টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ আগামী ২১ জুন টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভা নির্বাচন। যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ক্রমেই জমে উঠেছে প্রচার প্রচারনা। নাওয়া খাওয়া ভুলে রাতদিন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। প্রার্থীদের নিয়ে পৌর এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্টে ভোটারদের মাঝেও চলছেে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। গানে গানে চলছে ডিজিটাল মাইকিং।ব্যান পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো পৌর এলাকা। স্থানীয় ভোটার ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন তিনজন প্রার্থীই হেভিওয়েট হওয়ায় প্রত্যেকেরই রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা। ফলে এ নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে।
এ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান মেয়রসহ তিন জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, বাসাইল পৌরসভা ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। সে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও কৃষক শ্রমিক জনতালীগের প্রার্থীদের পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান। ২০১৮ সালের ২য় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রহিম আহমেদ মেয়র নির্বাচিত হন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম আহমেদ এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে বর্তমান মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদের সামনে এবার কঠিন পরীক্ষা। তাকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির (সদ্য বহিষ্কৃত) সভাপতি এনামুল করিম অটল এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ উপজেলা শাখার সভাপতি রাহাত হাসান টিপুকে।
আব্দুর রহিম আহমেদ টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের অনুসারী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগে রয়েছে তীব্র কোন্দল। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী অলিদ ইসলামের নেতৃত্বে দলের বড় একটি অংশ রয়েছে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। এই কোন্দলের প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা-কর্মীরা।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এনামুল করিমকে গত শুক্রবার দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরেও তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে সক্রিয় নির্বাচনের মাঠে। এর আগের দুইটি নির্বাচনে তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে হারেন। এবার নির্বাচন কমিশনের নিরপেেক্ষতায় আস্থা রেখে তিনি নির্বাচিত হওয়ার শতভাগ আশাবাদী।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নির্বাচনী এলাকা বাসাইল। তাই তিনিসহ দলের শীর্ষ নেতারা তাদের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে বিজয়ের প্রত্যাশায় বেশ উৎফুল্ল প্রার্থী ও সমর্থকরা।
২০১৩ সাল ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে এনামুল করিম এবং রাহাত হাসান নিজ নিজ দলের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করেন। উভয়ই সামান্য ভোটে পরাজিত হন। এবার জয়ের জন্য উভয়ই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
তিন মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ভরে গেছে পৌর এলাকা। সব জায়গায় চলছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা।
বাসাইলের কলিয়া গ্রামের হাসান সিকদার বলেন, পুরো পৌর এলাকায় উৎসব আমেজে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। মেয়র পদে তিন জন শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় নির্বাচন জমে উঠেছে।
আওূামীলীগের অভ্যন্তরিন দলীয় কোন্দলের প্রভাব নির্বাচনে পড়বে না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রহিম আহমেদ। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর পৌরবাসীর পাশে থেকে পৌরসভায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। তাই দলের সর্বস্তুরের নেতাকর্মীরাঐক্যবদ্ধ আছেন। সেই সাথে সাধারণ ভোটাররা আমার সঙ্গে আছেন। এবারও জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যিক্ত করেন।
মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল করিম আটলকে শুক্রবার দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের পদধারী অনেক নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে তার পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে না। তবে তারাও গোপনে সক্রিয় দলের নেতাকে বিজয়ী করার জন্য।
এনামুল করিম জানান, উপজেলা বিএনপির সবাই তার সঙ্গে আছেন। গত পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তারপরও খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। এবার ৭০ ভাগ ভোটার তার পক্ষে রয়েছেন। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
কৃষক শ্রমিক জনতালীগ সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম তার দলের প্রার্থী রাহাত হাসানকে বিজয়ী করার জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। দলের নেতারা জানান, এটি দলের প্রতিষ্ঠাতার নির্বাচনী এলাকা। তাই মেয়র পদে তাদের দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তারা সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছেন।
রাহাত হাসান বলেন, গত নির্বাচনে সামান্য ভোটে হেরেছিলাম। তারপরেও ১০ বছর ধরে জনগণের মাঠে রয়েছি। বাসাইলের জনগণ আমাকে চায়। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমার বিজয় নিশ্চিত।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনি শংকর রায় জানান, আগামী ২১ জুন বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহন করা হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। তিন জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। পৌরসভার ১০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৩৭।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply