আনোয়ার হোসেন তরফদার ভালুকা ময়মনসিংহঃ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় মো. সালেহ ইমরান (৩২) নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতের কব্জি কেটে ফেলবে বলে অভিযোগ উঠেছে ইউপি নারী সদস্যে মোছা. হাজেরা খাতুন পারুলের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) পুলিশের কর্মকর্তা মো. সালেহ ইমরান নিজে বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন।
অভিযুক্ত মোছা. হাজেরা খাতুন পারুল। তিনি বর্তমান ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
ওই কর্মকর্তার বাড়ি ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাদিগড় পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত আ. খালেকের ছেলে। সে বর্তমান পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পিবিআই ঢাকা জেলায় কর্মরত।
থানায় লিখিত সাধারণ ডায়েরি বিবরণে জানা যায়, উপজেলার কাচিনা ইউনিয়ন সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোছা. হাজেরা খাতুন পারুল। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ১০-১৫ জন লোক সালেহ ইমরানের গ্রামের অসহায় দরিদ্র কৃষকের ৯ একর জমি ১৬ বছর আগে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে জাল-জালিয়াতির করে দলিল করার মাধ্যমে ঢাকা দিলকুশা শাখা অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৭ কোটি টাকার লোন অনুমোদন করে নেয়। পরে ওই জাল-জালিয়াতি বিষয়টি নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ সালেহ ইমরানের স্মরনাপন্ন হয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা জায়গা থেকে মিডিয়া এবং প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে তাদের সহযোগিতায় ওই লোনটি অনুমোদন হওয়ার পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা স্থগিত করে দেন।
পরবর্তীতে ওই জাল-জালিয়াতি এবং দুর্নীতি নিয়ে কাদিগড় গ্রামের মো. সমর আলী এবং হাবিজুল ইসলাম বাদী হয়ে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন। ওই দুটি মামলায় নম্বর যথাক্রমে ভালুকা সিআর ৪২০/২০১৯ এবং ৫৩০/২০১৯। মামলা দুটি পিবিআই তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে মোছা. হাজেরা খাতুন পারুলসহ ১০ জনের নামে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে।
ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মোছা. হাজেরা খাতুন পারুলসহ আসামিদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির খবরটি দেশের গণমাধ্যম স্থানীয়সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গুরুত্বের সাথে প্রচার করে। লোন বাতিল, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং এসব খবর পত্রিকায় আসায়। এরই জের ধরে সাব-ইন্সপেক্টর মো. সালেহ ইমরানের প্রতি মারাত্মকভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ইউপি নারী সদস্য মোছা. হাজেরা খাতুন পারুল।
এরপর চলতি মাসের শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে কাচিনা বাজারে কবিরের চায়ের দোকানে কাচিনা ইউনিয়ন পরিষদের কাদিগড় গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবু বক্কর সিদ্দিক, কাদিগর গ্রামের মোজাম্মেল ও হানিফসহ আনুমানিক ১৫ জন মানুষের সামনে প্রকাশ্যে সাব-ইন্সপেক্টর মো. সালেহ ইমরানের হাতের কব্জি কেটে ফেলার হুমকি দেয় সংরক্ষিত ইউপি মহিলা সদস্য মোছা. হাজেরা খাতুন পারুল। তিনি উপস্থিত মানুষের সামনে এও বলেন, ডরাইলেই ডরে খায় ঠেইল্লা দিলে কিছুই না। এই কথা বলে তিনি ওই এসআইকে সুযোগ পাইলে দেখে নিবেন। এ ঘটনায় মো. সালেহ ইমরান নিজে বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় ইউপি নারী সদস্য মোছা. হাজেরা খাতুন পারুলের নাম উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
পুলিশ কর্মকর্তার হাতের কব্জি কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়ন সংরক্ষিত মহিলা ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোছা. হাজেরা খাতুন পারুল মুঠোফোনে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, কবিরকে জিজ্ঞাস করবেন আমি কি করছি কি বলছি।
এ ঘটনার বিষয়টি জানতে চাইলে ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়ন পরিষদের কাদিগড় গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক মুঠোফোনে বলেন, জাতীয় পত্রিকায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি নামে খবর প্রকাশ হয়। ওই খবরটি ওরা শেয়ার করেন। এর ফলে কাচিনা বাজারে কবিরের চায়ের দোকানে ইউপি নারী সদস্য বলে, যারা লেখালেখি করেছে এবং সালেহ ইমরান ও রহিজ খানের হাতের কব্জি কেটে ফেলবে বলে তিনি জানান।
ভুক্তভোগী সাব-ইন্সপেক্টর মো. সালেহ ইমরান বলেন, বর্তমান আমি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পিবিআই ঢাকা জেলায় কর্মরত। একজন জনপ্রতিনিধি যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন। সেখানে তিনি তা না করে বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য প্রকাশ্যে যেভাবে আমাকে হুমকি দিয়েছেন। তাতে তিনি সহযোগী আসামীদের যোগসাজশে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের যে কোন বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেন বলে আমি আশংকা প্রকাশ করছি।
এ বিষয়ে ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply