আনোয়ার হোসেন, ভালুকা প্রতিনিধি ঃ ময়মনসিংহের ভালুকায় ৫২ হাজার মুরগির ডিম বুঝাই একটি পিকআপ ছিনতাই করার সময় জসিম উদ্দিনসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় দুটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ডিম বুঝাই একটি গাড়ি উদ্ধার ও একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকার আটক করেছেন।
রবিবার (২১ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন।
এর আগে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে ভালুকা বাসস্ট্যান্ড ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে মেগার মাঠ সংলগ্ন আ. করিম ভান্ডারীর চায়ের দোকান এর সামনে পাকা রাস্তার ওপরে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার আতকাপাড়া গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিন ওরফে মতি মিয়ার ছেলে মো. জসিম উদ্দিন (৩২), একই জেলার ফুলপুর থানার গোদাইরা গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. শিমুল (২৫), ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের ধামশুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে মো. কামরুল হাসান (১৮), কোতোয়ালী থানার চরনিলক্ষীয়া উজানপাড়া গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মো. আল-আমিন (৩০) ও কিশোরগঞ্জ থানার লতিবপুর বাজার মোড় মিলন মিয়ার ছেলে মো. শামীম মিয়া (৩৯)।
মামলার বিবরণ, স্থানীয় ও পুলিশ জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হারুন-অর রশিদ এর একটি পিকআপ (ঢাকা মেট্রো ন-১৭- ১৭৮৪) চালক হিসেবে গাড়িটি চালিয়ে আসছিল ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার সোহেলপুর থানার আবুল হোসেনের ছেলে মো. নবীর হোসেন। সে গত (১৯ আগস্ট) সকালে ওই পিকআপটি নিয়ে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানা ও ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের চামিয়াদী এলাকা থেকে ৫২ হাজার মুরগির ডিম। যা ডিমের মূল্য আনুমানিক ৫ লাখ টাকা। ডিম বুঝাই পিকআপ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এ সময় একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকার ওই পিকআপের পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। পরে পিকআপটি দ্রুতগতি ভালুকা বাসস্ট্যান্ড ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে মেগার মাঠ সংলগ্ন আ. করিম ভান্ডারীর চায়ের দোকানের সামনে পাকা রাস্তার ওপরে পৌঁছা মাত্রই ওই সাদা রংয়ের প্রাইভেটকারটি ডিম বোঝাই পিকআপের সামনে দিকে বেরিগেট সৃষ্টি করে। এ সময় পিকআপ চালক মো. নবীর হোসেন বুঝে ওঠার আগেই অজ্ঞাত নামা চারজন লোক প্রাইভেটকার থেকে নেমে এসে পিকআপের চালককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ ভয়-ভীতি ও টানা হেঁচড়া করতে থাকে। এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে চালককে নামিয়ে পিকআপটি নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে করে ওই ছিনতাইকারীরা।
এ সময় পিকআপ চালকের ডাক-চিৎকার শুনে আশপাশের স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় এবং বাসস্ট্যান্ডে ডিউটি অবস্থায় ভালুকা মডেল থানার (এস আই) আবুল কালাম আজাদ, (এসআই) মুহাম্মদ নূর কাশেম, (এস আই) নজরুল ইসলাম ও (এসআই) মো. মোস্তাফিজুর রহমান চারজনের মধ্যে জসিম উদ্দিন নামের একজনকে আটক করে। বাকি তিনজন ঘটনাস্থল থেকে দৌড়িয়ে পালিয়ে যায়। আসামিদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি তল্লাশি করে পুলিশ। এ সময় প্রাইভেটকারের ভেতরে থাকা শরবতের সরঞ্জাম ও ঘুমের সাতটি পাতা ট্যাবলেট। যাহার প্রতি পাতায় দশটি করে ট্যাবলেট উদ্ধার এবং (ঢাকা মেট্রো-গ-১৩- ৬০৮৬)সহ একটি প্রাইভেটকার জব্দ করে।
মামলার তদন্তকারী ভালুকা মডেল থানার (এসআই) আবুল কালাম বলেন, আসামি জসিম উদ্দিন জবানবন্দি স্বীকারোক্তি করে। সে ২০টি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চুরি করেন। এসব ঘটনায় তার নামে বিভিন্ন জেলায় মামলা রয়েছে। পাঁচজন আসামিদেরকে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, গত ১৯ আগস্ট একটি ডিম বুঝাই পিকআপ টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। ভালুকা বাসস্ট্যান্ড আসলে এ সময় অপর দিক থেকে একটি প্রাইভেটকার এসে ওই ডিমের গাড়ির পেছনে ধাক্কা দেয়। চালককে আটক করে গাড়িটি নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনগণ ও পুলিশ হাতেনাতে একজনকে গ্রেফতার করে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামির নাম জসিম উদ্দিন। পরবর্তীকালে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তার সঙ্গে আরও তিনজন ছিল বলে নাম প্রকাশ করে। উক্ত প্রাইভেটকারটি আটক করে তল্লাশিকালে প্রাইভেটকারের ভেতরে থাকা তাদের ব্যবহৃত আখের গুড়, ঘুমের ট্যাবলেট, চেতনা ট্যাবলেট এবং মলমসহ কিছু দ্রব্য পাওয়া যায়। এরপর সে জানায়, সে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ডিমের গাড়ি ছিনতাই করে বেড়ায়। তারই দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা রাতে পুলিশের একটি দল নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় ভালুকা থেকে অটো চোরের চক্রের দুই সদস্য, ময়মনসিংহ সদর থেকে অটোসহ এক চোর এবং কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে অটোসহ আরেক চোরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply