মুক্তিযুদ্ধের আলোকে দেশ চললে, অশুভ শক্তিরা মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিলেও তাদের বিনাশ হবেই। দেশ এগিয়ে যাবে।’ সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যুগে যুগে অশুভ শক্তির উত্থান হয়েছে, আবার তা প্রতিহতও হয়েছে। সমাজের মধ্য থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিহত করার সেই শক্তির জন্ম হয় এবং সেই সব অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্যে কিছু মানুষেরও জন্ম হয়। এ অঞ্চলে যেমন জন্ম হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।’
সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহসীন হাবিব। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ডক্টর অরুণ কুমার গোস্বামী।
আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধা ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলি নোমান।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনার আলোকে বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের মিত্র ও শত্রু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর আলোকপাত করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান মিত্রদেশ ভারতে প্রাণ বাঁচাতে ১ কোটি বাঙালি আশ্রয়গ্রহণ করেছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন সমগ্র বাংলাদেশে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল, তখন ভারত মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছে।
আগামীর বাংলাদেশ সম্প্রীতি ও মানবিকতার দেশ উল্লেখ করে অধ্যাপক ডক্টর জিনাত হুদা বলেন, ‘যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্রকে শেষ করে দিতে চেয়েছেন এবং দেশকে পাকিস্তানি কায়দায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন, তারা কখনোই সফল হবে না।’
ধর্মীয় বিভাজন দিয়ে কোন দেশ উন্নতি করতে পারেনি উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করে পৃথিবীর কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। বাংলাদেশ আজ নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মীয় সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। যার উদাহরণ পাকিস্তান। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে খাদের কিনারায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সহায়তার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারত এক কোটির অধিক মানুষের মানবিক সহায়তা দিয়েছে এবং আমাদের যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে। সেই সঙ্গে দেশের সকল ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ও বিশাল ত্যাগের বিনিময়ে যে দেশটির জন্ম হয়েছিল তার পেছনের প্রধানতম মন্ত্র ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।’
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply