মনিরুল ইসলাম কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
২ জানুয়ারি কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে যোগদান করেন ফারুক আহমেদ। আগে তিনি মৌলভীবাজার জেলায় কর্মরত ছিলেন। কুমিল্লায় সেদিন সকালে যোগদান করে বিকেলেই মুখোমুখি হন জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে। তখন কুমিল্লার প্রধান সমস্যার কথা জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীরা এসপি ফারুককে জানান- করোনাকালে কুমিল্লায় মাদকের বিস্তার বেড়েছে ব্যাপক হারে। এরপর এসপি মাদকের সঙ্গে জড়িতদের উদ্দেশ্যে বলেন- ‘হয় মাদক ছাড়, না হয় কুমিল্লা ছাড়’। এ সময় তিনি একটি স্লোগান বলেন- ‘একটি গ্রাম থেকে একটি দেশ, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ’।
ইতোমধ্যে কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনের এক মাস পূর্ণ হয়েছে এসপি ফারুকের। এরই মধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হয়ে উঠেছেন তিনি। তার যোগদানের পরে জেলার ১৮টি থানা ও ডিবি পুলিশের সদস্যরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে। প্রায় প্রতিদিনই প্রতিটি থানাতে কোন না কোন মাদকে জড়িতরা ধরা পড়ছেন। গত ২ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাদকে জড়িত থাকায় ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২২৭ জনকে। এ সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৪২৪ কেজি ৬৮০ গ্রাম গাঁজা, উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু গাঁজা গাছও। এছাড়া ইয়াবা ১১ হাজার ১৩ পিস, ফ্রেন্সিডিল ২ হাজার ৭২৮ বোতল, দেশীয় মদ ৩১৭ লিটার, বিদেশি মদ, বিয়ার ও নেশাজাতীয় সিরাফ প্রায় ৫০০ বোতল। মাদকদ্রব্য ছাড়াও অন্যান্য অপরাধ দমনেও ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন অভিযান, মাদক উদ্ধার, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ বিভিন্ন তথ্য জেলা পুলিশের নিজস্ব ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে নিয়মিত জানিয়ে দিচ্ছেন জেলার মানুষকে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এরই মধ্যে এসপি ফারুক প্রশংসাও কুড়িয়ে নিচ্ছেন সারাধণ মানুষের কাছ থেকে।
প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, মাদকের সঙ্গে জড়িতদের ঠাঁই কুমিল্লায় হতে পারে না। আমাদের প্রতিটি ইউনিটকে মাদকের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলাজুড়ে মাদক-বিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। আমরা মানুষের শান্তি ও সেবার জন্য কাজ করি। এজন্য সব কাজেই জবাবদিহিতা থাকা জরুরি। তাই এক্ষেত্রেও একটি স্লোগান ঠিক করেছি, ‘মাদক উদ্ধারে জবাবদিহিতা, আনবে নতুন দিনের বার্তা’।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লাবাসীর জন্য আমাদের প্রতিদিনের নিরন্তর প্রচেষ্টা ও অর্জনগুলো প্রতিদিনই তাদের কাছে প্রকাশ করা হচ্ছে। এছাড়া কোন পুলিশ সদস্য যদি অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করে বা মাদকসহ অনৈতিক কাজে জড়িত থাকে, তাহলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে শতভাগ মানবিক হতে হবে। পুলিশের কোন সদস্য অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে, জেলার ১৮টি থানা এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় বিভিন্ন মামলায় আরও ৯৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের সদস্যরা। এদের মধ্যে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ৪২ জন। অনেকে রয়েছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এছাড়া অন্যান্য নিয়মিত মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা হলে সমাজে অপরাধ অনেকাংশে কমে যায়। তাই প্রতিটি থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সকল আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply