নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জুয়া ও ক্যাসিনো ‘ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি ও দুর্নীতির উৎস’- এমন বিবেচনায় সংবিধানের আলোকে একটি সময়োপযোগী আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে চিঠি দিয়েছেন দুদক।
মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে এই চিঠি দেন। চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘জুয়া ও ক্যাসিনো পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ও নৈতিক সংকট তৈরি করে সামাজিক অবক্ষয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান জুয়া আইনটি ১৫২ বছরের পুরনো আইন। যা ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন ১৮৬৭’ নামে অভিহিত।
এ আইনে যে শাস্তির বিধান উল্লেখ আছে, তা সময়োপযোগী নয়। এছাড়া বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে জুয়া খেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা করবেন মর্মে উল্লেখ রয়েছে।
তাই সময়ের তাগিদে বাংলাদেশে জুয়া ও ক্যাসিনো খেলা সম্পর্কে যুগোপযোগী ও কার্যকর আইন প্রণয়ন করা দরকার। আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদানের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন দুর্নীতি দমন কমিশন মনে করেন।’
গত ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হলে দেশে জুয়া ও ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনা জনসমক্ষে ওঠে আসে। এর আগে এটি ছিল একেবারেই অন্তড়ালে। যুবলীগের সম্রাট, শামীম,সাঈদ কমিশনার বা খালেদের মতো নেতারা ক্যাসিনো সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। সবাই জানত ক্লাবগুলোতে জুয়া বা হাউজি হয়। বিষয়টি সরকার প্রধানের নজরে আনে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এরপরই সিদ্ধান্ত হয় অভিযান পরিচালনার। আর সেই অভিযানে অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বেরিয়ে আসছে।
ধরা পড়েছেন সম্রাট, খালেদ, জি কে শামীম, ফিরোজ, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা এনাম, রুপন, অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানসহ আরও অনেকেই।
দুদক মনে করছেন, জুয়া আইনটি সংশোধন হলে এ অপরাধ প্রবণতা ঠেকানো সম্ভব। কারণ এই জুয়া সামাজিক অবক্ষয় তৈরি করছে। পাশাপাশি এটি দুর্নীতিরও উৎস। তাই আইন প্রণয়নে সরকারকে তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সরকারও চায়, জুয়া বন্ধে দেড়শ’ বছরের পুরনো আইনকে যুগোপযোগী করতে। কারণ বর্তমান আইনে কঠোর শাস্তির বিধান নেই।
এ কারণে সাম্প্রতিক অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে আটক দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই আইনে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। আটকদের বিরুদ্ধে অন্য ধারায় মামলা দেয়া হয়েছে।
এদিকে ওই আইন দ্বারা জুয়া বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। জুয়াকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট লোকজন ও জুয়াড়িদের আইনের আওতায় আনার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি সাজা বাড়ানোর বিষয়ে মত দিয়েছেন অনেকে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, ‘দুর্বল আইনের কারণেই আটকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। এ আইন যুগোপযোগী করা দরকার। এ বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে বিদ্যমান আইনটি যুগোপযোগী কিংবা নতুন আইন করা কঠিন কিছু নয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যুগান্তরকে বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে জুয়া বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেয়া হয়। জুয়ার আইনটি অনেক পুরনো। এটাকে কিভাবে যুগোপযোগী করা যায় সে বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়া রহমান বলেন, আমরা কেউ এতদিন বিষয়টির দিকে নজর দেয়নি। সময় এসেছে এ নিয়ে নতুন করে ভাবনার। নতুনভাবে আইনটিও ঢেলে সাজানো দরকার বলে মনে করছেন তিনি।
‘প্রকাশ্য জুয়া আইন-১৮৬৭’-এ ক্যাসিনো বলতে কিছু নেই। সে কারণে নতুন আইন করে এ শব্দটি যুক্ত করে কঠোর শাস্তির বিধানের কথা বলেছেন অনেকেই। ব্রিটিশ শাসনামলের সেই আইনে জুয়া খেলার অপরাধ সর্বোচ্চ ২০০ টাকা জরিমানা এবং ৩ মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে উভয় দণ্ড একত্রে কার্যকর করার বিধানও রাখা হয়েছে আইনটিতে।
এছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর ৯২ ধারায় প্রকাশ্যে জুয়া খেলার জন্য মাত্র ১০০ টাকা জরিমানা করার বিধান আছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply