নিজস্ব প্রতিবেদকঃ এবারের ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের গোপনকক্ষের শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গোপনকক্ষে ভোটারের নিরাপত্তা না থাকায় ভোটকেন্দ্রে গিয়েও ফিরে আসেন অনেক ভোটার। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল গোপনকক্ষের নিরাপত্তা থাকবে কি না? কিন্তু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ভোটে গোপনকক্ষের পাহারায় ছিল বাইরের কেউ না কেউই। অথচ গোপনকক্ষে ভোটার ছাড়া অন্য কারোর প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবচিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। যদিও কমিশন বলছে, এই গোপনকক্ষের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তাদের নিরাপত্তা শিথিলতার কারণে এমনটি হতে পারে। গোপনকক্ষের নিরাপত্তা যে বিঘ্নিত ঘটেছে তা অস্বীকারও করছে না কমিশন
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকে বলেছেন কিছু কিছু জায়গায় এটা হয়েছে। তবে প্রতি কেন্দ্রে রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ট থাকলে এই সমস্যা হতো না। তবে এই সমস্যা হলেও প্রিজাইডিং অফিসাররা কমিশনকে কিছুই জানায়নি। আমি মনে করি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনার মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। নির্বাচন কমিশন যেমন কেন্দ্রভিত্তিক পরিকল্পনা করে এগিয়েছে সেই ধরনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না রাজনৈতিক দলগুলোর।
এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় উদ্বিগ্ন কমিশন। উত্তর-দক্ষিণ সিটিতে ভোট পড়েছে মাত্র ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দক্ষিণে ২৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। মাত্র ১৫ এবং ১৭ শতাংশ ভোটারের রায় নিয়ে ঢাকা উত্তরে মো. আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হয়েছেন। ভোটার উপস্থিতি কমের বেশকিছু কারণ সামনে এনেছে ইসি। এর মধ্যে টানা তিনদিন সরকারি ছুটি, ভোটের তারিখ পরিবর্তন, উচ্চ শ্রেণি এবং শিক্ষিত ভোটারদের বড়ো অংশের অনুপস্থিতি, ইভিএম নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা। কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা বন্ধে নির্বাচনে ইভিএম সংযোজন করা হয়। দেখা গেছে, সেই ইভিএমেও এবার কেন্দ্র দখল না করে শুধু গোপনকক্ষের দখল নিয়ে ফলাফল নিজেদের অনূকুলে আনা হয়েছে। ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটের ফিঙ্গার ম্যাচিংয়ের পর ব্যালট ইউনিটটি ছিল মূলত গোপনকক্ষে। যেসব ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন তাদের ঐ গোপনকক্ষে প্রভাবশালী ব্যক্তির উপস্থিতিতেই ব্যালট ইউনিটের বাটন চাপতে হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষ গোপনকক্ষে অবস্থান করা প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেই ভোটারের জন্য সংরক্ষিত ব্যালট ইউনিটের বাটন চেপে অন্যের ভোট দিয়েছেন। এসব ঘটনা নজরে এসেছে ইসির। ফলে ইভিএমেও যে জাল ভোট পড়তে পারে তা এবারের ভোটে প্রমাণিত হয়েছে।
ভোটকেন্দ্রের পুরো নিয়ন্ত্রণ সাধারণত প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে থাকলেও বেশিরভাগ অফিসার প্রভাবশালীদের কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করেন। এছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তাদের অনেকেই ঝামেলায় না জড়িয়ে চলমান প্রক্রিয়ায় সঙ্গে মিশে যান। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ঘুরেফিরে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির দীর্ঘ লাইনও ছিল একটি সাজানো পরিকল্পনা।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply