নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আনোয়ার হোসেন যশোর থেকে।
চাউল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যশোরের সাধারণ মানুষ।চাউল ব্যবসায়ী তারা ইচ্ছামত মিথ্যা কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক বেশি টাকা আদায় করছে। প্রশাসন ও বাজার মনিটরিং কমিটির পদক্ষেপ না থাকায় ব্যবসায়ীরা অবাধে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সাধারণ ক্রেতারা অভিযোগে জানিয়েছেন।
এ মৌসুমে দেশে পর্যাপ্ত বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে ও এ চাউল বাজারে উঠেছে। কিন্তু যশোর সদর শহরের বড় বাজারের হাটচান্নিতে চালের দাম কমেনি। আগের দামেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চাউল বিক্রি করছেন। অথচ গ্রামের হাট বাজারে অনেকটা কম দামেই চাউল বিক্রি হচ্ছে।সদর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নতুন হাট ঝিকর গাছা বাজারে এর প্রমাণ মিলেছে। শহর থেকে এখানে বিভিন্ন প্রকারের চাউল কেজি প্রতি পাঁচ থেকে সাত টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের বড়বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাউল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। এসব মালামালের দাম শুনেই মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। কোনো দোকানে গেলে মানুষ একটু কম দামে মালামাল কিনতে পারবেন সেটা নিয়েই ছুটাছুটি করছেন মানুষ।
যশোর বড়বাজারের হাটচান্নির খাদ্য চাউল ভান্ডারে গিয়ে দেখা যায়, গরীব মানুষের জীবন বাঁচানোর মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা। যা গত চার মাস একইদামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, উচ্চবিত্ত মানুষের খাবারের চাল বাসমতি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। মিনিকেট চালের প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। কাজললতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি ও বি-আর-২৮ মানের চালের প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।
সাধারণ মানুষ দোকানে গিয়ে ব্যবসায়ীর হাঁকা দরেই চাল কিনে বাড়ি ফিরছেন। অথচ দেশে এ মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে রোবো ধান উৎপাদন হয়েছে। যে চাল বর্তমানে বাজারে উঠেছে। তারপরও শহরের মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করেই চালের দাম কমাচ্ছেন না। সাধারণ ক্রেতারা চালের দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ দাম কমতে পারে। কিন্তু তাদের সেই আগামী সপ্তাহ আর আসছে না। তারা ক্রেতাদের এক রকম জিম্মি করেই চাউল বিক্রির নামে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যা প্রতারণার শামিল বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন।
নতুন চাউল ওঠার পর গত পনেরো দিন গ্রামাঞ্চলের হাট বাজারে কম দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। যা বড় বাজারের হাটচান্নির চাল বাজার থেকে কেজি প্রতি পাঁচ থেকে সাত টাকা কম। এ কারণে সাধারণ মানুষের কাছে বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ীদের প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়েছে। শহরে ব্যবসায়ীদের ওপর প্রশাসনিক নজরদারি ও বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ।
গতবৃহস্পতিবার যশোর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের ঝিকোরগাছা বাজারে গিয়ে ধরা পড়ে ভিন্ন চিত্র। সেখানে শহর থেকে কমদামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। সেখানকার চাল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বাজারে মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা, মিনিকেট চালের প্রতিকেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, বাসমতি চালের প্রতি কেজি ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা, কাজললতা চালের প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, বি-আর-২৮ চালের প্রতি কেজি ৪১ থেকে ৪৩ টাকা। এ হিসেবে দেখা যায়, শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটারের ব্যবধানে চালের মূল্য প্রতি কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা কম। চালের দামের এ ব্যবধানের কথা নতুন হাটের চাল ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানান, নতুন ধান ওঠার পর যশোরের গোটা বাজারে চালের দাম কমেছে। কোন ব্যবসায়ী যদি অতিরিক্ত মুনাফার আশায় দাম না কমায় তাহলে সেটা অন্যায় হবে। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের এ জাতীয় মানষিকতা পরিহার করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে ঝিকরগাছা শেখ শেলিম হোসেন বলেন, এ বাজারে ক্রেতা ও ব্যবসায়ী সবাই এ এলাকায়। গরিব দুখি। প্রতিবেশি ঠকানোর মতো ব্যবসা তারা করেন না। তারা পার্শ্ববর্তী রাইসমিল থেকে চাল কিনে সামান্য লাভেই বিক্রি করেন। এসব কারণে তাদের ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর মাঝে কোনো বিতর্ক নেই।
এসব ব্যাপারে যশোরের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ও আড়্যদার রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ বলেন, বর্তমানে সরকারিভাবে দেশজুড়ে ধান কেনা হচ্ছে। যশোর জেলাও এর বাইরে নয়। এ কারণে সাধারণ বাজারে নতুন চাউলের প্রভাব পড়েনি। তবে আগামী মাস নাগাদ চালের দাম কমতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
যশোর বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, আগের তুলনায় বর্তমানে বাজারে চালের দাম অনেকটা কমেছে। নতুন ধান ওঠার পর বৃষ্টিতে চাতালের চাউল ওঠা খানিকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে আগামীতে এ দাম আরও কমবে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোরের বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করা হয়ে থাকে। এসব বৈঠকে অযৌক্তিকভাবে মুনাফা আদায় না করার জন্য ব্যবসায়ীদের আহবান জানান। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা বলে তিনি জানান।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply