বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২০টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘ সংস্থা আঙ্কটাডের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড কমোডিটিস ডিভিশনের করা ‘গ্লোবাল ট্রেড ইম্প্যাক্ট অব দ্য করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) ইপিডেমিক’ শিরোনামে করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশ করে সংস্থাটি।
এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে চীনের মধ্যবর্তী পণ্য রপ্তানি ২ শতাংশ কমলে যে ২০টি দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্প খাত, কাঠ ও ফার্নিচার শিল্প এবং চামড়াশিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ থাকলেও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই।
বাংলাদেশ মোট যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তার ৩০ শতাংশের মতো আসে চীন থেকে। বিশ্বের সরবরাহ ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু চীন থেকে শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, সম্পূর্ণ প্রস্তুত পণ্য, রাসায়নিক ও যন্ত্রপাতি আমদানি করে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত চীন থেকে নতুন করে কোনো পণ্য জাহাজীকরণ হচ্ছে না বাংলাদেশে।
কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির অভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে, তা ইতিমধ্যে স্বীকার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।
চীনে করোনাভাইরাস আঘাত হানায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২০ দেশের তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বেলারুশ, ব্রাজিল, কানাডা, কোস্টারিকা, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইসরায়েল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, তিউনেশিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫ দেশ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সে (পিএমআই) ২২ পয়েন্ট পতন হয়েছে। এই সূচকটি চীনের রপ্তানির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। ২২ পয়েন্ট পতনের অর্থ হলো, চীনের রপ্তানি ২ শতাংশ কমে যাচ্ছে। আর চীনের মধ্যবর্তী পণ্য রপ্তানি ২ শতাংশ কমলে সবচেয়ে ক্ষতি হবে এমন ২০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
আঙ্কটাড বলছে, দুই দশক ধরে বিশ্ব সরবরাহব্যবস্থায় চীন গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। চীন কেবল শিল্প ও ভোগ্যপণ্যই রপ্তানি করে না, বিশ্বের মধ্যবর্তী পণ্য রপ্তানির ২০ শতাংশই করে চীন। দেশটি থেকে মধ্যবর্তী পণ্য রপ্তানি কমে যাওয়ার অর্থ হলো, বিভিন্ন দেশের শিল্প খাতে উৎপাদনও কমে যাবে। যেমন ইউরোপের কিছু গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পার্টসের অভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply