নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির একমাত্র সরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সংস্থাটি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রকল্প পরিদর্শন করে তার ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে সুপারিশ দিলেও মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো আমলে নিচ্ছে না।
এ প্রেক্ষাপটে আইএমইডি’র সুপারিশ মানার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আইএমইডি’র পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন ও সমাপ্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। মতামত ও সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ ও গৃহীত ব্যবস্থার বিষয়ে আইএমইডিকে জানাতে হবে।
সেই সঙ্গে আরও একটি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে এ সংক্রান্ত একটি সার-সংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্দেশ পাওয়ার পর ১৫ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে আইএমইডি।
প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের পর প্রকল্পের গুণগত মান বাড়বে বলে মনে করছেন পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন এবং বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে আইএমইডি’র সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ সাংবাদিকে বলেন, আইএমইডি থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।
তিনি এতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্য দিয়ে আইএমইডির দেয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালনে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো আন্তরিক হবে বলে আশা করছি। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অগ্রগতি যেমন বাড়বে, তেমনি প্রকল্পের মানসম্মত বাস্তবায়নও বৃদ্ধি পাবে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে পাঠানো চিঠিতে আইএমইডি বলেছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় শতভাগ মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন এবং সমাপ্ত প্রকল্পসমূহের প্রান্তিক মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়।
এছাড়া এ বিভাগের মতামত ও সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং প্রকল্প পরিচালককে যথারীতি জানানো হয়। এর পাশাপাশি প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতির মাসিক তথ্য অনলাইনে প্রাপ্তির জন্য প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (পিএমআইএস) সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে।
কিন্তু আইএমইডি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা মতামত বা সুপারিশের আলোকে কী ব্যবস্থা নেয়া নেয়া হয় সে সম্পর্কে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ বিভাগকে অবহিত করা হয় না। এডিপিভুক্ত সব প্রকল্প হতে প্রকল্পের মাসিক ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতির তথ্য পিএমআইএসে দেয়া হচ্ছে না।
এতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সমাপ্তি এবং প্রকল্পের গুণগত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা উভয়ই দুরূহ হয়ে পড়েছে। উপযুক্ত বিষয়াবলি প্রধানমন্ত্রীর সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনার জন্য সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অনুরোধ করা হল।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশ দুটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দেশনা হল- আইএমইডির প্রণীত পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন ও সমাপ্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রদত্ত মতামত বা সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ ও গৃহীত ব্যবস্থা আইএমইডিকে দ্রুততার সঙ্গে জানাতে হবে।
অপর নির্দেশটি হচ্ছে, এডিপিভুক্ত সব প্রকল্প হতে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (পিএমআইএস) প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতির মাসিক তথ্য নিয়মিতভাবে দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পর এখন বিষয়টি আর আইএমইডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না। এটি প্রতিপালন করা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়।
এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা না হলে এখন আইএমইডি শক্তভাবে বলতে পারবে। তাছাড়া পরবর্তীতে আবারও সার-সংক্ষেপ আকারে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতে পারবে। ফলে প্রধানমন্ত্রী নতুন নির্দেশ অথবা অ্যাকশন নেয়ারও নির্দেশ দিতে পরেন। এতে প্রকল্পের অগ্রগতি যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে মানও।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রকল্পের নানা রকম অনিয়ম অব্যবস্থাপনাসহ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়েই প্রশ্ন উত্থাপন করে আইএমইডি।
তাদের সুপারিশ যদি গ্রহণ করা না হয় তাহলে কেন নেয়া হয় না বা মেনে নিলেও কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এগুলো অবশ্যই অবহিত করে ব্যাখ্যা দেয়া উচিত। কিন্তু সেটি না করে যদি চুপচাপ উপেক্ষা করা হয়, তাহলে আইএমইডি থাকা না থাকা সমান হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এতে প্রকল্পের গুণগত মান বাড়বে এবং দ্রুত বাস্তবায়নও নিশ্চিত হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply