অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে বিতরণ কোম্পানিগুলোসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু অবৈধ গ্যাস-সংযোগের সংখ্যা কমছেই না।যারফলে বন্ধ বা নির্মূল হচ্ছে না অবৈধ গ্যাস সংযোগ। উচ্ছেদ-হওয়া অবৈধ লাইন পুনরায় নিয়মবহির্ভূতভাবে সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে অনেক এলাকায়, অন্যদিকে নতুন অবৈধ সংযোগও দেওয়া হচ্ছে হরহামেশা। এমন অবস্থায় আবাসিক খাতে বা গৃহস্থালিতে সীমিত আকারে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো।
গ্যাস খাতের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নাগরিক চাহিদা বিশ্লেষণ এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে দেখেছি- বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ, যে ভবনগুলোতে আগেই সংযোগ রয়েছে সেগুলোর তলা (ফ্লোর) বৃদ্ধি পেলে ভবনমালিকদের বড় অংশ অবৈধ সংযোগ নেয়। এক্ষেত্রে বিতরণ কোম্পানির স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অনেক সময় অন্যায় সহযোগিতা করে। প্রধান কার্যালয়ের অনেক কর্মকর্তারও এতে সায় থাকে। আবার প্রভাবশালীদের তদবিরে ও দাপটেও অনেক সময় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা যায় না। নতুন এলাকায় বা ভবনে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বন্ধ বা বিচ্ছিন্ন করা কিছুটা সহজ। কিন্তু সংযোগ থাকা বিদ্যমান ভবনে তা কঠিন। তাই যে ভবনগুলোতে তিতাসের সংযোগ রয়েছে সেগুলোর ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ হলে নতুন সংযোগ দিতে সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেক নতুন-পুরনো ভবনে গ্যাস কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে অগণিত অবৈধ সংযোগ দিয়েছে একাধিক দুষ্টচক্র। সেগুলোকে বৈধ করতে তাদের গ্রাহকদের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে। সেই চাপ সরাতে এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী ভবনের সম্প্রসারিত অংশে গ্যাস-সংযোগ দিতে প্রস্তাবনা নিয়ে এসেছে। তবে আবাসিকে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বাস্তবায়ন করে নতুন গ্যাস-সংযোগ দেওয়া গেলে তা মন্দ হবে না। গ্যাসের চুরি ও অপচয় অন্তত রোধ করা যাবে। আর সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
তিতাস গ্যাস সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে ৮ লাখ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিতাস গত দুই বছরে ৩৩৬টি শিল্প, ৪৭৫টি বাণিজ্যিক, ৯৭টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ১৩টি সিএনজি স্টেশন এবং ৯৮৯ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন লাইন অপসারণ করেছে। মোট ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭০টি গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আবার অনেক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে মারধরের শিকার এবং ধাওয়া খাওয়ার ঘটনাও রয়েছে।
গত ২৫ এপ্রিল কাওরানবাজারে তিতাস কার্যালয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, তিতাসের কর্মকর্তারা আগে থেকেই যে সব গ্রাহকদের অনুমোদিত গ্যাস-সংযোগ রয়েছে তাদের চুলা বা বার্নার বৃদ্ধির অনুমোদন যাতে দেওয়া হয় সেই প্রস্তাব করেন ঐ বৈঠকে। তারা বলেন, ঢাকার অধিকাংশ বাড়িতে অনুমোদনহীন চুলা রয়েছে। প্রভাব খাটিয়ে বা ঘুষ দিয়ে অনুমোদনহীন সংযোগ নেওয়াদের মধ্যে সব শ্রেণি-পেশার মানুষই রয়েছেন। তাই সংযোগ থাকা যে ভবনগুলোতে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ হয়েছে সেগুলোতে বৈধ সংযোগ দেওয়া গেলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে প্রতিমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। এ প্রস্তাব গুরুত্বসহ বিবেচনা করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবনাটি উপস্থাপন করা হবে। তিনি অনুমোদন দিলে সেটি অনুমোদিত হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply