ঈদের বোনাস সহ দুই ছেলে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেয়েছেন জনপ্রতি ৭৫ হাজার করে মোট দেড় লক্ষ টাকা। এমনই একটি ঘটনার নীরব স্বাক্ষী শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার লোনসিং গ্রামের ১৯৭১ এ পাক বাহিনীদের গুলিতে শহীদ হওয়া মতিউর রহমান সরদারের বিধবা স্ত্রীর।
কেউ বিধবা মায়ের খোঁজখবর রাখেন না। এবারের ঈদের চুলো জ্বলেনি শতবর্ষী বিধবা মায়ের ঘরে। ১৯৭১ এ পাক বাহিনীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন স্বামী মতিউর রহমান সরদার। সেই থেকেই বেঁচে থাকার সংগ্রাম। আজও বেঁচে আছেন দুই হাঁটু আর মাথা এক করে।
বড় ছেলে এটিএম সামছুল হক সরদার মুক্তিযোদ্ধা নং ৭৭, সরকারী চাকুরী করতেন, এখন পেনশনে আছেন। প্রতি মাসে পাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের ভাতা। মায়ের খোঁজ খবর নেন না ৪০ বছর ধরে। মায়ের খাওয়াপড়া, চিকিৎসা কোন ব্যপারেই তার কোন মাথা ব্যথা নেই।
মেজো ছেলে মুজিবর সরদার মুক্তিযোদ্ধা নং-৭৫ । তিনিও ঈদের বোনাস সহ মোট ভাতা পেয়েছেন ৭৫ হাজার টাকা। তিনিও প্রায় ৪০ বছরের বেশী সময় ধরে মায়ের কোন খোঁজ খবর রাখছেন না।
৭১ এ স্বামী হারা এই বিধবা মাসের পর মাস একা একা কাটিয়ে দিয়েছেন গ্রামের একটি ভাঙ্গা টিনের ঘরে। বয়সের ভারে এখন আর কাজ কর্ম করতে পারছেন না। নিজের রান্না, কাপড় কাঁচা, কোনটাই সম্ভব হয়ে উঠে না। সমস্ত শরীরে এলার্জি, হাটু কোমড়ে ব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা, বুকে এ্যজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত।
মাঝে মাঝে মেয়েরা নিয়ে রাখেন তাদের বাসায়। তবুও, স্বামীর ভিটেবাড়ি ছেড়ে কোথাও যেন মন টিকছে না তার। তাই, একা একা নীরবে বসে কাঁদেন, আর ভাবেন অতীতের সব কথা, কেমন করে সন্তানদের লালন পালন করে ছিলেন, পড়াশোনা শিখিয়ে ছিলেন ! মাঝে মাঝেই বলেন, স্বামী বেঁচে না থাকলে সন্তানদের উপর ভরসা করা কতোটা কঠিন !
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply