টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ও গুদাম কর্মকর্তার দিনভর নাটক শেষে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর খাদ্য গুদাম থেকে পাচার হওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৬৪০ বস্তা চালের মধ্যে ২৮০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) মধ্যরাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহানের উপস্থিতিতে এ চাল জব্দ করা হয়। তবে এখনও উদ্ধার হয়নি পাচার হওয়া ৩৬০ বস্তা চাল। এ ঘটনায় রাতেই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন ও নৈশপ্রহরী আল-আমিনকে আটক করে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভুঞাপুর খাদ্য গুদাম থেকে দুপুরের দিকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ১০ টাকা কেজি দরের চাল ট্রাকযোগে পাচার হচ্ছিল। বিষয়টি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মী আল আমিন শোভন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহানকে জানান। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পাচার হতে যাওয়া চাল বোঝাই একটি ট্রাক দেখতে পান।
পরে তিনি বিষয়টি গুদাম কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেনের কাছে জানতে চান। গুদাম কর্মকর্তা কোন ধরনের সঠিক উত্তর না দিয়ে নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করেন। এমনকি সিসিটিভির পাসওয়ার্ডও তার কাছে নেই বলে জানান। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা। এভাবে চলতে থাকে নানা ধরনের নাটক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বিষয়টি ওসি মোহাম্মদ আবদুল ওহাবকে জানালে ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে আসেন এসআই টিটু চৌধুরী।
এর ফাঁকে চাল পাচারের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গাবসারা ইউনিয়নের দুজন ডিলারকে ডেকে এনে গোপনে স্বাক্ষর করিয়ে নেন গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। খোলা হয় ট্রাকের ছাউনি। একে একে বের হয়ে আসে ৫০ কেজির ২৮০টি চালের বস্তা। পরে সে চাল জব্দ করে ট্রাকসহ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখনও গোপন করেন ৩৬০ বস্তা চাল পাচারের বিষয়টি। কিন্তু তা আর বেশি সময় গোপন থাকে না। আসল তথ্য বেরিয়ে আসে গুদামের নৈশপ্রহরী আল-অমিনের কাছ থেকে।
আল-আমিন জানায়, স্যারের (গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন) নির্দেশে প্রথম ট্রাকে ৩৬০ বস্তা ও পরের ট্রাকে ২৮০ বস্তা চাল লোড করা হয়েছে লেবার দিয়ে। ৩৬০ বস্তা নিয়ে ট্রাকটি ঘাটাইলের হামিদপুরে চলে যায়। পরের ট্রাকটি আটকা পড়ে। সর্বমোট ৩৬০ বস্তা চাল লোড করা হয়।
ওসি এসএসডি বেলাল হোসেন বলেন, ২৮০ বস্তা চাল গাবসারা ইউনিয়নের ডিলার দিলীপ, ফরহাদ, নজরুল ও অর্জুনা ইউনিয়নের ডিলার সাখাওয়াত হোসেন লেবুর। বাকি ৩৬০ বস্তা চাল সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে জানান।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা জানান, চালগুলো সোমবার খুলনা থেকে এসেছে। ওসি এলএসডিই চালগুলো রিসিভ করেছেন। এসব চাল গোডাউনে থাকার কথা। কিভাবে ট্রাকে করে পাচার হচ্ছে তা তিনি জানেন না।
এদিকে এ ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা বাদী হয়ে গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন ও নৈশপ্রহরী আল-আমিনের বিরুদ্ধে ভূঞাপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ রাতেই তাদের আটক করেছে।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহার অভিযোগের ভিত্তিতে গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন ও নৈশপ্রহরী আল-আমিনকে আটক করা হয়েছে। তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে অভিযুক্তরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় মামলাটি দুদকে রেফার্ড করা হবে। এ বিষয়ে দুদক টাঙ্গাইল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুদকই এর তদন্ত করবে।
একই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, ট্রাকসহ ২৮০ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply