এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বাতাসে দুলছে সোনালি ধানের শীষ। যেদিকে চোখ যায় শুধু ধান আর ধান। প্রায় প্রতিটি উপজেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে পুরোদমে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে নারী-পুরুষ, জোয়ান- বুড়ো সবাই ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। সারা বছরের খোরাক তাদের স্বপ্নের এই ফসল।
তাই কৃষকেরা যত দ্রুত সম্ভব সে ফসল যেন ঘরে তুলতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে কোনো সময় কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি এসে ক্ষেতের ফসল তছনছ করে দিতে পারে।
এছাড়াও কৃষকের মনে আরও বড় দুশ্চিন্তা হল সারা দেশে করোনা মহামারি রোধে কঠোর লকডাউন চলছে। এতে করে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে ধান মাঠেই নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকদের।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকের ধান কেটে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীদের।
বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধান কেটে আঁটি বেঁধে রেখেছেন ক্ষেতের মাঝেই। পড়ন্ত বিকালে সেই আঁটি মাথায় কিংবা গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছেন কৃষকরা। বাড়িতে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও একই কাজে ব্যস্ত।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় ১৭১২২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৪২৩৬ হেঃ, বাসাইল ১১১২৫ হেঃ, কালিহাতী ১৮২৬০ হেঃ, ঘাটাইল ২৩৯৯৬ হেঃ, নাগরপুর ১৬১৫০ হেঃ, মির্জাপুর ২১০৬৫ হেঃ, মধুপুর ১২৭৯১ হেঃ, ভূয়াপুর ৭০৯৮ হেঃ, গোপালপুর ১৩৭৫০ হেঃ, সখিপুর ১৫৯২৫ হেঃ, দেলদুয়ার ৯৬৩০ হেঃ, ধনবাড়ী ১০২০০ হেঃ জমিতে চাষ করা হয়েছে বোরো ধান। জেলায় সরকারি ভর্তুকিতে ধানের মাঠে ১৪৩টি হারভেষ্টার মেশিন (ধান কাটা মেশিন) দিয়ে ধান কাটছে কৃষক।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামীলীগের সহযোগী অঙ্গসংগঠন কেন্দ্রীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ দরিদ্র কৃষকের ধান কাটা কর্মসূচি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে টাঙ্গাইল জেলার নেতাকর্মীরা দরিদ্র কৃষকের পাকা বোরো ধান কেটে দিচ্ছে।
মির্জাপুর পৌর এলাকার বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আলাল উদ্দিন জানান, তার নিচু জমিতে আগাম চাষ করা ধানকাটা নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছেন। যে কোনো সময় বড় ধরনের ঝড়বৃষ্টি হলে ধান পানির নিচে তলিয়ে যাবে। করোনার কারণে শ্রমিক আসতে না পারায় ধানকাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কালিহাতী উপজেলার বীরবাসিন্দা ইউনিয়নের কস্তুরী পাড়া গ্রামে কৃষক আবুল হোসেন বললেন, আমি একশো শতাংশ জমিতে ২৮ ও ২৯ ধান চাষ আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছি। সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া থেকে ধান কাটার শ্রমিক এসেছে। প্রতিদিন ৫৫০ টাকা করে দিতে হবে শ্রমিকের মজুরী।
ঘাটাইলের ধান মাড়াই মেশিনের মালিক দেওপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিন জানান, কৃষকের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে ধান মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করে দিয়ে আসে। তবে ঝড় বৃষ্টির হলে বাড়ী বাড়ী তার ধান মাড়াই মেশিন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে দ্রুত সময়ে মধ্যে ধান ঘরে তুলছে পারবে এলাকার কৃষক।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply