নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ব্যাংক খাতে অপরাধে জড়িত পরিচালকদেরও জেল-জরিমানার বিধান যুক্ত করে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালকের সঙ্গে যোগসাজশে বেনামি বা অস্তিত্বহীন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পাইয়ে দিলে অভিযুক্ত পরিচালক শাস্তির আওতায় আসবেন। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের নামে কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবে ব্যাংক। এ ছাড়া স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপিদের বিজনেস ক্লাসে বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, নতুন কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনে নানা বিধান যুক্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। নতুন আইনের খসড়া গত সোমবার ওয়েবসাইটে দিয়ে ২১ দিনের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়েছে। খসড়ায় ৫০টিরও বেশি ধারা-উপধারা সংযোজন, পরিমার্জন ও সংযোজন করা হয়েছে। খসড়ায় মতামত সংগ্রহ করে তা চূড়ান্ত করবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
খসড়ায় বলা হয়, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিত করতে দুটি কমিটি কাজ করবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের ছবিসহ নামের তালিকা ব্যাংকগুলো নিজেদের ওয়েবসাইটে ও সংবাদপত্রে প্রকাশ করবে। গত মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের খসড়ায় ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইনে তাদের বিদেশযাত্রার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তারা বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করতে পারবেন না বলে উল্লেখ আছে। খসড়া আইনে ব্যাংক আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন মনে করলে কোনো ব্যাংকের ব্যবসা স্থগিত, মুনাফা বিতরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে। তারপরও কোনো ব্যাংক দুর্বল হয়ে গেলে কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে কেন্দ্রীয় ওই ব্যাংক অবসায়ন, একীভূতকরণ করতে পারবে।
নতুন সংযোজিত এ সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে কোনো ব্যাংকের ব্যবসা সাময়িকভাবে স্থগিত, ব্যাংক পুনর্গঠন, অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একত্রীকরণ, ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি ও অবসায়ন করতে পারবে। চাইলে কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিলও করতে পারবে। ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকর কোনো পরিচালক অপসারণ করে তার শেয়ার বাজেয়াপ্ত করে বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার যদি মনে করে, কোনো ব্যাংক সঠিকভাবে পরিচালিত হতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং তাতে আমানতকারীদের ক্ষতি হতে পারে তখন সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অধিগ্রহণ করতে পারবে।
এতদিন ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ নিতে ব্যক্তিগত গ্যারান্টির কোনো শর্ত ছিল না। খসড়া আইনে এ শর্ত যুক্ত করে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত গ্যারান্টি ছাড়া বিনাজামানতে কোনো পরিচালকের পরিবারের সদস্যকে ঋণ দেওয়া যাবে না।
খসড়া আইনের ৪৬ (ঘ) ধারা নতুন সংযোজন করে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ কোনো ঋণ জালিয়াতি বা গুরুতর অনিয়মের মাধ্যমে অনুমোদন করলে বা অনুমোদিত ঋণ পরে বেনামি বা অস্তিত্বহীন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির নামে দেওয়া হয়েছে প্রমাণ হলে বা ঋণের সুবিধাভোগী বাদে অন্য কারও কাছে ঋণের অর্থ স্থানান্তর হলে বা নিজ ব্যাংকের পরিচালকের বেনামি ঋণ হিসেবে তদন্তে প্রমাণ হলে ওই ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা ও পরিচালকরা প্রত্যেকে দোষী বলে গণ্য হবেন। তাদের পদ থেকে অপসারণ করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অপসারিত ব্যক্তিরা ফৌজদারি অপরাধে দায়ী হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিট হওয়ার সময় থেকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের হিসাব অবরুদ্ধ ও সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ এবং বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। আইনের এ ধারায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে যে কোনো ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক বা এমডি বা সিইও তার তার নিম্নতর দুই স্তর পর্যন্ত কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে পারবে।
খেলাপি গ্রাহককে ঋণ দিলে ওই ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত পরিচালক ও কর্মকর্তাদের তিন বছরের কারাদন্ড ভোগ করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। যদি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতার নামে কোনো ঋণ সুবিধা দিয়েছে প্রমাণ হয়, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে তা বাতিল হবে এবং তার কাছে প্রাপ্য পুরো অর্থ ফেরতযোগ্য হবে। ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে কোম্পানি আদালতে মামলা করতে পারবে। খেলাপী গ্রাহককে নতুন করে ঋণ দিলে ওই ঋণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত সব পরিচালক ও কর্মকর্তাদের কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা ৩ বছরের কারাদন্ড বা উভয় দন্ড হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply