কতজন বিদেশিকর্মী নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) নিবন্ধনভুক্ত বিভিন্ন কারখানা ইউনিট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে তা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই জানাতে হবে।
এ ছাড়া বিডার কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট পরিষেবা ভোগ করতে কাজের অনুমতিপত্র বা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই কী সংখ্যক বিদেশি কাজ করছেন সেই তথ্যও দিতে হবে বলে সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিডা বলছে, অনুমতিপত্র ছাড়া কাজ করছেন এমন বিদেশিকর্মীদের ক্ষেত্রে তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেই তথ্যও দিতে হবে।
পরিষেবার মধ্যে রয়েছে ভিসার সুপারিশ, কাজের অনুমতিপত্র, কাজের অনুমতিপত্রের সময় বাড়ানো এবং কাজের অনুমতিপত্র বাতিল, লিয়াজোঁ অফিস কিংবা শাখার অনুমোদন ও প্রত্যাবাসন।
প্রতিটি শিল্প কারখানার শাখা, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি কোম্পানির শাখাকে প্রয়োজনীয় প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিবরণও দাখিল করতে হবে যে সেখানে কাজের অনুমতিপত্র ছাড়া কোনো বিদেশিকর্মী নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া শিল্প কারখানার বিভিন্ন ইউনিট ও অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেয়া বিডার পক্ষে সম্ভব নয়।
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
বিদেশিকর্মীদের তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই একটি কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে বলে বিডির বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সোমবার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে কাজ করা বিদেশিকর্মীদের সংখ্যা নিয়ে একটি বিভ্রান্তি রয়েছে। বিদেশিকর্মীদের একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে চাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
বিদেশিদের বিডার শিল্প ও বাণিজ্যিক দুটি শাখা কাজের অনুমতিপত্র দিয়ে থাকে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে বর্তমানে দেশে বৈধ বিদেশিকর্মীদের সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব হচ্ছে না।
কিন্তু বিডা কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থাটিতে নিবন্ধনভুক্ত বিদেশিকর্মীর সংখ্যা ২০ হাজার।
গত বছরের মার্চ পর্যন্ত আগের পাঁচ বছরে সাত হাজার ৬৪২ বিদেশিকে শিল্পকারখানায় কাজের অনুমতিপত্র দেয়া হয়েছে। এই সময়ে ১১ হাজার ৫৯ জনের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ অবশ্য সাড়ে পাঁচ হাজার নতুন বাণিজ্যিক কাজের অনুমতিপত্র দিয়েছে। এ ছাড়া ছয় হাজার ৩০০ অনুমতিপত্র নবায়ন করেছে।
বিডার তথ্যানুসারে বিদেশিকর্মীদের কাজের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। যদি কোনো কোম্পানি বিদেশিকর্মীদের কাজের অনুমতিপত্রের তথ্য গোপন করে তাদের আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশে কাজ করা বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে যদিও কোনো পরিসংখ্যান নেই, তবু গবেষক ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) দাবি করছে, কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করছেন। এতে ব্যাপকসংখ্যক বিদেশি মুদ্রা অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।
বেসরকারি খাতের লোকজন স্বীকার করছেন যে পোশাক, বস্ত্র, বায়িং হাউস, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, পোলট্রি, পোলট্রি খাবার সংশ্লিষ্ট খাতে বিপুলসংখ্যক বিদেশি পেশাজীবী কর্মরত রয়েছেন। আর এসব লোকের কোনো কাজের অনুমতিপত্র নেই।
দেশের বিভিন্ন খাতে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি কাজ করছেন বলে সংসদকে গত ফেব্রুয়ারিতে জানানো হয়েছিল।
দ্য সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর বাংলাদেশে অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি ‘বাংলাদেশের আরএমজি খাতে বিদেশি নিয়োগ এবং তাদের বিকল্প’ শিরোনামে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সহায়তা এই গবেষণাটি হয়েছে।
পোশাক খাতে বিদেশিদের নিয়োগের কারণ ও তাদের কাজের ক্ষেত্র নিয়ে এই গবেষণাটি হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর ফল ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু গবেষণা প্রস্তাব অনুসারে, পাঁচ লাখের কাছাকাছি বিদেশি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন।
তাদের মধ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও এনজিও বিষয় ব্যুরোর কাছে এক লাখের নিবন্ধন রয়েছে।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বরে তখনকার অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত বলেছেন, ক্রমবর্ধমান বস্ত্র ও চামড়া শিল্পে মাঝারি-পর্যায়ের পরিচালনা বিশেষজ্ঞ বাড়াতে চাচ্ছে সরকার। এতে বিদেশি কর্মীদের অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। মুহিত বলেন, আর অর্থের পরিমাণ বছরে পাঁচশ কোটি ডলার হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply