November 24, 2024, 12:49 am

তথ্য ও সংবাদ শিরোনামঃ
গৃহঋণের জন্য আবাসন খাতে বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. মু. নজরুল ইসলাম তামিজী সোনার দেশ- এটিই হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বেনাপোল পুটখালী সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার। বেনাপোল বলফিল্ড মাঠে শহীদ জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট- ২০২৪ অনুষ্ঠিত। বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে ৩৬ কেজি গাঁজাসহ ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার। টঙ্গীবাড়ীতে বীজ আলু ও সার ব্যাবসায়ী দের সাথে ইউএনওর মত বিনিময় সভা। বেনাপোল দিয়ে ভারতে পাচার হওয়া ২৪ জন কিশোর ও কিশোরী দেশে ফিরেছে। আ.লীগ নেতার জবর দখলে থাকা সরকারি ১২ বিঘা জমি উদ্ধার। রাজধানীতে কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ। ১৫ বোতল ফেন্সিডিল সহ ০১ জন আসামী গ্রেফতার। যশোর পর্যটন খাতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হবে। উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বেনাপোল বন্দর দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু। বেনাপোলের শহীদ আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারত করলেন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না থাকায় আশাহত হয়েছে বিএনপি। ভালুকায় দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং ধনবাড়ী উপজেলার নব নিযুক্ত নির্বাহী অফিসারের সাথে ধনবাড়ী উপজেলা মডেল প্রেসক্লাবের সদস্যদের সৌজন্য সাক্ষাৎ। নওগাঁ পত্নীতলার ডিগ্রি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সুমন হোসেন কে হত্যা করে গলায় ফাঁসি দিয়ে কাঁঠাল গাছের ঝুলিয়ে রহস্য জনক মৃত্যু। শার্শায় ৪ যুগ ধরে খবরের কাগজের ফেরিওয়ালা সিরাজ আর নেই। রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মওলানা ভাসানীকে স্বীকৃতি দিতে হবে …… অধ্যক্ষ এম শরিফুল ইসলাম বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ৯২৫ এর বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত। যশোর যৌনকর্মী প্রেমিকাকে নিয়ে দ্বন্ধে হেলপার বাপ্পি খুন। মওলানা ভাসানীকে অপমান করায় আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত প্রায় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংস্কার চাই – রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী। ভালুকায় জমি দখল ও খেতের ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ মওলানা ভাসানীকে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি …. বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস। দেশপ্রেমিক লোকদের সঠিক প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই করে নিয়োগ দিতে হবে …… অধ্যাপক ড. সায়েদা ওবায়েদ যশোর বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের কর্তৃক ৩০ বোতল ফেন্সিডিল ও ১ কেজি গাঁজা সহ ০১ জন আটক। ওষুধের দাম কমানোর আহ্বান ……এম এ আলীম সরকার গাজীপুর কোনাবাড়ীতে আবাসিক হোটেলে চলছে নারী ও মাদকের রমরমা ব্যবসা

১৫ আগস্ট শুধু কান্নার দিন, বঙ্গভঙ্গ দিবস ও বঙ্গবন্ধু হত্যার দিবস।

১৫ আগস্ট শুধু কান্নার দিন, বঙ্গভঙ্গ দিবস ও বঙ্গবন্ধু হত্যার দিবস।

১৫ আগস্ট বঙ্গভঙ্গ দিবস। অবিভক্ত ভারতের  প্রথম স্বাধীনতা দিবস ২১ অক্টোবর। সিঙ্গাপুরে নেতাজির আজাদ হিন্দ সরকারকে জাপান, চীনসহ ১১ টি দেশের স্বীকৃতি। ১৫ আগস্ট শুধু  রহস্যজনক গোপন ক্ষমতা হস্তান্তর!

মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারত প্রতিনিধিঃ অবিভক্ত ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা এনেছিলেন সর্বজয়ী বিপ্লবী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৪৭ সালের ৪ বছর আগে।সেটি ছিল পূর্ন স্বাধীনতা।ব্রিটিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া। ভিক্ষে করে নয়। নেতাজির ঘোষিত সেদিনের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল জাপান জার্মানি চিন, মায়াম্মার সহ ১১ টি দেশ। অথচ এক গভীর ষড়যন্ত্রের ফলে সেই দিনটিকে ইতিহাসে উপেক্ষিত করে রাখা হয়েছে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।  ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।  আর সেই দিনটিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হলেও ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চকে প্রথম স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপিত করা হয় বাংলাদেশে। ২৬ মার্চ পাকিস্তানের কারাগার থেকে বন্দি অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা করেছিলেন।  সেদিন ভারত থেকে স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।  কিন্তু ভারতের ক্ষেত্র এর ব্যতিক্রম কেন ? বিশ্বে এমন নজির অনেক রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও রয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস বৃটিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছেন। কখনো স্থল পথে,  কখনো জলপথে,  আবার কখনো দুর্গম পাহাড়ী  জঙ্গল থেকে। ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরের দাই-তোয়া-গে-কি -জোতে ২১ অক্টোবর নেতাজি আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে স্বাধীন ভারতের ঘোষণা করেছিলেন।

সকাল সাড়ে দশটায় এই অনুষ্ঠানে বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশের  কয়েক হাজার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সুসজ্জিত বিশাল মঞ্চে তখন ফুলে ফুলে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অসংখ্য পুষ্পস্তবক এবং ফেস্টুনে লেখা ছিল জয় হিন্দ, জয় ভারত স্লোগান।  মঞ্চের পেছনদিকে শোভা পেয়েছিল গান্ধীজীর একটি তৈলচিত্র।  মঞ্চের শীর্ষে পতপত করে উড়ছিল ভারতের জাতীয় পতাকা।  বরেণ্য বিশ্ব নেতা ও আজাদ হিন্দ ফৌজর সেনা ও সমর্থকদের সম্মুখে সর্বাধিনায়কের সামরিক পোশাক পড়ে নেতাজি মঞ্চে উপস্থিত হলেন ঠিক সকাল দশটায়।  করতালির ঝড় ও  মুহুর্মুহু ‘জয়হিন্দ’ ধ্বনির মধ্য দিয়ে নেতাজি ঘোষণা করলেন ভারতের স্বাধীনতা।

১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবরের ঠিক সকাল সাড়ে দশটায় নেতাজি আজাদ হিন্দ সরকারের সর্বাধিনায়ক ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন।তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা রাজশেখর বসু।  শপথ বাক্য পাঠ করে জাতি ও বিশ্বের উদেশ্যে তিনি বলেছিলেন, ‘ঈশ্বরের নামে ভারতবর্ষের ও আমার আটত্রিশ কোটি দেশবাসীর মুক্তির জন্য আমি সুভাষ চন্দ্র বসু এই পবিত্র শপথ গ্রহণ করে বলছি যে, আমার জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে এই সংগ্রাম চালিয়ে যাব। চিরকাল ভারতবর্ষের সেবক থেকে স্বদেশবাসী ভাই-বোনেদের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবো।  এটাই হবে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্তব্য।  স্বাধীনতা লাভের পরও সেই স্বাধীনতাকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য প্রয়োজনে আমার শেষ রক্তবিন্দু দিতেও আমি কুন্ঠাবোধ করবো না’।

নেতাজির শপথ গ্রহণের পরেই একে একে অন্যান্যরাও সেদিন আজাদ হিন্দ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।  রাষ্ট্রনায়ক নেতাজি প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়াও নিজের হাতে রেখেছিলেন প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র বিষয়। মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন সাঈগল। তিনি নারী কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসি চ্যাটার্জী – অর্থ। সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি এবং মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন কর্নেল  জে কে ভোঁসলে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজ আহমদ,  লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভগত, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম জেড কিয়ানি, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ ডি লগনাথন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ নাওয়াজ খান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ঈশান কাদির প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু কে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করা হয়।  এ এম সহায় মন্ত্রী সমমর্যাদা সম্পন্ন সচিব পদে শপথ নেন। সরকার গঠন করে নেতাজি ঘোষণাপত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা, সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও বিদেশী শাসনের অবসানের কথা উল্লেখ করেন। এই অনুষ্ঠান থেকেই সঙ্গে সঙ্গে নেতাজি বৃটিশের বিরুদ্ধে  আমৃত্যু  সংগ্রামের ডাক দেন। উদাত্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে তোমরা রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’ । সঙ্গে সঙ্গে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে আওয়াজ উঠল ‘জয় হিন্দ, নেতাজি জিন্দাবাদ, দিল্লি চলো’। এদিনের আজাদ হিন্দ সরকারের জন্ম লগ্নে সারা দক্ষিণ এশিয়ার হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতির বন্যা বয়ে গেছে।প্রায় চল্লিশ হাজার আজাদ হিন্দ ফৌজের এবং আই এন এ সেনা কুচকাওয়াজ করেন ফৌজি কায়দায়।

স্বীকৃতি :  সরকার গঠনের পর সর্ব প্রথম জাপান এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৪৩  সালের ২৩ অক্টোবর।  এরপর একে একে ২৪ অক্টোবর বার্মা (মায়ানমার), ২৭ অক্টোবর ক্রটিয়া , ২৯ অক্টোবর জার্মানি, ১ নভেম্বর মাঞ্চুকু ও চীন, ১৯ নভেম্বর থাইল্যান্ড সরকার স্বীকৃতি দেয় আজাদ হিন্দ সরকারকে। এছাড়াও আরো দুটি রাষ্ট্র আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বিশ্বের ১১ টি রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেবার পর কার্যতঃ  বৃটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন নেতাজি।

এরপর মনিপুরের ইম্ফলের  মইবামে  ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। ব্রিটিশ শক্তিকে পরাজিত করে ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। নেতাজি মইরামে পৌঁছনোর কিছু আগে একটি জিপ নিয়ে নেতাজির অনুগামী শওকাত আলী পতাকা হাতে জিপে  অপেক্ষা করছিলেন। নেতাজি হাজির হতেই তিনি পতাকা তুলে দেন নেতাজির হাতে। নেতাজি আজাদ হিন্দ ফৌজের উপস্থিতিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন।

অনেকেরই অজানা, সেই সময় ব্রিটিশ সেনা মণিপুরের প্রবেশ পথ অবরুদ্ধ করে আজাদ হিন্দ ফৌজের রসদ বন্ধ করে দেয়। নেতাজির ভক্ত ডিমাসা মহিলা জয়া থাউসেন হাফ লং থেকে গাড়ি বোঝাই খাদ্য সামগ্রী নিয়ে তুলে দেন নেতাজির হাতে। আরো খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহের জন্য জয়া থাওসেন যখন হাফ্লঙের দিকে ফিরে যাচ্ছিলেন তখন ব্রিটিশের গোর্খা সেনারা তার পথ আটকে গুলি করে হত্যা করে। আজও নেতাজির অনুগামীরা সেই অবদান স্বীকার করেন। হাফ্লাংয়ের সকলেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জয়াকে। বেতারে নেতাজি মইরাম থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার এই দিনটিকেও ভারত সরকার আজও যোগ্য মর্যাদা দেয় নি।

১৯৪৩ সালের ২৭ অক্টোবর নেতাজি টোকিও যান একটি সম্মেলনে যোগদান করতে। Greater East Asia সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে নেতাজি  সেখানে যান। উক্ত সভায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো একটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। তিনি জাপান অধিকৃত আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে তুলে দেবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। জাপান বিশ্বাস করতো নেতাজি ভারতের ক্ষমতায় আসতে পারলে জাপানের সঙ্গে বলিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হবে।সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৪৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভারতের প্রথম মুক্তাঞ্চল আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পা রাখেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু।স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন সেখানে আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধান মন্ত্রী হিসাবে। সুভাষ চন্দ্র বসু স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেই দ্বীপের নাম বদলে স্বরাজ দ্বীপ রাখেন। এই দিনটিও দীর্ঘকাল ছিল উপেক্ষিত। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকার এসে অন্তত এটিকে মর্যাদা দিয়েছেন।

নেতাজি সিঙ্গাপুরে ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর প্রথম স্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকারের গঠন করেছিলেন।  এর পর রেঙ্গুনে তিনি আজাদ হিন্দ সরকার, আজাদ হিন্দ ফৌজের ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট লীগের সদর দপ্তর স্থাপন করেছিলেন। সিঙ্গাপুরের দপ্তর গুলির কাজকর্মও  চলতে থাকে। নেতাজি মনে করতেন ব্রিটিশ ভারতকে আক্রমণ করতে হলে সীমান্তের কাছে কোন জায়গা বেছে নিতে হবে। বার্মা তথা আজকের মায়াম্মার সেই হিসাবে উপযুক্ত। তাছাড়া বার্মার প্রথম রাষ্ট্রপতি” লর্ড বা মো”  তার বন্ধু। একই সঙ্গে দুজনে আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে লড়াই করেছেন। নেতাজি ভারতকে স্বাধীন করতে এবং  বা মো বার্মাকে স্বাধীন করতে সংগ্রাম করেছেন। তাই রেঙ্গুনকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ব্রিটিশ কে শায়েস্তা করতে।

অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার, কোন সরকারই নেতাজির প্রকৃত মুল্যায়ন করেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার ছাড়া। নরেন্দ্র মোদী আন্দামান নিকোবর সফরে গিয়ে একটি দ্বীপের নাম সুভাষ চন্দ্র দ্বীপ রাখেন এবং নেতাজির প্রতি সম্মান জানান।আগে কোনদিন এমন হয়নি।

জওহরলাল নেহরুর কথা আলাদা। তিনি ছিলেন নেতাজির প্রতি ঈর্ষাকাতর। একই সঙ্গে ব্রিটিশের আজ্ঞাবাহী। তিনিই রাশিয়ায় নেতাজির অবস্থান নিয়ে গোপনে চিঠি লিখেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে লর্ড এটলিকে। সেই চিঠির প্রতিলিপি এই  প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। তিনি আইএনএ (নেতাজির  ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি) সচিব শ্যামলাল জৈন কে আসফ  আলী রোডে ডেকে পাঠান। সেখানে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেল এবং প্রধানমন্ত্রীকে লেখা তার চিঠিতে স্বাক্ষর দিতে বলেন। শ্যামলাল তাতে আপত্তি জানালে নেহেরু নিজেই সই করে চিঠি পাঠিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, তিনি চিঠিতে নেতাজিকে যুদ্ধপরাধী বলেও উল্লেখ করেছিলেন। শ্যামলাল পরবর্তীকালে চিঠিটি মুখার্জি কমিশনের কাছে পেশ করেছিলেন।  যাই হোক, নেহেরুর পর বহু সরকার এসেছে।  নেতাজির প্রতি মনোভাব পাল্টায় নি। নেহরু রাশিয়ার কে জি বি ,আমেরিকার সি আই এ এবং ব্রিটেনের  নেতাজি সম্পর্কিত গুপ্ত তথ্য গুলিকে তার নিজের ডাইরির পাতায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। ফাইলগুলি তার বাসভবন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। কিন্তু নেহরুর নির্দেশে তার দেহরক্ষী তথা আপনজন মহাম্মদ ইউনুস ডায়েরির পাতা থেকে অনেকগুলি পাতা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। শুধু তাই নয়, নেহরুর পর পরবর্তী কংগ্রেস সরকারগুলো নেতাজি সম্পর্কিত গোপন ফাইলগুলি গায়েব করে দিয়েছে। যেগুলি পরে পাওয়া গেছে সেগুলিও কোন সরকার জন স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে প্রকাশ করেনি। নরেন্দ্র মোদী অনেকগুলি ফাইল প্রকাশ করলেও বহু স্পর্শকাতর ফাইল এখনো প্রকাশ করেন নি। মনমোহন সরকার জানিয়েছিল সেগুলি প্রকাশ হলে বিশ্বের বেশ কটি দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। তাছাড়া, দেশের ভিতর পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ ভারত, উওর পূর্বে ভয়ঙ্কর আইন শৃংখলার সমস্যা হতে পারে। আগুন লেগে যেতে পারে। বর্তমান প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই সব গোপন ফাইল নিয়ে একই অবস্থান নিয়েছেন।

স্বাধীনতার পর কলকাতায় এসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড এটলি সাংবাদিকদের কাছে নিজেই স্বীকার করে বলেছেন, হিন্দু- মুসলিম-শিখ সম্প্রদায় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর নেতাজির প্রভাবের ফলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কেঁপে উঠেছিল। সুভাষ চন্দ্রের জন্য ব্রিটিশদের ভারত ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। নেহেরু- গান্ধী নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি মৃদু হেসে জবাব এড়িয়ে গিয়েছিলেন। বাঙ্গালী ও শিখদের  ওপর ব্রিটিশের বিদ্বেষের ফলে স্বাধীনতার সময় শুধুমাত্র বাংলা ও পাঞ্জাবকে টুকরো করা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল ১৫  আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন ডোমিনিয়নের প্রতিষ্ঠা হবে ভারতবর্ষে। সুচতুর মাউন্টব্যাটেনের ফর্মুলায় ক্ষমতার লোভ সামলাতে পারলেন না জহরলাল নেহেরু ও মোহাম্মদ আলী জিন্না। দুজনেই বিভক্ত দেশের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরলেন। অথচ নেতাজির সংগ্রাম ছিল ঐক্যবদ্ধ ভারতবর্ষের। নেহেরু ও জিন্না ব্যক্তিগত স্বার্থে জলাঞ্জলি দিলেন প্রকৃত স্বাধীনতার মূল্যবোধকে। নেতাজি যাতে দেশে ফিরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না পারেন সেজন্য ব্রিটিশের তথা মাউন্টব্যাটেনের স্তাবকতা করে নেহেরু নেতাজির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত  শুরু করে গেছেন। গুপ্তচর সূত্রে খবর সংগ্রহ করে নেতাজির অবস্থানকে জানিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড এটলিকে। প্রশ্ন উঠেছে,১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট কি সত্যি ভারত স্বাধীনতা পেয়েছে? একদম নয়।একটি গোপন চুক্তি অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে।কিছু সত্য ঘটনা যা ১৯৪৭ সালে থেকে আজ অবধি আমাদের ভারতীয়দের কাছ থেকে আইনত গোপন রাখা হয়েছিল। স্বাধীনতার সময়, এই অপকর্মের নায়ক নেহেরু এবং গান্ধী দ্রুত ক্ষমতা পাওয়ার লোভে ব্রিটিশদের সাথে ক্ষমতা হস্তান্তর চুক্তি “Transfer of Power Act” স্বাক্ষর করেছিলেন। যার শর্ত হল যে ভারত ১৯৪৭  থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত এই চুক্তি প্রকাশ করতে পারবে না এবং ভারতীয় সংবিধানের ৩৬৬, ৩৭১, ৩৭২ ও ৩৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারতীয় সংসদ, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির কারুরই এই চুক্তিটি সংশোধন করার অধিকার নেই।

আপনি কি জানেন যে ১৯৪৭  থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে ১০ বিলিয়ন টাকা (১ বিলিয়ন= ১০০কোটি) পেনশন আজও রানী এলিজাবেথের কাছে পাঠানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত প্রতি বছর ব্রিটেনকে ৩০ হাজার টন গরুর মাংস রপ্তানি করতে বাধ্য।আমি ভুল হলে ক্ষমা করবেন।ভারত জাপান, চীন, রাশিয়ার মতো দেশে তার রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে… কিন্তু শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতে শুধুমাত্র হাই-কমিশনার  (উচ্চায়ুক্ত) নিয়োগ করতে পারে এবং এই দেশে রাষ্ট্রদূত নয়। এখন প্রশ্ন হয় – কেন?সর্বশেষে, ভারত সহ ৫৪  টি দেশ কেন কমনওয়েলথ দেশ হিসাবে পরিচিত, কেন স্বাধীন দেশ হিসাবে নয়? কমনওয়েলথ মানে “যৌথ সম্পত্তি।” যৌথ সম্পত্তি কথাটির অর্থ হলো ব্রিটিশ জাতীয়তা আইন ১৯৪৮ এর অধীনে প্রত্যেক ভারতীয়, অস্ট্রেলিয়ান, কানাডিয়ান, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ যাই হোক না কেন, এখনও আইনত ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথের ক্রীতদাস, যিনি এখন মৃত।  তাই এখন তার পরিবর্তে আমরা রাজা তৃতীয় চার্লসের দাস।

ভাবতে দুঃখ হয়, কাদের স্বাধীনতা আজ? কতটুকু স্বাধীন আমরা? যারা আত্মত্যাগ করলেন, ফাঁসি কাঠে মৃত্যু বরণ করলেন, তাদের উত্তরসুরি আজ দ্বিখণ্ডিত, বিদেশি নয়তো বাংলাদেশী। খোলা আকাশের নিচে তাদের স্থান নেই। তাদের স্থান তাদেরই মাতৃভূমি অখণ্ড বাংলার ভূমিতে ডিটেনশন ক্যাম্পে।

আমাদের প্রকাশিত তথ্য ও সংবাদ আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)

Design by Raytahost.com