করোনাভাইরাস চিকিৎসায় নিয়োজিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের এক মাসের খাবারের বিল ২০ কোটি টাকা এসেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের একটি জাতীয় দৈনিককে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।
এর আগে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিতর্ক থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ঢামেকের স্বাস্থ্যকর্মীদের এক মাসের খাবারের বিল ২০ কোটি টাকা কী করে হয়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে গতকাল মুখ খুলেছেন ঢামেক পরিচালক।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত ২ মে থেকে আমরা এখানকার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এবং পরে গত ১৬ মে থেকে হাসপাতালের মূল জেনারেল মেডিসিন বিভাগের দুই নম্বর ভবনে করোনা চিকিৎসা চালু করেছি। এই দুই জায়গা মিলিয়ে আমাদের প্রায় ৮২০টি থেকে ৮৫০টি বেড ক্যাপাসিটি এবং এ মুহূর্তে আমাদের এখানে প্রায় ৭০০ এর মতো করোনা রোগী আছে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের প্রায় ১৫০ জনের মতো চিকিৎসক, ২৫০ জনের মতো নার্স ও ১০০ জনের বেশি কর্মচারী ও আনসার সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই করোনা আক্রান্তের বিষয়টিকে মাথায় রেখে স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেলে রাখা হচ্ছে।’
‘আমরা প্রায় ৩০টি হোটেলে চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী, টেকনিশিয়ান, আনসার সদস্য, সিকিউরিটি গার্ডদের রেখেছি এবং সেখানে তারা তিন সপ্তাহের মতো অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৬৮৮ জনকে হোটেলে রাখতে হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এতে করে আমাদের প্রায় ১১ কোটি টাকার বেশি বিল ইতোমধ্যে চলে এসেছে। তাই আমরা পরবর্তী সময়কে হিসেবে ধরেই ২০ কোটি টাকার মতো বাজেট চেয়েছিলাম’ যোগ করেন ঢামেক পরিচালক।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে খাবারের বিল কেন হবে, খাবারের জন্য তো মাত্র ৫০০ টাকা করে পার্মানেন্ট। একদিনে কোনো হোটেলের ভাড়া ২ হাজার টাকা, কোনো হোটেলের ৫০০ টাকা, কোনো হোটেলের আড়াই হাজার টাকা এবং কোনো হোটেলে ৫ হাজার টাকাও আছে। হোটেলের ভাড়াই তো ম্যাক্সিমাম এক্সপেনডিচার, তারপর হচ্ছে তাদের খাবার ও যাতায়াত। আমাদের এখানে যাতায়াতের জন্য প্রায় ১৫টি মিনিবাস, দুটি মাইক্রোবাস ও দুটি বাস রেখেছি। এগুলো দিয়ে প্রতিদিন তিন বেলা (সকাল, দুপুর, রাত) তাদের আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। এই সবকিছু মিলিয়ে আমরা আনুমানিক বলেছিলাম যে, দুই মাসে (মে ও জুন)…।’
ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল, এই দুই মাসের জন্য আপনার কি পরিমাণ খরচ হতে পারে? ওই খরচটাই আমরা উল্লেখ করেছি। আমরা হিসাব করে দেখেছি- দুই মাসে আমাদের ২০ কোটি টাকার মতো লাগবে। এখানে রেলওয়ে হাসপাতাল আছে একটি, সেটিও আমরা চালাচ্ছি এবং তার জন্য ১ কোটি টাকা ধরেছি। সবমিলিয়ে ১ কোটি টাকা লাগতে পারে আবার নাও লাগতে পারে।’
‘এটা তো একটা বাজেট। বাজেট তো একটু বেশি করেই আমরা চাই সবসময়। তারপর আমাদের যে বিল এসেছে, আমরা স্ক্রুটিনাইজ করে দেখব। যার যত বিল হবে হোটেলে, আমরা সে অনুযায়ী তাকে বিল পে করব। যেটি থেকে যাবে সেটি আবার সরকারের কোষাগারে জমা চলে যাবে। এটা তো একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’, যোগ করেন তিনি।
ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘একজন ভদ্রলোক একটা বক্তব্য দিলেন, সেটি নিয়ে সমগ্র দেশ বিভিন্ন রকম কমেন্টস করল, যা আমাদের দারুণভাবে হতবাক করেছে। একজন লোক একটা মিথ্যা বক্তব্য দিলে পুরো দেশের মানুষ তার পেছনে চলে যাবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, আমরা আমাদের এক্সপ্লানেশন দিয়ে দিব- কীভাবে খরচ করছি, কোন খাতে কত ব্যয় হচ্ছে। আমাদের পয়েন্ট হচ্ছে- যেসব ভদ্রলোকেরা বিভিন্ন মিডিয়াতে এ ধরনের মিথ্যাচার করে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং করোনা পরিস্থিতিতে আমরা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সবাই কাজ করছি, এই যে এক ধরনের মিথ্যা কথা বলে তাদেরকে অপদস্থ করা হলো- এটি যিনি করেছেন তার বিরুদ্ধে কি করা হবে, সেটি আমরা জানতে চাই?’
‘আমরা আমাদের প্রমাণ দেব, আমরা যদি অ্যাট ফল্টে থাকি। আমরা তো সরকারি কর্মকর্তা, আমাদের বিষয়ে তো নিশ্চয়ই সেই সিদ্ধান্ত হবে যদি আমরা সঠিকভাবে কাজ না করি। কিন্তু যিনি বা যে প্রতিষ্ঠান বা যে ব্যক্তি এই মন্তব্য করে আমাদের চিকিৎসক সমাজ ও আমাদের এই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানকে অপদস্থ করেছে, আমি তার বিচার চাই’ যোগ করেন এ কে এম নাসির উদ্দিন।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় ঢামেকে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান ঢামেক পরিচালক।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply