দুসস ডেস্কঃ চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালে শতকোটি টাকা মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। একেকটি ১১ থেকে ১২ কোটি দামের চিকিৎসা সরঞ্জামও রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে স্থানীয়ভাবে নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা নেই। মেরামত প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক দামি মেশিন নষ্ট হতে চলেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মেরামত প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার কারণে মেশিনের কার্যক্ষমতা যেমন কমে যাচ্ছে আবার রোগীরাও সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব মেরামত কারখানা ও একটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের পদ সৃজন করলে অচল মেশিন নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ১৬টি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে রয়েছে এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আল্ট্রসনোগ্রাফি, ইসিজি, এক্সরে মেশিন, ক্যাথল্যাব, কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন, থাইরয়েড স্ক্যানার, কালার ডপলার, গামা ক্যামেরা, ব্র্যাকিথ্যারাপিসহ নানা চিকিৎসা উপকরণ।
চট্টগ্রামে ১৫ টি উপজেলায় ৫০ ও ৩১ শয্যার ১৬টি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে ইসিজি, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন। কিন্তু চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসা উপকরণ মেরামতের কোনো ব্যবস্থা নেই ও জনবলও নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসা উপকরণগুলো সরবরাহ দেওয়া হয়। আর ন্যাশনাল ইলেক্টো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেনটেইনেন্স অ্যান্ড ওয়াকর্শপের মাধ্যমে অচল সরঞ্জাম মেরামত করতে হয়। অচল সরঞ্জাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মেরামত কাজ করতে হয়। এতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। অচল চিকিৎসা উপকরণ মেরামতের জন্য সরকারিভাবে কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় না।
উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসক কর্মকর্তারা জানান, কোনো চিকিৎসা উপকরণ এক বার অচল হলে মেরামত নিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অচল মেশিনের অবস্থা নিয়ে সিভিল সার্জনের মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠাতে হয়। এরপর তারা এসে মেশিনের মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এই সময়ে রোগীরা সেবা বঞ্চিত থাকে।
চিকিৎসকরা জানান, গ্রামের এসব হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা পেলেও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। সরকারি এসব মেশিন রক্ষণাবেক্ষণে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কোনো ব্যবস্থা নেই। সামান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যথাসময়ে মেরামত না হওয়ায় অনেক মূল্যবান চিকিৎসা উপকরণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারের একটি পদ সৃজন করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা সরঞ্জাম মেরামতের ব্যবস্থা থাকলে অচল মেশিন দ্রুত সচল করে সেবা দেওয়া সহজ হতো।
চমেক হাসপাতালে শতকোটি টাকার বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। এখানে একটি ১১ থেকে ১২ কোটি টাকা দামের একাধিক চিকিৎসা উপকরণও রয়েছে। কিন্তু এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম মেরামতের জন্য একটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের পদ সৃজন করা হয়নি। বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে ছোটবড় আরও অনেক চিকিৎসা উপকরণ রয়েছে। কিন্তু অচল মেশিন মেরামতের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। গত এক বছরের অধিক সময় ধরে এমআরআই, ব্র্যাকিথেরাপি, ক্যাথল্যাব মেশিন অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোক না পাঠানোর কারণে মেরামত কাজ হচ্ছে না। এসব মেশিনের সেবা বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চমেক হাসপাতালে নিজস্ব মেরামত কারখানা থাকা প্রয়োজন। ছোটখাটো মেশিনগুলো স্থানীয়ভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেরামত করা হয়। শতকোটি টাকার মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে। অথচ এসব মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য কোনো নিজস্ব ব্যবস্থা নেই। এক জন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের পদ সৃজন ও নিজস্ব মেরামত কারখানা স্থাপন প্রয়োজন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, এখানে কোনো মেশিন অচল হলে ঢাকা থেকে লোক এসে করে থাকেন। স্থানীয়ভাবে মেরামত কারখানা থাকলে ভালো হতো। হাসপাতালে নতুন নতুন চিকিৎসা উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে মেরামত কারখানা করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান করতে গেলে জনবলের পদ সৃজন অন্যান্য সাপোর্টের দরকার হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply