টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন অাওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরিন কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলামের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে পাল্টাপাল্টি দুইটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে।
সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে এমপির বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুদের পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়াসহ নানা অভিযোগ করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম। তাঁকে শারীরিকভাবে নাজেহাল বা হত্যা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, “তিন ফসলি জমি বিনষ্ট করে ‘লেক ভিউ’ নামে ভুয়া প্রজেক্টের বিরোধিতা করায় আমার ওপর হামলা বা প্রাণনাশ হলে প্রধান আসামী হবে স্থানীয় এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম , এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান গাউস, সাধারণ সম্পাদক মির্জা রাজিক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী শহিদুল ইসলাম এবং বাদল এন্টারপ্রাইজের ভূমিদস্যু বাদল মিয়া দায়ী থাকবেন।”
উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, বাসাইলে শিল্পায়ন হলে তাঁর এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ ব্যাপারে তিনি সহায়তা করবেন। কিন্তু টাঙ্গাইল-বাসাইল সড়কের দক্ষিণ পাশে (কাশিলের বাহাতৈর মৌজায়) জি-টু-প্রজেক্টের নামে বাসাইলের তিন ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। তথাকথিত ‘লেক ভিউ’ প্রতিষ্ঠায় কাশিল ইউনিয়নের সায়ের মৌজার শতাধিক একর জমির মাটি কেটে ২০-৩০ ফুট গভীর করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। মাটিবাহী ২৫-৩০ টন ডাম্প ট্রাকের চাকায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ওই লেক ভিউ প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের। ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা উপেক্ষা ও লঙ্ঘন করে এমপি সাহেব তিন ফসলি জমির মাটি কাটার কাজ উদ্বোধন করলেন কীভাবে?’ এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, উপজেলা ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন তিনি। জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি ওই প্রকল্প বন্ধের আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু দৃশ্যমান কাজ হয়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবুও মাটি উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
সম্মেলনে বাসাইলের কাউলজানী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউল গনি হাবীব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিউল আরিফিন খানশূর সুজন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন তালুকদার, সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইলিয়াস জামান বাপ্পী, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মলি আক্তার, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কামরান খান বিপুলসহ অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলামের অনুসারীরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মির্জা রাজিক দাবি করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এত দিন এ প্রকল্পের পক্ষেই ছিলেন। তাঁর স্বজনরাও এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। হঠাৎ কেন এবং কী কারণে এর বিরোধিতা করে অভিযোগ আনলেন, তা তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে না।
সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের দাবি করেন, চাঁদাবাজি করে টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
সংসদ সদস্য বলেন, চীনা প্রকল্পের একটি কারখানার মাটি ভরাটের কাজ চলছে। এলাকার উন্নয়নের কারণে তা উদ্বোধন করেছেন তিনি। প্রকল্পের সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান দল থেকে বহিষ্কৃত। আওয়ামী লীগসহ এলাকার লোকজন তাঁর (উপজেলা চেয়ারম্যান) ওপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ করেছে লোকজন।
উল্লেখ্য গত ৫ মে কাশিলে নির্মানাধীন চায়না প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিথ্যা বক্তব্য ও অপপ্রচারের দাবি এনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রকল্প পরিচালক জহির আহমেদ জমাদার পিন্টু।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply