মুবিনুল হুদা চৌধুরী সোহাইল। কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধ। কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রে অভিযান পরিচালনা করে ট্রলারসহ আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের ছয়জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫
র্যাব-১৫ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, কক্সবাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারকারীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প হতে প্রলোভন এবং প্ররোচনার মাধ্যমে চাকুরী দেওয়ার নাম করে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে পাচার করে আসছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে মানব পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার নিমিত্তে বিভিন্ন এলাকায় র্যাব এর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল জানতে পারে যে, কতিপয় মানবপাচারকারী কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন নাজিরারটেক এলাকায় ট্রলারে অবস্থা করছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল ১৬/০৪/২০২২ তারিখ আনুমানিক রাত ২.৪৫ ঘটিকায় নাজিরারটেক এলাকাধীন গভীর সমুদ্রে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে একটি মাছ ধরার ট্রলার আটকসহ মানবপাচারের সাথে সম্পৃক্ত ১। শাহ জাহান (৩৭), পিতা-গোলাম কুদ্দুস, মাতা-জান্নাত বেগম, সাং-সিপাহীরপাড়া ০২ নং ওয়ার্ড, ইউপি-ছোট মহেশখালী, থানা-মহেশখালী, জেলা-কক্সবাজার; ২। মোঃ পারভেজ (২৩), পিতা-নূর মোহাম্মদ, মাতা-মজুমা খাতুন, সাং-ঘটিভাঙ্গা পূর্বপাড়া, ০১ নং ওয়ার্ড, ইউপি-কুতুবজোম, থানা-মহেশখালী, জেলা-কক্সবাজার; ৩। মোঃ আব্দুল মাজেদ (২৭),পিতা-আমির হোসেন, মাতা-সাবেরুন নাহার, সাং-ঘটিভাঙ্গা পূর্বপাড়া, ০১ নং ওয়ার্ড, ইউপি-কুতুবজোম, থানা-মহেশখালী, জেলা-কক্সবাজার; ৪। আমির মোঃ ফয়সাল (২৪), পিতা-ফজল করিম, মাতা-সুফিয়া আক্তার, সাং-ঘটিভাঙ্গা পূর্বপাড়া, ০১ নং ওয়ার্ড, ইউপি-কুতুবজোম, থানা-মহেশখালী, জেলা-কক্সবাজার; ৫। মোঃ শাকের (৩০), পিতা-আমির হোসেন, মাতা-সাবেরুন নাহার, সাং-ঘটিভাঙ্গা পূর্বপাড়া, ০১ নং ওয়ার্ড, ইউপি-কুতুবজোম, থানা-মহেশখালী, জেলা-কক্সবাজার; ৬। মোঃ রফিক আলম (৩৫), পিতা-মোঃ মীর কাশেম, মাতা-সাহেরা খাতুর, সাং-ঘটিভাঙ্গা পূর্বপাড়া, ০১ নং ওয়ার্ড, ইউপি-কুতুবজোম, থানা-মহেশখালী, জেলা-কক্সবাজার’দের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। অতঃপর গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেহ ও মাছ ধরার ট্রলারটি তল্লাশী করে ০১ টি দেশীয় পিস্তল, ০২ টি থ্রিকোয়ার্টারগান, ০৪ রাউন্ড কার্তুজ, ০২ টি রামদা, ০১ টি স্যাটেলাইট ফোন, ০১ টি কম্পাস, ০১ টি জিপিএস, পাচারকৃত সদস্যদের ফেলে যাওয়া ১৬ টি মোবাইল, ১০ টি সিমকার্ড, ০১ টি হাতঘড়ি এবং নগদ ১,২০০/- টাকা উদ্ধারসহ ট্রলারটি জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা কক্সবাজারের মানবপাচারকারী চক্রের একটি সিন্ডিকেট। মানবপাচারে তাদের মূল লক্ষ থাকে স্থানীয় গরীব বাংলাদেশী এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিক। স্থানীয় দালালদের (সিন্ডিকেটের সদস্য) মাধ্যমে গরীব বাঙ্গালী বা রোহিঙ্গাদের উচ্চ বেতনে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করানোর প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের রাজি করিয়ে জনপ্রতি তিনলক্ষ টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে, যার মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশু বিদ্যমান রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় তারা ভিকটিমদের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা গ্রহণ করে এবং বাকী টাকা পরবর্তীতে পরিশোধ করবে মর্মে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ভিকটিমরা মানব পাচারকারীদের প্ররোচনায় অন্য দেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা করে। অতঃপর তারা ভিকটিমদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে দেয় এবং নারীদের পতিতালয়ে কাজ করতে বাধ্য করায়। দালালদের নিকট থেকে ভিকটিমদের পাচার করা বাবদ সর্বমোট ২,৫০,০০০/- টাকা গ্রহণের চুক্তির বিষয়ে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং এ টাকা তারা অনলাইন ব্যাংকিং কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে তারা গ্রহণ করে থাকে। তারা আরো জানায়, যাত্রাপথে নারী ভিকটিমদেরকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং ভিকটিমদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ হাতিয়ে নিত। এই চক্রটি সর্বমোট ৫২ জন ভিকটিম {৩৭ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী (০৮ জন শিশুসহ)}’কে পাশ্ববর্তী দেশ মায়ানমারে বিক্রি করে আসার সময় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।
উল্লেখ্য যে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে ০৭ জন ভিকটিম উদ্ধারসহ ০১ জন মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতাকে গ্রেফতার এবং গত ২৫ মার্চ ২০২২ তারিখে ৫৮ জন ভিকটিম উদ্ধারসহ ০২ জন মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব-১৫।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় উক্ত অন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের ৬জনকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply