আনোয়ার হোসেন নিজস্বপ্রতিনিধিঃ যশোর জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে অংশীজনদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।গতকাল বুধবার (২৪ই জুলাই) দুপুর ১২টার সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার।
সভায় বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা দিতে গিয়ে বক্তারা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে স্বাধীনতার শত্রুরা অনুপ্রবেশ করে রাষ্ট্রের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তা কখনোই ছাত্রদের পক্ষে সম্ভব না। এর জন্য আসল অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
বৃহত যশোরের মুজিব বাহিনীর উপপ্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম বলেন, যশোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও সার্বিক সমন্বয়ের কারণে কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে সারা দেশে যে ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে তা যশোর জেলায় হতে পারতো। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে ভেবে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। এই ঘটনার পেছনে ইন্ধন দাতা কারা, সেইটি অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে বারবার এমন ঘটনা ঘটতে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, নরসিংদীতে যারা জেলখানায় হামলা চালিয়েছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থী হতে পারে না। যারা এই কর্মকরমের সাথে জড়িত তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রদের আন্দোলনকে কাজে লাগিয়েছে। তাই দেশের গোয়েন্দা বিভাগকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান।
দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক ও যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। তাদের শক্তহাতে দমন করতে না পারলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ পথ হারিয়ে ফেলবে।
তিনি আরও বলেন, একাত্তরে যেমন আমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। প্রয়োজনে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধ করবো।
প্রেসক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান বলেন, যশোর বড় ধরণের কোন সহিংসতা না ঘটলেও আমরা দেখেছি ছাত্রদের মাঝে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারাই পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপর চড়াও হয়েছে। শান্ত যশোরকে যারা অশান্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এছাড়াও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল, বেনাপোল পোর্ট এলাকায় কারফিউমুক্ত ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া, কারফিউ চলাকালীন রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দেয়ার জন্য আহ্বান জানান যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে যতদিন পর্যন্ত যশোর সহ সারাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় ততদিন পর্যন্ত বেনাপোল পোর্ট এলাকায় গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন।
সভায় যশোরের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে ৪৯ বিজিবির অধিনায়ক মেজর সাঈদুল্লাহ সিদ্দীকী বলেন, যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা আশা করছি অচিরেই জনজীবন আরো স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী নেতা, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, শ্রমজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমান পরিস্থিতি এবং আগামী দিনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।
পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, রাষ্ট্রকে কেউ হুমকি দিলে কোনও ছাড় দেবো না। সরকারের বিরুদ্ধে যে কেউ আন্দোলন করতে পারে। কিন্তু যারা রাষ্ট্রের সম্পদ ক্ষতি করতে চায়, তারা দেশের শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ বাহিনী প্রথম বুলেট ছুড়েছে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, পুলিশ বাহিনী পথ হারাবে না। পুলিশ বাহিনী গর্বিত সদস্য হিসেবে দেশের কল্যাণে কাজ করবো।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে যশোরে নাশকতা হয়নি। পুলিশ বাহিনী ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা কোন সহিংসতা ছাড়াই চলমান পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করেছি। একই সাথে জেলায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় যশোরে পুলিশের টহল এবং চেকপোস্ট আরও বাড়ানো হবে। একইসাথে কারফিউ চলাকালীন বিনাপ্রয়োজনে ঘর থেকে সাধারণ মানুষকে বের না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এসময় গণমাধ্যমকর্মীসহ সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতা ছাড়া এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে পরিপূর্ণ স্বাভাবিক হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। ইতিমধ্যে দেশের অধিকাংশ জেলায় ইন্টারনেট সেবা সচল হয়েছে। দ্রুত ই স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসছে যশোর। এমন আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মর্জিনা আক্তার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি মেজর সঞ্চায়ন, র্যাব যশোরের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাকিব হোসেন, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।
এদিকে যশোর সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকার ফলে শহরে জনসাধারণ মানুষের আনাগোনা ছিল বেশি। জরুরি সেবার পাশাপাশি খোলা ছিলো অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বুধবার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা খুব বেশি দেখা না গেলেও সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত অবধি কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply