আনোয়ার হোসেনঃ
বেনাপোল দেশের সবচেয়ে বড় স্থল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বেশি হয়। আর রফতানি হয় আমদানির চারভাগের একভাগ। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত পাঁচ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন পণ্য। এ সময় বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ টন।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৮ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এ সময় ভারতে রফতানি হয় চার লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৯ টন পণ্য।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি হয় ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ টন; রফতানি হয় তিন লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ টন পণ্য।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ১৯ হয় লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৯ টন; রফতানি হয় তিন লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩ টন পণ্য।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয় ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ টন; রফতানি হয় লাখ এক হাজার ১১৭ টন পণ্য।
২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি হয় ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন; রফতানি হয় তিন লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ টন।
২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর- ছয় মাসে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ পাঁচ হাজার ১১৩ টন। এ সময় রফতানি হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ২৯৫ টন পণ্য।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, মেশিনারি যন্ত্রাংশ, সুতা ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য, মাছ, মেলামাইন, তৈরি পোশাক ও টিস্যু উল্লেখ্যযোগ্য।
বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে প্রথম থেকে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে এ বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের আরো বেশি পণ্য আমদানির ইচ্ছে থাকলেও বন্দরের অবকাঠামোগত নানান সমস্যায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে না। লোকসানের মুখে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়ে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে। এতে প্রভাব পড়ছে আমদানির ওপর। তবে রফতানি বাড়ছে এ বন্দরটি দিয়ে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হলে আমদানির পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যও আরো বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীর ।
বর্তমানে বেনাপোল বন্দরের স্থল ও রেলপথে ভারতের সঙ্গে বহু ধরনের পণ্যের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চলছে। প্রতি বছর এ পথে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও আট হাজার কোটি টাকা পণ্য সেদেশে রফতানি হয়ে থাকে। আমদানি করা পণ্য থেকে সরকারের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। তবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছয় হাজার ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি আছে এক হাজার ১০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানিকারকরা জানান, বন্দরে আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় ব্যবসায়ীদের দাবি রয়েছে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। বন্দর অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে পণ্য রাখতে হচ্ছে পণ্য। এতে রোদ-বৃষ্টিতে পণ্যের যেমন গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে তেমনি চুরির আশঙ্কা থাকে। রয়েছে ক্রেন ও ফর্কলিফটের সংকট।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, কেবল অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে এ পথে বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে না। আজও বাস্তবায়ন হয়নি ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) চার দেশীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বছরে দশ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ তেমন কঠিন কিছু না।
ইন্দো-বাংলা চেম্বার অফ কমার্স সাব কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান বলছেন, দেশের স্থলপথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন অবহেলায় এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকসানের শিকার হচ্ছেন তেমনি সরকারও হারাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব। বন্দরকে নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীন থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হলে দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব বলে অভিমত দেন তিনি।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে। ইতিমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছি। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে যাবে। সেই সাথে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আহরণ।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকটি আধুনিক পণ্যাগার নির্মাণ হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য বাজেট হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি করা পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরের চারপাশ দিয়ে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ এবং আরো জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা বন্দরের রয়েছে। এসব বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্য প্রসারে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply