নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) রবিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫ম সমাবর্তন। সমাবর্তনে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমি তোমাদের গুরুজন হিসেবে বলতে চাই, উচ্চশিক্ষা শেষে শুধু একটা ভালো চাকরি পাওয়াই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজে শিক্ষিত হওয়া, অন্যকে শিক্ষিত করা এবং বৃহৎ মানবতার কল্যাণ করা। তাই তোমরা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মানবসত্ত্বা দিয়ে দেশকে আলোকিত করবে, বিশ্বকেও সে আলোর আভায় রাঙিয়ে তুলবে।
আজ রবিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি হিসেবে লিখিত বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি ও আচার্য এসব কথা বলেন। এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৭০ জন পিএইচডি গবেষক ও ২০০৯-১০ থেকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ছয়টি বর্ষের দুই হাজার ৫১৬ জন গ্রাজুয়েটের ডিগ্রি ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াটেক অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ প্রকৌশলী সৃষ্টির বিকল্প নেই। বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে দেশ যত বেশি উন্নত, সে দেশ তত বেশি সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমাদের বিপুল পরিমানে মানব সম্পদ থাকা সত্ত্বেও কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ায় আমরা আশানুরূপভাবে এগুতে পারিনি। বর্তমানে সরকার কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন । বিশ্ববিদ্যালগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান সুবিধাসমূহের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুণগত উচ্চশিক্ষা প্রদানে ব্রতী হবে বলে আমার বিশ্বাস।
লিখিত বক্তব্যের বাইরে রাষ্ট্রপতি খাদ্যে ভেজালের ভয়াবহতার বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, কচু ছাড়া সব কিছুতেই ফরমালিন, নির্ভেজাল খাবার দুঃস্প্রাপ্য হয়ে গেছে। খাদ্য ভেজালের কারণে ক্যান্সারসহ জটিল রোগ হচ্ছে। দেশের মানুষই দানব হয়ে যাচ্ছে। এ পথ থেকে তাদের ফেরাতে হবে। নইলে জাতি হিসেবে আমরা পঙ্গু হয়ে যাবো। শুধু পকেট মারলেই গণপিটুনি হয়, এ ধরনের মানুষকেও গণপিটুনি দিতে হবে।
এদিকে, সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গ্রাজুয়েটদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সমাবর্তনে অংশ নিতে গত শনিবার থেকেই গ্রাজুয়েটরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন। আজ সকালেও আসেন অনেকে। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। গ্রাজুয়েটদের অনেকেই ক্যাম্পাসে এসেই নিজ নিজ বিভাগের শিক্ষক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিভাগের বড় ভাইদের পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাস জীবনের বন্ধুদের পেয়ে গ্রাজুয়েটরাও হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন। কেউ সেলফি, কেউ আবার গান গেয়ে পুরোনো স্মৃতিকে আরেকবার বর্তমানে আনার চেষ্টা করেন।
শহীদ মিনারের সামনে বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলছিলেন রায়হান নামের এক গ্রাজুয়েট। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে এসে খুবই ভালো লাগছে। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়েছে। পুরোনো দিনগুলো খুব মিস করি।’ সব মিলিয়ে আজ ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
দুপুর আড়াইটায় সমাবর্তন শোভাযাত্রা সহকারে রাষ্ট্রপতি সমাবর্তনের অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। সেখানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠের পর রাষ্ট্রপতি সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও সমাবর্তন বক্তাকে সমাবর্তন স্মারক প্রদান করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার পর রাষ্ট্রপতি সমাবর্তনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম সেখ। এ সময় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুস সোবহান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন মাতিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply