টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলে কামরুন নাহার রিনি নামের এক প্রসূতির পেটে গজ রেখে রাখার দায়ে হাসপাতালের পাঁচ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ মে) দুপুরে ওই প্রসূতির বাবা এসএম মাহবুব হোসাইন বাদী হয়ে টাঙ্গাইল চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পাঁচ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
পরে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ তদন্ত ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আগামী ১২ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।
মামলা ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ জানুয়ারি কামরুন নাহার রিনিকে প্রস্রব বেদনায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নিসফুন নাহার কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষা দেয়। পরে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে তাকে দ্রুত সিজারের জন্য অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এরপর ডা. নিসফুন নাহারের তত্ত্বাবধানে ডা. অপু সাহা (প্রধান সার্জন), ডা. আবিদা সুলতানা এবং অজ্ঞানের (অ্যানেস্থেসিয়া) ডা. ফজলুল হক ও সহকারী ডা. জাকির (ইন্টার্নি) অপারেশন করেন।
প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকরা তাড়াহুড়ো করে রোগীর পেটের ভেতর সার্জিক্যাল গজ রেখে সেলাই করে দেয়। এতে অপারেশন করার পর থেকে রোগীর পেটব্যথা না কমায় রোগীকে ২৭ ফেব্রুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে নানা পরীক্ষার পর রোগীর পেটে গজের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পরে সেখানে অপারেশন করে পেট থেকে গজ বের করা হয়। দীর্ঘদিন গজ পেটের ভেতর থাকায় সেখানে নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় রোগী অনেকটা সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
মামলার বাদী এসএম মাহবুব হোসাইন বলেন, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তাররা মেয়ের পেটে গজ রেখে সেলাই করে দেয়। পরে পেটের ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকায় নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা করে পেটের ভেতর গজ পাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। আমার মেয়ের পেট থেকে গজসহ পেটের কিছু নার্ভ কেটে ফেলতে হয়েছে। ডাক্তারদের ভুলের কারণে আমার মেয়েকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমার মেয়ে এখনও সুস্থ হয়নি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ডাক্তারদের বিচার দাবি করছি।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, ঘটনার পর গত ১৩ মার্চ হাসপাতালে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রোগীর ঢাকা হাসপাতালের ছাড়পত্র গত তিন আগে আমরা হাতে পাওয়ায় তদন্ত রিপোর্ট দিতে সময় লেগেছে। গতকাল বুধবার তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। তদন্তে অভিযোগে সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, এ ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত, অনাকাঙ্খিত। এর আগে জেনারেল হাসপাতালে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি একটি দুর্ঘটনা মাত্র। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা সুপারিশ করব।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply