সিয়াম বা রোজা মানুষদের সংযমের শিক্ষা দেয়। কিন্তু ধর্মান্ধ, ধর্মভীরু, গোমড়া মুসলিম জাতি এ মাসেই সর্বাধিক অসংযমী বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
ইসলাম ধর্মের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় স্তম্ভ হলো রমজান মাসে সিয়াম বা রোজা পালন করা। সিয়াম বা রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আত্ম সংযমের শিক্ষা অর্জন হয়। কিন্তু বাস্তব জীবনে আমরা কতটুকু সেই সংযমের সঠিক শিক্ষা অর্জন করতে পারছি?
বর্তমান সময়ে আমাদের পারিপার্শ্বিক চতুর্দিকে দৃষ্টিপাত করলেই দেখতে পাই রমজান মাস এলেই মুসলিম নামধারী ধর্মান্ধ ধর্মভীরু গোমড়া লোকেরা সর্বাধিক অসংযমী হয়ে ওঠে। পানাহারে অসংযম, কামাচারে অসংযম, পাপাচারে অসংযম!
আমরা অন্যান্য মাসগুলোতে সাধারণত যে পরিমাণ পানাহার করেথাকি, কিন্তু রমজান মাস এলেই আমাদের পানাহারের পরিমাণ ও খরচ অন্যান্য মাসের চেয়ে দুই/তিন গুণ বেড়ে যায়। তাহলে পবিত্র এই মাসে আমরা সংযমটা করলাম কোথায়?
রমজান মাস আগমনের সাথে সাথে হাট বাজার বিপনী বিতানে ক্রেতাদের হুমড়ি খেয়ে পরা ভীর! কারণ, রমজান মাসের জন্য বারতি পানাহারের সামগ্রী ক্রয় করা। ফলে বিক্রেতা সেই সুযোগে অতিরিক্ত দাম হাঁকিয়ে বাড়তি কিছু আয়ের জন্য অসংযমী হয়ে ওঠে! এই অবস্থাদৃষ্টে সংযমটা অর্জন হলো কোথায়?
ধর্ম ব্যবসায়ী এক শ্রেনীর মোল্লা মৌলভীদের জন্য পবিত্র এই মাসটি ধর্ম বানিজ্যের মৌসুম! ঐ সকল ধর্ম ব্যবসায়ীরা সাধারণ ধর্মভীরু লোকদের বেহেস্তের লোভ ও দোযখের ভয় এবং অধিক ছোয়াবের লোভ দেখিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করে কিছু বারতি আয়ের সুযোগ করে নিচ্ছে! তাহলে সংযমটা অর্জন হলো কোথায়?
পবিত্র এই মাসটিকে যেভাবে পালন করার বিধান মহান আল্লাহ আমাদের জন্য হুকুম করেছেন প্রকৃত অর্থে আমরা সেই বিধান থেকে অনেক দূরে সরে রয়েছি!
হিজরী বছরের নবম মাসের নাম রমজান। এই মাস জুড়ে সাওম বা রোজা পালন করা মুসলিমদের (আত্মসমর্পণকারী বিশ্বাসীদের) জন্য বিধান, ফরজ বা অবশ্যই কর্তব্য। রোজা হলো ফার্সি ও উর্দু শব্দ। আর আরবি রমজান শব্দটি রমজ ধাতু থেকে উৎপত্তি হয়েছে। রমজ শব্দের অর্থ হলো জ্বালিয়ে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া। সুতরাং রমজান মাসে রোজা রাখা বা সাওম পালন করার ফলে মানুষের ভেতরের সকল খারাপ প্রবৃত্তিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মানব আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা। পবিত্র রমজান মাসে সাওম বা রোজা পালনের ফলে পাপাচারসমূহ ভস্মীভূত হয়ে মানবাত্মা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য হয়ে ওঠে। রমজান মাসে সাওম বা রোজা পালনের মাধ্যমে আত্মসংযম ও আত্মসংশোধনের দীক্ষা লাভ করা যায়।
রোজার আরবি শব্দ হলো সাওম। সাওমের আভিধানিক অর্থ হলো, বিরত থাকা এবং সাওমের পারিভাষিক অর্থ হলো ইবাদতের নিয়তে ছুবহে ছাদিক থেকে শুরু করে সূর্য অস্তমিত যাওয়া পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার কামাচার এবং পাপাচার থেকে বিরত থাকা।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলছেন, “হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা বিধান (অবশ্যই করণীয়) করা হয়েছে, যেমন বিধান (অবশ্যই করণীয়) করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী মানুষদের ওপর। যাতে তোমরা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য অর্জন করতে পারো (সুরা আল বাক্বারা, আয়াত-১৮৪)। এখানে বলা হয়েছে যে, যারা তোমাদের পূর্বের মানুষ ছিল। ইহা ব্যাপক অর্থবোধক। এর দ্বারা মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সকলের জন্যই এ বিধান ছিল।
কিন্তু আমরা সেই বিধান কতটুকু পালন করতে পেরেছি? আমরা কতটুকু নিজেদের মধ্যের কুপ্রবৃত্তিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভষ্মীভুত করতে পেরেছি? রমজান মাস শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্যই পবিত্র নয়। রমজান মাস সকল মানব জাতির জন্য একটি বিশেষ পবিত্র ও রহমতের মাস। রমজান মাসের প্রকৃত জ্ঞান ও শিক্ষা সকল মানব জাতির মধ্যে ধারণ করে আত্মত্যাগী ও আত্মসংযমী জীবন চরিত্র অর্জন করতে পারলেই বিশ্বময় শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হয়ে উঠবে।
মহান আল্লাহ আমাদের এই পবিত্র রমজান মাসে প্রকৃত সিয়াম বা রোজা পালনের তাওফীক দান করুন।
সুফি মোহাম্মদ আহসান হাবীব
ম্যানেজিং ডিরেক্টর, সম্পাদক ও প্রকাশক
দুরন্ত সত্যের সন্ধানে (দুসস)
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply