পাপিয়া কাণ্ডে বেরিয়ে আসছে অনেক সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সুশীলদের নাম। আছে কয়েকজন টিভি মালিকের নামও। ইতিমধ্যে দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। বিপদ টের পেয়ে কয়েকজন বিদেশ চলে যাওয়ার ফন্দি করছেন।
গোপন সূত্রে জানা যায়, ইত্তেফাকের ফরাজী আজমল হোসেন, বিডি জার্নালের শামীম সিদ্দিকী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিথুন মোস্তাফিজ, চ্যানেল১৬ এর এম ডি এম এ মুহিত ছাড়াও আরো প্রভাবশালী অনেকেই এই তালিকায় আছেন যারা নিয়মিত পাপিয়ার কাছে যেতেন অনৈতিক স্বার্থহাসিলে।
গোয়েন্দারা পাপিয়ার কল লিস্ট চেক করে ও জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছেন। এদের মধ্যে অবৈধ টিভি চ্যানেল১৬ এর এমডি এম এ মুহিত দুবাইতে নারী পাচারে জড়িত অনেক আগে থেকেই। অবৈধ ভাবে টিভি ব্যবসার আড়ালে তিনি মেয়ে পাচারের ব্যবসা করতেন। তাই সরকার টিভি চ্যানেলটিও বন্ধ করে দেয় আরো ৫ বছর আগে। এরপর থেকেই মুহিত দেশের মধ্যেই ব্যবসাকে সীমিত করে ফেলেন। সাংবাদিক ফরাজী আজমল, শামীম সিদ্দিকী ও বৈশাখী টিভির সাবেক সাংবাদিক মিথুন মোস্তাফিজকে নিয়ে এই সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। প্রথমে তাদের ব্যবসা ছিল রাজধানীর রিজেন্সি হোটেল কেন্দ্রীক। দুই বছর আগে একবার তিনজন মেয়েসহ মদ্যপ অবস্থায় ফরাজী ও শামীমকে পুলিশ আটকও করেছিল। তৎকালীন এক মন্ত্রীর তদবিরে তারা ছাড়া পান। আর মুহিতের মূল ব্যবসাই হচ্ছে বিদেশিদের মেয়ে সাপ্লাই দেয়া।
সাবেক শিবির নেতা মিথুন মোস্তাফিজের আয়ের উৎস নিয়ে খোদ সাংবাদিক মহলে ব্যাপক আলোচনা ছিল। একবার পুলিশ তাকে আটক করলেই শীর্ষ এক সাংবাদিক নেতার তদবিরে ছাড়া পান তিনি। প্রচলিত আছে এই পাপিয়ার মাধ্যমেই একজন প্রভাবশালী শিক্ষককে ব্ল্যাকমেইল করে শিবিরের রাজনীতি করা সত্ত্বেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী বাগিয়ে নেন। এছাড়া বৈশাখী টিভির এক নিউজ প্রেজেন্টার তার অবৈধ সম্পর্কের ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়লে পরে ২০ লক্ষ টাকায় ঘটনা রফাদফা করেন।
পেট্রোবাংলার গাড়িচালক সাইফুল বারীর কন্যা শামীমা নূর পাপিয়া। কীভাবে পাপিয়া এত বিত্তবৈভবের মালিক হলেন? এখন সেই প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা তিন মাস ধরে পাপিয়ার কর্মকাণ্ড ও তার সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে। সবকিছু নিশ্চিত হয়েই গ্রেফতার করা হয় পাপিয়াকে। হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্ট সুটটি তিনি বানিয়েছিলেন ‘রংমহল’। সেখানে যাতায়াত ছিল অনেক প্রভাবশালীরও। অনেক গোমোর ফাঁস হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় তাকে ছাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ব্যাপক তদবিরও করেছেন। কিন্তু র্যাবের কঠোর অবস্থানের কারণে তাকে ছাড়ানো যায়নি।
গত সোমবার নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে তিন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। মামলা তিনটি করেছে র্যাব। রিমান্ডের পর তাদের নরসিংদী নেওয়া হয়। পাপিয়াসহ চার জনকে শনিবার ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। সে সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট এবং সাতটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
ওয়েস্টিনের ‘রংমহল’ই তাকে অর্থ-বিত্ত-সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। প্রেসিডেন্সিয়াল সুট ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটি টাকার ওপরে।
ঐ সুটে যারা আসতেন তাদের মদ-বিয়ারসহ অন্যান্য আপ্যায়নের পেছনে প্রতিদিন ব্যয় করতেন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। প্রভাবশালীদের খুশি করেই বাগিয়ে নিতেন বিভিন্ন কাজ। সেগুলো আবার বিক্রি করে বিপুল টাকা উপার্জন করতেন। অনেক ক্ষমতাধরেরও সেখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সেখানে যেতেন।
বিমানবন্দর থানায় তাদের বিরুদ্ধে জাল মুদ্রা পাওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এছাড়া অস্ত্র ও মদ উদ্ধারের ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আরো দুটি মামলা করা হয় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। সোমবার ওই চার জনকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে তিন মামলাতেই ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। তিনটি মামলাতেই আদালত পাঁচ দিন করে ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply