রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের পদে থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে বলে প্রমান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কাছে গত ২৪ জানুয়ারি সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক বলছে, ফরহাদ হোসেন সহকারী শিক্ষক পদে এমপিওভুক্ত। তিনি মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখা খোলার পর তিনি অধ্যক্ষের পদ ব্যবহার করে আসছেন এবং সে অনুযায়ী বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। যদিও বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার এমপিও বন্ধ আছে। তবুও তিনি অধ্যক্ষ পদে নিজের নাম ব্যবহার করে স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। বিভিন্ন সময়ে দেয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞপ্তিতে নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন ফরহাদ হোসেন। আর ওই পদের বিপরীতে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
দুদক গত ২৪ জানুয়ারি মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে সুপারিশ করে। দুদকের সেই সুপারিশ আমলে নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে গণমাধমকে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র।
জানা গেছে, ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ছাত্র ভর্তির অনুমোদন দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ থাকার কথা। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করছেন। স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তিনি। আর এভাবে তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
দুদক গণমাধমকে জানায়, প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ আসলে বিষয়টি তদন্ত করা হয়। দুদকের তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয়া হলেও প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। সেই থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফরহাদ হোসেন অধ্যক্ষের বেতন ভাতা আত্মসাৎ করছেন।
দুদক সূত্র আরো জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালা অনুযায়ী ফরহাদ হোসেনের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগপ্রাপ্তির যোগ্যতা ছিল না। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ম্যানেজিং কমিটিকে ‘ম্যানেজ’ করে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল পর্যন্ত বেতন ভাতা বাবদ প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে অবৈধভাবে প্রায় ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি। দুদকের তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়ে স্বঘোষিত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গণমাধমকে জানান, দুদকে সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে এসেছে। সে প্রেক্ষিতে রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনে বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, সহকারী শিক্ষক কীভাবে অধ্যক্ষ পদে তার নাম ব্যবহার করছেন তা আমরা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়ে মহাপরিচালকের নির্দেশনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানার জন্য ফরহাদ হোসেন সাথে যোগাযোগের জন্য ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply