November 21, 2024, 3:40 pm

তথ্য ও সংবাদ শিরোনামঃ
বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে ৩৬ কেজি গাঁজাসহ ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার। টঙ্গীবাড়ীতে বীজ আলু ও সার ব্যাবসায়ী দের সাথে ইউএনওর মত বিনিময় সভা। বেনাপোল দিয়ে ভারতে পাচার হওয়া ২৪ জন কিশোর ও কিশোরী দেশে ফিরেছে। আ.লীগ নেতার জবর দখলে থাকা সরকারি ১২ বিঘা জমি উদ্ধার। রাজধানীতে কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ। ১৫ বোতল ফেন্সিডিল সহ ০১ জন আসামী গ্রেফতার। যশোর পর্যটন খাতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হবে। উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বেনাপোল বন্দর দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু। বেনাপোলের শহীদ আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারত করলেন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না থাকায় আশাহত হয়েছে বিএনপি। ভালুকায় দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং ধনবাড়ী উপজেলার নব নিযুক্ত নির্বাহী অফিসারের সাথে ধনবাড়ী উপজেলা মডেল প্রেসক্লাবের সদস্যদের সৌজন্য সাক্ষাৎ। নওগাঁ পত্নীতলার ডিগ্রি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সুমন হোসেন কে হত্যা করে গলায় ফাঁসি দিয়ে কাঁঠাল গাছের ঝুলিয়ে রহস্য জনক মৃত্যু। শার্শায় ৪ যুগ ধরে খবরের কাগজের ফেরিওয়ালা সিরাজ আর নেই। রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মওলানা ভাসানীকে স্বীকৃতি দিতে হবে …… অধ্যক্ষ এম শরিফুল ইসলাম বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ৯২৫ এর বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত। যশোর যৌনকর্মী প্রেমিকাকে নিয়ে দ্বন্ধে হেলপার বাপ্পি খুন। মওলানা ভাসানীকে অপমান করায় আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত প্রায় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংস্কার চাই – রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী। ভালুকায় জমি দখল ও খেতের ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ মওলানা ভাসানীকে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি …. বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস। দেশপ্রেমিক লোকদের সঠিক প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই করে নিয়োগ দিতে হবে …… অধ্যাপক ড. সায়েদা ওবায়েদ যশোর বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের কর্তৃক ৩০ বোতল ফেন্সিডিল ও ১ কেজি গাঁজা সহ ০১ জন আটক। ওষুধের দাম কমানোর আহ্বান ……এম এ আলীম সরকার গাজীপুর কোনাবাড়ীতে আবাসিক হোটেলে চলছে নারী ও মাদকের রমরমা ব্যবসা যশোর যাত্রীবাহী বাসের ভেতর থেকে রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ঢাকাই সিনেমার একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রুবেল। কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। গলি থেকে রাজপথ শ্যামবাজারের রক থেকে উঠে প্রাসাদে মিঠুন চক্রবর্তী

রাজীব সমর দুই সহোদরের ত্রাসের রাজত্বে সাভারবাসী অসহায়।

রাজীব সমর দুই সহোদরের ত্রাসের রাজত্বে সাভারবাসী অসহায়।

দুসস ক্রাইম ডেস্কঃ একজন সাভার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, আরেকজন তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর। আপন দুই ভাই। দুই সহোদর নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বিগত এক দশক যাবত তারা হয়ে উঠেছেন সাভার এলাকার নিয়ন্ত্রক। নগরায়ণের প্রভাবে সাভারের প্রায় সবকিছুই বদলে গেছে। সেইসঙ্গে রাজীব-সমরের প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং সম্পদও বেড়েছে অঢেল। রাজনীতির ছোঁয়ায় ক্ষমতাধর হয়ে ওঠা দুই ভাইয়ের ইশারা ছাড়া কিছুই নড়ে না রাজধানীর এই উপকণ্ঠে। শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় সব রকম অপরাধের নেপথ্যে নাম আসে তাদের। সাংবাদিক নির্যাতনেও সিদ্ধহস্ত তারা। স্থানীয় অন্য জনপ্রতিনিধিরাও যেন দুই ভাইয়ের আজ্ঞাবহ, চলেন তাদের নির্দেশনায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও রাজীব-সমর সাম্রাজ্যে কোণঠাসা বলে জানাযায়।

রাজধানীর সন্নিকটে সাভার উপজেলার মূল সংসদীয় আসন ঢাকা-১৯। এ ছাড়া ঢাকা-২ ও ঢাকা-১৪ আসনে রয়েছে চারটি ইউনিয়ন। তিনজন সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি রয়েছেন ১২ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন পৌর মেয়র। তবে তাদের সবাইকে ছাপিয়ে সাভারজুড়ে একচ্ছত্র আধিপত্য রাজীব ও সমরের। নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার কৌশল হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দুই ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেন। এতে ভরাডুবি হয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. এনামুর রহমানের।

জানা গেছে, গত এক দশকে রাজীব ও সমর ছিলেন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের ঘনিষ্ঠ। তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে তুলেছেন নিজেদের সাম্রাজ্য। সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে মালিক বনে গেছেন অঢেল সম্পদের।

অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য মুরাদ জংয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ রাজীব ও সমরের। জাতীয় নির্বাচনে মুরাদ জংকে ঠেকানোই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। এ কারণেই নানা হিসাবনিকাশ করে ডা. এনামের পরিবর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুলের পক্ষ নেন দুই ভাই। নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় উপজেলা চেয়ারম্যান রাজীব নিজেই সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে হাজির হন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তৌহিদ জং মুরাদ এমপি নির্বাচিত হলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন রাজীব ও সমর। সে সময় রাজীবদের সাভারে প্রবেশ করাও ছিল কঠিন। তাদের সাভারের ব্যাংক কলোনি ব্রিজ অতিক্রম করতেও দেখা যায়নি দীর্ঘদিন। তাদের বিচরণ তখন হেমায়েতপুর এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।

সাভারের বয়োজ্যেষ্ঠ বেশ কয়েকজন জানান, রাজীবের বাবা ওয়াসিল উদ্দিন ১৯৭৯ সালে ছিলেন হেমায়েতপুর এলাকায় গ্রাম সরকার। এরপর একটি সংবাদপত্র অফিসে ‘অফিস সহকারী’ হিসেবে কাজ করতেন। তবে বাবাকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নিজের অনেক অপকর্ম আড়াল করতেন রাজিব-সমর।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, সাভারে রাজীব রীতিমতো পরিণত হয়েছে আরেক এরশাদ শিকদারে। একাধিক হত্যাকাণ্ডে নাম আসা এই রাজীবের রয়েছে এরশাদ শিকদারের স্বর্ণকমলের মতো প্রাসাদ, যার না ‘রাজ প্যালেস’। যেখানে প্রবেশ করা কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ওই প্রাসাদ প্যালেসে প্রবেশের জন্য অতিক্রম করতে হয় বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা জোন। কেউ রাজীবের কথার বাইরে গেলেই তাকে রাজ প্যালেসে নিয়ে চালানো হয় নির্যাতন।

স্থানীয়রা বলছেন, পোশাকের মতোই রাজীব গাড়ি পরিবর্তন করেন। বর্তমানে ব্যবহার করছেন মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের কালো জিপ। তবে বাসার সামনে সবসময় পার্কিং থাকে বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ ছাড়াও অফিস কিংবা রাজীবের চলাফেরার সময় পাহারায় থাকে গাড়িবহর। পরিবারের সদস্যরাও আলাদা আলাদা গাড়ি ব্যবহার করেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জমি দখলেও সিদ্ধহস্ত এই রাজীব। সাধারণ মানুষের জমি থেকে শুরু করে সরকারি জমি যেখানে নজর পড়ে সেখানেই থাবা বসান তিনি। বাদ যায়নি অধর চন্দ্র স্কুলের হোস্টেলের জমিও। অভিযোগ রয়েছে সাভার পৌর এলাকার সনাতন বৌনাপাড়ায় হিন্দুদের ৩০ বিঘায় জমি দখল করেছে রাজীব বাহিনী। সেখানে বাড়িও তৈরি করেছেন তিনি। এ ছাড়া ২০১২ সালে অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া হলমার্ক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক থেকে রাতের আঁধারে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিক্রি করেছে রাজীব বাহিনী। হলমার্কের ভেতরে থাকা ব্যক্তি মালিকানার জমি দখল করে রাজীব গড়ে তুলেছেন বিশাল গরুর ফার্ম। পুরো হলমার্ক এখন রাজীবের দখলে। কিছুদিন আগে ২০ লাখ টাকা জামানত নিয়ে সিংগাইর ব্রিজের পূর্বপাশে হলমার্কের একটি ভবন রেস্টুরেন্ট হিসেবে ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি। পরে সমালোচনার মুখে হলমার্ক কর্তৃপক্ষকে ওই জায়গার ভাড়া বুঝিয়ে দেন। এ ছাড়া বংশী নদীর জমি দখল করে গড়ে তুলেছেন রাজ রিয়েল এস্টেট। বিভিন্ন সময় নদী রক্ষা কমিশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড আপত্তি জানালেও প্রকল্পের নামে জমি দখল বাড়িয়েই চলেছেন রাজীব।

শুধু জমি দখল বা আর্থিক অনিয়মই নয়, বিভিন্ন পর্যায়ের নেত্রীদের জিম্মি করে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগও রয়েছে রাজীবের বিরুদ্ধে। কয়েক বছর আগে এ ধরনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ছাড়া গরু চুরি করে আলোচিত নেত্রী বাবলির সঙ্গেও বেশ সখ্য রয়েছে রাজীবের।

সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, আশির দশকে ছাত্রদল নেতা চঞ্চল হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটে রাজীবের। এরপর ১৯৯৬ সালে দিনদুপুরে সাভার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবদল নেতা মজনুকে। ১৯৯৮ সালে চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় খন্দকার জেনারেল স্টোরের সামনে হত্যা করা হয় তেল ব্যবসায়ী সাইদুর রহমানকে। ২০০২ সালে সাভারের ঘোষপাড়া এলাকায় হানিফ হত্যাকাণ্ড, এরপর পৌরসভার আড়াপাড়া মহল্লায় ছাত্রদল কর্মী বাবুকে হত্যা করে রাজীব। সর্বশেষ ২০১১ সালে হেমায়েতপুরের দক্ষিণ শ্যামপুর গোলাপখালী পুকুরপাড়ে রাজীব ও তার ছোট ভাই সমর প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন কুয়েতপ্রবাসী এখলাসকে। এসব ঘটনায় অনেকেই রাজীবের বিরুদ্ধে মামলা করতে পর্যন্ত সাহস পাননি। দু-একজন মামলা করলেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে সবগুলো থেকে খালাস পেয়ে যান রাজীব ও তার লোকজন। এর আগে ১৯৯৫ সালে আড়াপাড়া এলাকায় টং দোকানে অস্ত্র রাখার দায়ে রাজীবকে গাড়ির পেছনে বেঁধে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় রাজীবের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দায়ের করা হলেও পরবর্তী সময়ে ওই মামলাটিও রাজনৈতিক মামলা হিসেবে দেখানো হয়।

পুলিশকে নাজেহাল ও তাদের সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে সাভার থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। এর পর দুই বছর কিছুটা ব্যাকফুটে থাকলেও ফের উত্থান ঘটে ২০১৩ সালে। ওই বছরে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র করে বেকায়দায় পড়েন সাভারের তৎকালীন সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মালিক ডা. এনামুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই তার ঘনিষ্ঠজন বনে যান রাজীব ও সমর। এরপর থেকেই শুরু হয় তাদের নানামুখী অনৈতিক কর্মকাণ্ড। জোর করে অসহায় মানুষের জমি দখল, সরকারি জমি দখল, ঝুট ব্যবসা, বংশী নদীর পাড় দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যায় রাজীব পরিবার।

২০১৫ সালে বাগিয়ে নেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দারকে হটিয়ে এই পদে আসীন হন মঞ্জুরুল আলম রাজীব। একই বছর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন উপজেলা চেয়ারম্যান।

জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার গণমাধ্যমে বলেন, ‘অপকর্ম দেখতে দেখতে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। বয়স হয়েছে, এখন দূরেই থাকতে চাই। এসব বিষয়ে আর কথা বলতে চাই না।’

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে আমাকে পদ দিতে চেয়ে পদ দেয়নি। মোটা অঙ্কের টাকায় পদ-পদবি বিক্রি করে দিয়েছে। গত ১০ বছরে দলীয় কর্মসূচিতে মঞ্চে জায়গা দেওয়া হয়নি। দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী নেতাকর্মী, আজ তারা অবহেলিত।’

তিনি বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, আবার তারই আপন ছোট ভাই ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরকে করা হয়েছে একই কমিটির ২নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রাজীব পরিবারের ঘনিষ্ঠ সাভার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেনকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও কমিটির সহসভাপতি রেহেনা রহমানের পরিবারেরই ৬ জন রয়েছেন এ কমিটিতে। দলীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় এ কমিটিকে সাজানো হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, সাভারে একচ্ছত্র সাম্রাজ্য ধরে রাখতে বিভিন্ন পর্যায়ে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন রাজীব ও সমর। তাদের মধ্যে রয়েছেন তাদের কথিত ভাগনে জাকির হোসেন ওরফে মামা জাকির। তিনি রাজীবের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখভাল করেন। এ ছাড়াও সাভার এলাকায় নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়তে চাইলে মামা জাকিরের মধ্যস্থতায় অনুমতি দেন রাজীব। অবৈধ সবকিছুই থাকে জাকিরের হেফাজতে। তিনি সাভারে ‘জাতীয় মামা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

রাজীব-সমরের মামা নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাভার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বানানো হয়েছে। তিনি পৌরসভার প্যানেল মেয়র। আগামীতে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। সাভারের ঐতিহ্যবাহী হিন্দু জমিদার বাড়ি দখল করে নিজের বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করছেন এই মানিক।

রাজীবের ‘মাইম্যান’ খ্যাত সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক শত কোটিরও বেশি টাকার মালিক। বছর দশেক আগেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। নানা ধরনের ছোট ছোট কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে সেই আতিক রাজীবের সংস্পর্শে এসে যেন পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। ২০১৫ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বদলে যায় তার জীবনাচার। ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ডিশ ব্যবসার দখল নেওয়ার মধ্য দিয়ে আতিকের অপকর্মের যাত্রা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে টেন্ডারবাজি, পরিবহন খাতের চাঁদার নিয়ন্ত্রণ, সরকারি-ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল, ঝুট ও বালুর ব্যবসায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ আতিকের। বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করতে প্রকাশ্যে মারামারি ও হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ে। এসব অপকর্ম করে আতিক বর্তমানে বাড়ি-গাড়িসহ কোটি কোটি টাকার মালিক। নিরাপত্তার স্বার্থে আতিক আগ্নেয়াস্ত্রের আবেদন করলে বিষয়টি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আলোড়ন সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে । সাভারের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি বাড়ি। রয়েছে দামি গাড়ির সংগ্রহশালা।

রাজীবের শ্যালক সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রুবেল। তার দায়িত্ব ঝুট ব্যবসা এবং বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে কমিশন আদায়। সাভার পৌর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মাসুম দেওয়ানের দায়িত্ব ফুটপাত দখল ও চাঁদাবাজি। এর বাইরেও একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান ও ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে রাজীব তার আধিপত্য বিরাজমান রেখেছেন।

সাভারের এক যুবলীগ নেতা জানান, রাজীবের ইশারায় সিনিয়র অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে ডিঙিয়ে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেওয়ার পর অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠে বহিষ্কৃত নেতা মাসুম দেওয়ান। তার বিরুদ্ধে নিজ নামে পৌরসভার একাধিক কুলিবিট ও বাজারের টেন্ডার জোরপূর্বক বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব টেন্ডার পাওয়ার পর পুরো সাভার পৌর এলাকার মহাসড়কের পাশে ফুটপাত দখল করে হকার বসিয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতো সে। সাভারের আনন্দপুরে চাঁদার ১০ লাখ টাকা না দেওয়ায় একটি কারখানার মালিকসহ প্রায় পাঁচজনকে বেধড়ক মারধর করে মারাত্মক আহত করেন মাসুম দেওয়ান ও তার বাহিনী। পরে কারখানার ক্যাশ বাক্স থেকে ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা লুট করে নেয় তারা।

সাভারের এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দুবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ফখরুল আলম সমর। জমি দখলে তার রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। জমি দখল করতে গিয়ে মানুষ হত্যার উদাহরণও রয়েছে। নিজেকে আড়ালে রাখতে বিভিন্ন সময়ে অসুস্থতা দেখিয়ে শ্যামপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কাজলকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে নানা অপকর্ম করান সমর।

তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে সমরের বিরুদ্ধে যারাই প্রার্থী হন, তাদের পড়তে হয় নানা হুমকির মুখে। রাজীব-সমর দুই ভাই উপস্থিত থেকে তাদের পেটুয়া বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ওই প্রার্থীদের বাড়ি গিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন শিল্পকারখানা থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে সমর বাহিনীর লোকজন। বাদ যান না ফুটপাতের হকাররাও। তাদের কাছ থেকেও নিয়মিত নেওয়া হয় চাঁদা। তবে নিজে উপস্থিত না থেকে তার বাহিনীর নির্দিষ্ট কিছু লোকজনের মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ড চালান সমর।

এতসব অপকর্মের পরও রাজীবের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারের কথা ভাবতে পর্যন্ত পারেন না স্থানীয় সাংবাদিকরা। ২০২২ সালের মে মাসে তিন সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দেন রাজীব। তারা হলেন যুগান্তরের সাভার প্রতিনিধি মতিউর রহমান ভান্ডারী, এনটিভির সাভার বিশেষ প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান ও বাংলা ট্রিবিউনের সাভার প্রতিনিধি নাদিম হোসেন। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদে বসে প্রকাশ্যে যুগান্তরের সাংবাদিকের হাতুড়িপেটা করার হুমকি দেন রাজীব। গত বছরের জানুয়ারিতে একাত্তর টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি আশরাফ সিজেলের ওপর হামলা ও তাকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে রাজীবের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় রাজীবসহ চারজনের নামে থানায় অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। এ ছাড়া সংবাদ প্রকাশের জেরে উপজেলা চত্বরে সোহেল রানা নামে দৈনিক দ্বিতীয়বার পত্রিকার এক সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করেছে রাজীব বাহিনী। সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনায় থানায় মামলা, এমনকি বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকদের দাওয়াত দিয়ে এনে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে রাজীবের ভাই সমরের বিরুদ্ধে।

এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা গণমাধ্যমে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। সাভারে অন্য যারা আছে, সবাই একই কাজ করে। এই জমি দখল, ঝুটের ব্যবসা এগুলো তো করেই। আমার কারও বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই। সাভারে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি কোনো ফুটপাত দখল, চাঁদাবাজি করতে দেবেন না। কোনো জমি দখলবাজ রাখবেন না। এমপির এ ঘোষণায় খুশি হয়েছি। তিনি কী করেন তা দেখতে হবে।’

উল্লেখ্য বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাভার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি গার্মেন্টেসের কোনো ঝুট ব্যবসা করি না।’

জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন।’

তেঁতুলঝোড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও গণমাধ্যমের কর্মীরা তাকে পায়নি।

ঢাকা-১৯ আসনে দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সামনে আবার উপজেলা নির্বাচন। এ বিষয়ে আমার মন্তব্য না করাই ভালো।’

আরেক সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং (মুরাদ) ওরফে মুরাদ জং বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করলে তারা মনে করতে পারেন, আমি রাগ-ক্ষোভের বশে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি। এ বিষয়টা আমার সঙ্গে যায় না। সাভার, আশুলিয়া আওয়ামী লীগের দুর্গ ছিল। ২০০৮ সালে আমি ২ লাখ ৮২ হাজার ভোট পেয়েছিলাম, নৌকার সেই ভোট এখন কোথায়? এদের কারণেই শেষ।’

জানতে চাইলে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ বলেন, ‘এসব বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। গত সপ্তাহেও আমরা জেলা কমিটির সভা করেছি, সেখানেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেননি।

আমাদের প্রকাশিত তথ্য ও সংবাদ আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)

Design by Raytahost.com