ সেট থ্রি-পিস বিক্রি করেন রতন। আর এতেই ঘটে যত বিপদ। সেই পাওনা এক হাজার টাকা চাইতে গিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানার তলে পড়েন রতন।
২০ অক্টোবর (সোমবার) বিকালে স্থানীয় মাতবরদের আয়োজনে উপজেলার বাদিয়াজান গ্রামের খালেক পীরের বাড়িতে সালিশি বৈঠকে এ জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। শুধু তাই নয়, ওই গৃহবধূর সঙ্গে রতনের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে- এমন অভিযোগ এনে স্থানীয় মাতবররা দোনমোহরের টাকা না-দাবীর শর্তে ওই গৃহবধূর স্বামীকেও তালাক দিতে বাধ্য করেন। ফলে মাতাব্বরদের কারসাজিতে সংসার ভেঙ্গে মহা বিপাকে ও গৃহবধূ।
গৃহবধূ বৃষ্টি জানিয়েছেন, তার সঙ্গে রতনের কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় মাতবর ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের যোগসাজশে স্বামীকে দিয়ে সালিশি বৈঠকে তাকে তালাক দিতে বাধ্য করেছে।
এদিকে রতনের বাবা মোশারফ জরিমানার টাকা জোগাড়ের জন্য মাতবরদের কাছে এক মাস সময় চান; কিন্তু মাতবররা তার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা রেখে বাকি টাকা দিতে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে ওই গৃহবধকে সালিশ বৈঠকে স্থানীয় কাজীর উপস্থিতিতে বিয়ের কাবিনের তিন লাখ টাকা স্বামীর কাছে দাবি করবে না মর্মে তালাকনামায় স্বাক্ষর করান।
ওই সালিশি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ফুলকি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বালিয়া গ্রামের জামাল মেস্বার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন (সারোয়ার) ও মনিরুজ্জামান মনিরসহ স্থানীয় মাতবররা।
রতন মিয়া জানান, তিনি অনলাইনে থ্রি-পিসের ব্যবসা করেন। এ কারণে বৃষ্টি নামের ওই গৃহবধূ তার কাছ থেকে সম্প্রতি একটি এক হাজার টাকা মূল্যের (বাকিতে) থ্রি-পিস ক্রয় করেন। রোববার সকালে স্থানীয় বাজারে ওই গৃহবধূর কাছে তিনি পাওনা এক হাজার টাকা চান। এ সময় তার কাছে টাকা না থাকায় সন্ধ্যায় বাসায় যেতে বলেন টাকার জন্য।
তিনি জানান, কাজ সেরে রাত ৮টার দিকে ওই গৃহবধূর বাসায় যান টাকার জন্য। টাকা নেয়ার পরপরই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির লোকজন অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে তাকে মারপিট করে। পরদিন সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে তাকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গৃহবধূ বৃষ্টি জানান, রতন মিয়ার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি থ্রি-পিসের পাওনা এক হাজার টাকা নেয়ার জন্য তার বাসায় এসেছিলেন। ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রতন মিয়াকে তার পাওনা এক হাজার টাকা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন রতন মিয়াকে ঘরের ভেতরে ধাক্কা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে চিৎকার করতে থাকে।
তিনি জানান, স্থানীয় মাতবররা এসে পরদিন সকালে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে যান। সোমবার সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে কাতার প্রবাসী তার স্বামী রফিককে তালাক দিতে বাধ্য করা হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে তালাক দেয়ার জন্যই শ্বশুরবাড়ির লোকজন অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ এনে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করে।
এ বিষয়ে বাসাইল থানার ওসি হারুনুর রশীদ জানান, এ ঘটনায় মঙ্গলবার রতনের বাবা মোশারফ হোসেন একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply