নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শরীয়তপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)‘র কার্যালয়ের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা পরিশোধ না করলে গ্রাহকদের হয়রানি করা হয়। এতেকরে বিআরটিএ কার্যালয়ে সেবা নিতে গ্রাহকরা পড়ছেন সীমাহীন ভোগান্তির সম্মুখে। এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। সম্প্রতি শরীয়তপুর বিআরটিএ’র সিল মেকানিক নজরুল ইসলাম অফিস কক্ষে বসে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করছেন এমন একটি ভিডিও গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে আসে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এক গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন নজরুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচ তলায় বিআরটিএ কার্যালয়টি অবস্থিত। ওই কার্যালয় থেকে গ্রাহকরা যানবাহন ও মোটরসাইকেল নিবন্ধন, যানবাহনের রুট পারমিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের সেবা নেন। গত ছয় মাসে শরীয়তপুর কার্যালয় থেকে এক হাজার দুইশত পঁচিশ টি মোটরযানের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে, আর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন এক হাজার একশত ত্রিশ জন। ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফি ৫১৮/- টাকা, লাইসেন্স ফি ২৬০০/- টাকা। আর মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি ১২০০০/- হতে ১৫০০০/- টাকা। কিন্তু বিআরটিএ’র কর্মচারীরা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ৬০০০/- থেকে ৮০০০/-টাকা আর মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য ৩০০০/- থেকে ৫০০০/- টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছেন। আমাদের প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুর বিআরটিএতে মাস্টার রোলে চাকরি করছেন সিল মেকানিক নজরুল ইসলাম ও কর্মচারী রাজিব সিকদার। তাদের দুইজনের বিরুদ্ধেই ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। তথ্য সূত্রে জানা যায় যে শরীয়তপুরের আংগারিয়া এলাকার বাসিন্দা কাজী মনিরুজ্জামান একটি বেসরকারি টেলিভিশনের স্থানীয় প্রতিনিধি। শরীয়তপুরে বাজাজ সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি গত নভেম্বরে ১১০ সিসির একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করেন। ওই মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি তার কাছে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা দাবি করে। তিনি অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন সরকারি ফি ১২০৮৬/- টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে বিআরটিএ কার্যালয়ে যান। কিন্তু বিআরটিএ কার্যালয়ে তার মোটরসাইকেল নিবন্ধনের কাগজপত্র না রেখে ফিরিয়ে দেয়। গত এক মাসে তিনি চার দফা ওই কাগজ নিয়ে বিআরটিএ ও মোটরসাইকেল বিক্রয় প্রতিষ্ঠানে যান। কেউ তার কাগজ জমা রাখেননি। কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, দুই বছর আগে আমার একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। পুলিশ এখনও সেটি উদ্ধার করতে পারেনি। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আবার মোটরসাইকেল কিনতে হয়েছে। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। গাড়ি নিবন্ধনের অতিরিক্ত টাকা কোথা থেকে দেব। সরকার নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ঘুরছি। কিন্তু নিবন্ধন করার কাগজ জমা নিচ্ছে না। শরীয়তপুরের বাজাজ সেন্টারের মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, বিআরটিএ গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কিছু খরচ নেয়। কিন্তু আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো টাকা নিচ্ছি না। কাজী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কী হয়েছে তা আমার জানা নেই। শরীয়তপুর পৌরসভার আটং এলাকার বাসিন্দা বজলুর রহমান ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য গত মার্চ মাসে বিআরটিএ কার্যালয়ে যান। ওই কার্যালয়ের সিল মেকানিক নজরুল ইসলাম তার কাছ থেকে আট হাজার টাকা আদায় করেন। বজলুর রহমান বলেন, সরকার নির্ধারিত টাকা নিয়ে এক মাস যাবৎ ঘুরছি। কেউ আমার আবেদন ফরম নেয়নি। অতিরিক্ত টাকা দেয়ার পর ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাগজপত্র ও আবেদন ফরম জমা রেখেছে। এ বিষয়ে সিল মেকানিক নজরুল ইসলাম অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। ঘুষের টাকা নেয়ার ভিডিও প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানি না, অফিসের স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠলে শরীয়তপুর বিআরটিএর কার্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয় কর্মচারী রাজিব সিকদারকে। ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ও কার্যালয় থেকে বের করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি রাজিব সিকদার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক কলেন, সরকারি ফি জমা দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিয়েছি। ব্যবহারিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে দুই বছর যাবৎ ঘুরছি, লাইসেন্স পাচ্ছি না। অথচ পরিচিত অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পাঁচ মাসের মধ্যে লাইসেন্স পেয়েছে। এভাবে সরকারি একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস চলতে পারে না। নিরাপদ সড়ক চাই শরীয়তপুর জেলা কমিটির সভাপতি মুরাদ হোসেন মুন্সী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবি প্রত্যেকটি মানুষের। আর সড়ক নিরাপদ রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে বিআরটিএ’র। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে অদক্ষ মানুষকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিচ্ছেন। আর তারা সড়কে গিয়ে মানুষ মারছে। ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ও গ্রাহকদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক জিএম নাদির হোসেন বলেন, আমি এ কার্যালয়ে নতুন এসেছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর কিছু অভিযোগ পেয়ে রাজিব নামে এক কর্মচারীকে অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। গ্রাহকরা যাতে হয়রানি না হয় সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুসস নিপ্র ১৫/০৪/১৯
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply