নিজস্ব প্রতিবেদক : টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বিদেশে টাকা পাচার, দখলসহ বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ৭০ জন প্রভাবশালীর তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে রয়েছে। শিগগিরই আরো ৩০ জনের নাম আসছে। এ নিয়ে দুদকের হাতে প্রায় ১০০ জনের নাম আসবে বলে একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তাদের আইনের আওতায় আনার কাজও চলছে।
তারা যাতে সম্পদ স্থানান্তর-হস্তান্তর, পাচার বা বিক্রি করতে না পারে সেজন্য নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ক্যাসিনো-দুর্নীতিবিরোধী চলমান অভিযানে গ্রেফতার কৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তদন্ত করে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষসহ একাধিক সংস্থা গতকাল পর্যন্ত ৭০ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পেয়েছেন।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে দুদকের তপশিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে আছে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ। তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন সংস্থাটি। এছাড়া অন্যান্য সংস্থাও অনুসন্ধান-তদন্তে একযোগে কাজ করছেন। দুদকের এক মহাপরিচালকের তত্ত্বাবধানে ও এক পরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের টিম এদের অবৈধ সম্পদ ও মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
দুদকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, গতকাল পর্যন্ত আসা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কাজ শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। এ তালিকা আরো দীর্ঘ হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, দুদক এখন আর নখ-দন্তহীন বাঘ নয়। দুদক এখন একটি শক্তিশালী স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। দুদক সূত্রে জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করার জন্য আদালতে আবেদন করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে জি কে শামীম ও তার স্ত্রী, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, গেন্ডারিয়ার এনামুল হক এনু, রুপন চৌধুরী, কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি বজলুর রশিদের অবৈধ সম্পদ ক্রোকের অনুমতি চেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন। জানা গেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে জি কে শামীম ও খালেদসহ ছয় জনের কাছে ৩৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন দুদক।
এর মধ্যে জি কে শামীম ও তার স্ত্রীর নামে ২৯৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক। এছাড়া খালেদের ৫ কোটি টাকার ও এনামুল হক এনু এবং তার ভাই রুপন চৌধুরীর ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ আছে। একইভাবে কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি বজলুর রশিদের ৩ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছেন কমিশনের কর্মকর্তারা। এদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে আরো পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তাদের কাছেও বিপুল অঙ্কের টাকার অবৈধ সম্পদ আছে—এমন তথ্য পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের তালিকায় আছেন—যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এনামুল হক আরমান, জাকির হোসেন, ইসমাইল, জি কে শামীম, সেলিম প্রধান, আনিসুর রহমান আনিস, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু, তার ভাই রুপন, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কৃষক লীগের শফিকুল আলম ফিরোজ, ডিআইজি (কারা) বজলুর রশিদ, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, মোমিনুল হক সাঈদ (পলাতক), তারেকুজ্জামান রাজিবসহ ৭০ জন। এছাড়া এমপি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মীও রয়েছেন এতালিকায়।
ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দুদকের চিঠি: সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীসহ ৫০ জনের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেনের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ প্রসঙ্গে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের কাছে প্রেরিত চিঠিতে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। শুধু সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে তাদের তালিকা দুদক থেকে চাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply