নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)এর আওতাধীন উপজেলার একাধিক সড়কে চলমান কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সড়ক সংস্কারের নামে ব্যবহার করা হচ্ছে ইট ও খোয়াসহ নিম্নমানের সামগ্রী। কাজ হচ্ছে না নিয়ম অনুযায়ী। বালুর পরিবর্তে মাটি, নিম্নমানের পুরোনো ইটের খোয়া ও তার অবশিষ্ট অংশের ধুলোবালি দিয়ে কাজ হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কের কাজ তদারকিতে উপজেলা ও জেলা এলজিইডির কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও স্বজনপ্রীতি থাকায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এভাবেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে।
জানা গেছে, প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ধল্লা পুলিশ ফাঁড়ির দক্ষিণ পাশের ব্রিজ জামির্ত্তা-বকচর খামার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। মেসার্স নির্মাণ প্রকৌশলী নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আবু সাইদ খান কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যেভাবে কাজ হচ্ছে, অল্পদিনেই কার্পেটিং উঠে রাস্তা ভেঙে খানাখন্দ তৈরি ও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
এলজিইডি অফিসের কার্য সহকারী এনামুল হকের সামনেই সিডিউলের বাইরে এ অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে। নিম্নমানের ইটের খোয়া নিয়ে এলাকাবাসীর চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিন্নাডাঙ্গির আশরাফ হোসেন বলেন, একেবারেই নিম্নমানের ইট ও খোয়া দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সব হচ্ছে নিয়মের বাইরে। সড়ক যে পরিমাণে পুরু হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। তাছাড়া কাজে সিলিকেট বালু দেওয়ার কথা থাকলেও তা ব্যবহার হচ্ছে না। ইউপি সদস্য আব্বাস উদ্দিন বলেন, নিম্নমানের ইট ব্যবহারে বাধা দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বরং সেই ইট দিয়েই এখন কাজ হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমি শুনেছি রাস্তার কাজে নিম্নমানের ইট ও খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। যে করেই হোক এটা করতে দেওয়া হবে না।
ঐ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীন গোলাইডাঙ্গা থেকে বড় কালিয়াকৈর বাজার পর্যন্ত পাকাকরণের কাজের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। ৩ কোটি টাকা বরাদ্দের পাঁচ কিলোমিটারের এ সড়কের দেখভাল করছেন এলজিইডি অফিসের আব্দুল মালেক। তিনি একজন সার্ভেয়ার বটে। তাকে সুপারভিশন অফিসার করার ক্ষেত্রেও জনগণের প্রশ্ন। তবে তিনি সার্ভেয়ার হলেও নিজেকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পরিচয় দিয়ে থাকেন। এছাড়া স্কিম তথ্য বোর্ডেও তার পদবি লেখা হয়েছে উপসহকারী প্রকৌশলী।
স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, নিম্নমানের ইট ও পোড়ামাটির খোয়া দিয়ে কাজ হওয়ায় এলাকাবাসীর বাধার মুখে তা নিয়ে যায়; কিন্তু পরবর্তীকালে বাধা অমান্য করে একইভাবে কাজ করা হচ্ছে। এদিকে সাহরাইল-মানিকনগর সড়কের কাজেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর বর্তমানে কাজ চলমান থাকলেও একেবারেই ঢিমেতালে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীসাধারণ। প্রায় ১৩ কোটি টাকার ঐ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সোনার বাংলা কন্সট্রাকশন। এ সড়কের কাজের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান। নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, জামির্ত্তার সড়কের কাজে প্রথমে অনিয়ম ছিল, পরবর্তী সময়ে তিনি জানার পর নিয়মের মধ্যেই হচ্ছে। এছাড়া গোলাইডাঙ্গা-কালিয়াকৈর সড়কে অনিয়ম থাকায় ঠিকাদারকে শোকজ করা হয়েছিল। নিম্নমানের ইট-খোয়াও ফেরত দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে ঠিকমতোই কাজ হচ্ছে। সাহরাইল-মানিকনগর সড়কের কাজও ভালো হচ্ছে। এছাড়া ঠিকাদার ভুল করে সার্ভেয়ার মালেককে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনে করে স্কিম তথ্য বোর্ডে লিখছেন বলে তার দাবি। তবে সার্ভেয়ারের কাজ দেখভালের অধিকার আছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply