আনোয়ার হোসেন নিজস্বপ্রতিনিধিঃ বেনাপোল স্থলবন্দরের দুই উপপরিচালককে বরখাস্ত করা হয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দপ্তরের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার প্রভৃতি কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা সহ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি কয়েক দিন পর গত সোমবার জানাজানি হয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ওজনে ডিজিটাল কারসাজি করে শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই আমদানিকারকদের পণ্য আনার সুযোগ করে কোটি কোটি টাকা কামাই করেছেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃমনিরুল ইসলাম এবং উপ-পরিচালক মোঃকবির খান গং।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা, মনিরুল ইসলাম ছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন- মর্মে তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ে তিনি লাগামহীন দুর্নীতি করে বারবার পার পেয়ে গেছে। তার অত্যাচারে অফিসের সবাই তটস্থ থাকতেন।
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, মোঃ মনিরুল ইসলাম ২০২২ সালের ১লা অক্টোবর বেনাপোল স্থলবন্দরে যোগ দেন। সেই সময় থেকেই তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানিকৃত প্যারিশেবল (পচনশীল) পণ্য ওজনের ডিজিটাল কারচুপি শুরু করেন। ভারত থেকে সেই সময় প্রতিদিন গড়ে একশ থেকে দেড়শ ট্রাক পচনশীল পণ্য যেমন মাছ, ফল, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, টমেটো, আলু ইত্যাদি আসত।
কাস্টমসের কতিপয় কর্মকর্তা ও কতিপয় অসাধু সি এন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীর যোগ সাজশে ওজন স্কেলে ডিজিটালি কারচুপি করতেন এই (ওজন মাপার স্কেলের সফটওয়্যারের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে) প্রতি ট্রাকে প্রতিদিন দুই থেকে তিন টন পণ্যের ওজন কম দেখিয়ে।
প্রতি টন পণ্যের শুল্কায়ন ৮০ থেকে এক লাখ টাকা। সেই হিসেবে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিতেন ওই চক্র। আর ফাঁকি দেওয়া সেই রাজস্ব তিন টি জায়গায় আনুপাতিক হারে বণ্টনকরা হতো। এভাবে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই অসাধু চক্র।
সূত্রে জানা, মোঃ মনিরুল ইসলাম বেনাপোল থেকে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া টাকার একটি অংশ পৌঁছে দিতেন উপ-পরিচালক কবির খানের কাছে। তাদের যোগসাজশে এই চক্র ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলো; কিন্তু তাদের সেই অপকর্ম প্রকাশ হয়ে পড়লে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয় সংশ্লিষ্ট দফতর।
গত ২১ আগস্ট বাংলাদেশ স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয়, ওজন মাপা স্কেলে কারচুপির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, দুর্নীতি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে গ্রুপিং, অফিসিয়াল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার ইত্যাদির কারণে উপপরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ মনিরুল ইসলাম এবং উপপরিচালক (প্লানিং) মোঃ কবির খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তাদের দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সবার উচিত বেনাপোল বাংলাদেশ স্থলবন্দর কে বাঁচানোর জন্য সবাই এগিয়ে আসতে হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply