হজরত মোহাম্মদ (সঃ) এর পবিত্র জন্ম দিন, বিদায় হজ্ব এর ভাষণ এবং ওফাত দিবস প্রসঙ্গে সঠিক তথ্যবহুল পর্যালোচনা।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব নূর এ মোহাম্মদ, জগতের সকল নবী রাসূলদের নেতা, জগৎবাসীর রহমত, হজরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জগতে আবির্ভাবের দিনটি ছিলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ রহমত ও বরকতের সময়।
দিনটি ছিলো হিজরী সাল পূর্ব ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার। হিজরী সাল গণনার পেছনের দিকে গেলে দিনটি পরবে ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার। এবং ওফাতের দিনটি ছিলো ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুন সোমবার। হিজরী সাল অনুযায়ী দিনটি ছিলো ১১ হিজরী সালের ১ রবিউল আউয়াল সোমবার। আসর নামাজের সময়ের পরে এবং মাগরিব নামাজের সময়ের আগে।
হজরত মোহাম্মদ (সঃ) যখন ৭০জন সাহাবী নিয়ে আরবের মক্কা থেকে মদিনায় যে দিনটিতে হিজরত করেন, হজরত আলী (রাঃ) এর প্রস্তাবনায় সেইদিন থেকে হিজরী বর্ষের সূচনা হয়। অর্থাৎ ১মহরম ১হিজরী মোতাবেক ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৯ এপ্রিল সোমবার থেকে সর্ব প্রথম হিজরী বর্ষের সূচনা হয়।
হজরত মোহাম্মদ (সঃ) হিজরী ১০ সালের ৯ জিলহজ পবিত্র হজ্ব পালন করেছিলেন এবং আরাফার ময়দানে তিনি বিদায় হজ্বের ভাষণ দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক পর্যালোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট সত্য প্রমাণিত যে, হজরত মোহাম্মদ (সঃ) ৯ জিল হজ্বের পরে এই জগতে ৮০ দিন অতিবাহিত করেছিলেন। সেই হিসাব অনুযায়ী হিজরী ক্যালেন্ডার মোতাবেক ১১ হিজরী সালের ১ রবিউল আউয়াল, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুন ৬২ বছর বয়সে ওফাতলাভ করেন।
হিজরী ১২ মাসের নাম অর্থ এবং নামের কারণ।
১. মুহররম অর্থ নিষিদ্ধ (২৯ দিনে মাস)
এই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ (হারাম) বিধায় এটি পবিত্র মাস বলে বিবেচিত। এ মাসের ১০ম দিনে আশুরা পালিত হয়।
২. সফর অর্থ রিক্ত, শূন্য, ভ্রমণ (৩০ দিনে মাস)
এ মাসের এরূপ নামকরণের কারণ সম্ভবত এটি যে, প্রাক-ইসলামিক যুগে আরবীয় ঘর-বাড়ি এই সময়ে শূন্য থাকতো যখন গৃহস্থরা খাবার সংগ্রহ করতো। অন্যমতে, তারা তাদের শত্রুদের যুদ্ধে পরাজিত করে সবকিছু লুট করে নিয়ে যেত বলে এ মাসের নাম সফর। সফর শব্দের আরেকটি অর্থ হল ভ্রমণ। এ মর্মে
সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত হলো,তৎকালীন আরবরা এ মাসে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বেশি ভ্রমণ করত বলে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে সফর।
৩. রবিউল আউয়াল অর্থ প্রথম বসন্ত (২৯ দিনে মাস)
অন্য অর্থ চারণ, কেননা এই সময়ে গবাদি পশু চারণ করা হতো। মাসটি মুসলমানদের জন্য পবিত্র একটি মাস বলে বিবেচিত কারণ মুহাম্মাদ এই মাসে জন্মগ্রহণ করেন।
৪. রবিউস সানি অর্থ দ্বিতীয় বসন্ত (৩০ দিনে মাস)
৫. জমাদিউল আউয়াল অর্থ প্রথম শুকনো ভূমিখণ্ড (২৯ দিনে মাস) প্রাক-ইসলামিক গ্রীষ্মকাল হিসেবে বিবেচিত।
৬. জমাদিউস সানি দ্বিতীয় শুকনো ভূমিখণ্ড (৩০ দিনে মাস)
৭. রজব অর্থ শ্রদ্ধা, সম্মান (২৯ দিনে মাস)
এটি আরবি বছরের দ্বিতীয় মাস যখন যুদ্ধ নিষিদ্ধ। ‘রজব’ শব্দের অন্য অর্থ ‘সরিয়ে নেওয়া’। কেননা প্রাক-ইসলামিক যুগে আরবরা এ মাসে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার জন্য বর্শার মাথা সরিয়ে রাখতো।
৮. শা’বান অর্থ বিক্ষিপ্ত (৩০ দিনে মাস)
এর নামকরণের সম্ভাব্য কারণ এ মাসের পানির অভাব। তৎকালীন আরবেরা এ মাসে পানির সন্ধানে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো। তাই এর নাম ‘শাবান’। এর অন্য অর্থ দুইয়ের মাঝামাঝি, কেননা এটি রজব এবং রমজান মাসের মাঝখানে।
৯. রমজান অর্থ দহন (২৯ দিনে মাস)
দহন বলতে উপবাস বা রোজাকে বোঝানো হয়েছে, কেননা উপবাস বা রোজার মাধ্যমে ব্যক্তির পার্থিব লালসা দগ্ধ হয়। রমজান মুসলমানদের অন্যতম পবিত্র মাস। মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী এ মাসে পবিত্র কুরআন নাজিলের সূচনা হয়। এ মাসে মুসলমানদেরকে সুবহে সাদিক(শেষরাত) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাধ্যতামূলক রোজা রাখতে হয়।
১০. শাওয়াল অর্থ উত্থিত (৩০ দিনে মাস)
এ নামের কারণ এই সময়ে স্ত্রী-উট বাচ্চা প্রসব করে এবং লেজ উত্থিত করে।
১১. জ্বিলকদ সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাস (২৯ দিনে মাস)
এ মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ, তবে আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষা বৈধ।
১২. জ্বিলহজ্জ হজ্জের মাস (৩০ দিনে মাস)
এই মাসে মুসলমানরা মক্কায় কাবার উদ্দেশ্যে হজ্জ করতে যায়। এ মাসের ৮, ৯ ও ১০ তারিখে হজ্জ হয়। ঈদুল আযহা এই মাসের ১০ তারিখে শুরু হয় এবং ১২ তারিখ সূর্যাস্তের সাথে সাথে শেষ হয়। এই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply