আনোয়ার হোসেন নিজস্বপ্রতিনিধিঃ গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ই সেপ্টেম্বর) সকালে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ এর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে নূর মোহাম্মদ নগরে কোরআনখানি, শোভাযাত্রা, স্মৃতিসৌধে গার্ড অব অনার, পুষ্পস্তবক অর্পণ দোয়াও মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্মৃতি যাদুঘরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্টের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এম এম আরাফাত হোসেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) দোলন মিয়া প্রমুখ। এসময় বক্তারা বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ নড়াইল জেলার গর্ব।
মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামেঃ পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন এই বীর যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
পরিবারসহ তার জীবনাদর্শ থেকে জানা যায়, নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলা সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষ খোলা গ্রামেঃ জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ মা জেন্নাতুন্নেছা মতান্তরে জেন্নাতা খানম। বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারায়ে তিনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তবে এ বিষয়েও মতান্তর রয়েছে।
এই বীরের সম্মানে ২০০৮ সালের ১৮ই মার্চ মহিষখোলার নাম পরিবর্তন করে নূর মোহাম্মদ নগর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী নূর মোহাম্মদনগরের উদ্বোধন করেন।
তারপরহতে উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যায় নূর মোহাম্মদ নগর। তার স্মৃতিরক্ষার্থে নূর মোহাম্মদ নগরে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’, স্মৃতিস্তম্ভ এবং স্কুল ও কলেজ। এছাড়া নড়াইলজেলা শহরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্টেডিয়াম এবং নড়াইল ও যশোর জেলা শহরে সন্তানদের জন্য বাড়ি।
২০১৮ সালের ২১শে নভেম্বর নূর মোহাম্মদ শেখের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা (৮০) বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। নূর মোহাম্মদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে নড়াইল এবং যশোর শহরে বসবাস করেন।
নূর মোহাম্মদের কর্মময় জীবন থেকে জানা যায়, ১৯৫৯ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন তিনি। বর্তমানে ‘বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ’ (বিজিবি) হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত। এই বাহিনীতে দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করার পরে ১৯৭০ সালের ১০ই জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন তিনি। পরবর্তীকালে ল্যান্স নায়েকে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এস এ মঞ্জর। নূর মোহাম্মদ যশোর জেলার শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ শত্রুমুক্ত করেন।
বীরশ্রেষ্ঠদের বীরত্বে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধে মৃত্যু বরণ করেন এই বীর যোদ্ধা। যশোর জেলার শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামেঃতাকে সমাহিত করা হয়।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply