টানা দীর্ঘ ১১ বছর যাবৎ ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে আসীন তাকসিম এ খান। নিয়োগ ও প্রকল্প নিয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ গড়িয়েছে দুদক পর্যন্ত। বিভিন্ন কমর্কা- নিয়ে বিতর্ক থাকলেও একটানা ক্ষমতায় থেকে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ওয়াসা বোর্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ষষ্ঠ দফায় মেয়াদ বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাকসিম এ খান।
ওয়াসাসূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ওয়াসার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ১৩ সদস্যের ওয়াসা বোর্ড। শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসহ ওয়াসার কর্মকর্তারা আছেন এতে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্প বোর্ডে পাস হয়। কিন্তু বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে বারবারই পুনর্নিয়োগ নিয়েছেন তাকসিম এ খান।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা যায়, তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডি হিসেবে প্রথম নিয়োগ পান মহাজোট সরকারের সময় ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর। এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত ও অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, সে শর্তের কোনোটিই তাকসিম এ খানের নেই। এর পরও রহস্যজনকভাবে ওয়াসা বোর্ড তাকসিম এ খানকেই নিয়োগ দেয় এমডি হিসেবে।
২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর ওয়াসার এমডি হিসেবে প্রথম দফায় তিন বছরের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলে স্বীয় পদে থাকতে তদবির শুরু করেন তাকসিম এ খান। ওয়াসা আইনকে পাশ কাটিয়েই ওয়াসা বোর্ড তিন বছরের পরিবর্তে এক বছরের জন্য তাকসিম এ খানকে দ্বিতীয়বারের মতো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। তারপর আবার তোড়জোড় শুরু করেন তাকসিম এ খান। আবারও ওয়াসার আইন ও নিয়ম ভেঙে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি এবং পরীক্ষা ছাড়াই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে পঞ্চমবারের মতো নিয়োগ পেতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন তাকসিম এ খান। আর এ নিয়োগে ওয়াসা বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এমডি নিয়োগ বিষয়ে কোনো ধরনের বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত না হলেও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে তাকসিমের মেয়াদ নতুন করে এক বছর বাড়ানোর সুপারিশ করে ফাইল পাঠানো হয়।
ওয়াসা বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত না হলেও তাকসিম এ খানের পুনর্নিয়োগের একটি ফাইল ওয়াসা থেকে ২৪ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ করা সে ফাইলে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রমের গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে ওয়াসা বোর্ডের ২২৫তম সভার সুপারিশে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইনের ধারা ২৮(১), (২) অনুযায়ী প্রকৌশলী তাকসিম এ খানকে তার বর্তমান চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর অথবা যোগদানের তারিখ থেকে এক বছরের জন্য নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করা যেতে পারে।
ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের উদ্দেশ্যে ১৯৬৩ সালে যাত্রা হয় ঢাকা ওয়াসার। সে সময়ের একটি অধ্যাদেশ অনুযায়ী চলত সংস্থাটি। পরে ১৯৯৬ সালে ‘ওয়াসা অ্যাক্ট’ নামে নতুন আইন হয়। এ আইন অনুযায়ী সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। বোর্ড চেয়ারম্যান থাকলেও সভা ডাকা ছাড়া তার একক কোনো ক্ষমতা নেই। আজকে ঢাকা ওয়াসার সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন তাকসিম এ খান। আগামী ১৪ অক্টোবর মেয়াদ শেষ হবে তার। তাই মেয়াদ বাড়াতে এর মধ্যেই শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
এভাবে এমডির নিয়োগ নিয়ে গত সোমবার একটি বিবৃতি দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। বিবৃতিতে ঢাকা ওয়াসায় সুশাসন নিশ্চিত করতে শীর্ষ পদে নিয়োগে আইনের যথাযথ অনুসরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। এ সম্পর্কে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিধিসম্মতভাবে কাউকে নিয়োগ দিলে আমাদের কিছুই বলার থাকতে পারে না। কিন্তু তার প্রথমবারের নিয়োগেই সমস্যা ছিল। এর পরে আরও চার দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বিধি মেনে পাঁচ দফার জায়গায় আরও মেয়াদ বাড়ালেও টিআইবির আপত্তি ছিল না। প্রথমবার নিয়োগ দেওয়ার সময় বিজ্ঞপ্তিতে যে যোগ্যতা-দক্ষতা-অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল, তা তাকসিম খানের ছিল না। তার পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিধি মানা হয়নি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply