নইন আবু নাঈম, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বাগেরহাটের শরণখোলায় বলেশ্বর নদ থেকে ড্রেজার দিয়ে চলছে বালু লুট। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের নির্মানাধীন ভেড়ি বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। পাশাপাশি উপজেলার অভ্যন্তরীণ ছোট খাল, পুকুর ও ডোবা থেকে ১০-১২টি ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন তোলা হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ বালু। যার ফলে, সড়কসহ অনেকের বাগানবাড়ি ধ্বসে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে বাঁধ, সেতু ও বহুতল ভবন। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে লাভবান হচ্ছে অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা। এই অবৈধ কার্যক্রমের ফলে পরিবেশের জন চরম হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তফালবাড়ী খালের সেতুর পাশেই ড্রেজার বসিয়ে সেখান থেকে বালু তুলে ভরাট করা হচ্ছে রায়েন্দা দারুল হেদায়েত নেছারুল উলুম ফাজিল মাদরাসার মাঠ। এতে সেতুটি ও খালের পারের ঘরবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর কিছু দুরে একই খালে তাফালবাড়ী বাজার সংলগ্ন ধোঁপা বাড়ির পেছনে আরো একটি ড্রেজার বসানো হয়েছে। উত্তর রাজাপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ভবনের মেঝে ভরাটের জন্য পাশের একটি পুকুর থেকে তোলা হচ্ছে বালু।
তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা যায়, উপজেলার বাধাল গ্রামে দেলোয়ার হাওলাদারের ২টি, শাহ আলী হাওলাদারের ১টি, রকি মৃধার ১টি, উত্তর রাজাপুর গ্রামের শফিকুল হাওলাদারের ১টি, ছরোয়ার খানের ২টি, বাংলাবাজার গ্রামের বাচ্চু হাওলাদারের ১টি, উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামের দুলাল মিয়ার ১টি, দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের এমাদুল হাওলাদারের ১টি এবং আমড়াগাছিয়া গ্রামের সুমনের ১টি আত্মঘাতি ড্রেজার রয়েছে। এসব ড্রেজারে তোলা নিম্নমানের বালু দিয়ে ঠিকাদাররা সড়ক ও বিভিন্ন সরকারি ভবনের কাজ করছে।
আবার অনেকে বসতবাড়ি আঙিনা ও ভবনের মেঝে ভরাটের কাজে এই বালু ব্যবহার করছে বলেও জানা গেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে অহরহ ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
উত্তর রাজাপুর গ্রামের স্থানীয় যুবক মাসুদ মীর জানান, এক মাস আগে তাদের এলাকায় বরিং ড্রেজার দিয়ে খাল থেকে বালু তোলায় ফরাজী বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন সড়কের একটি অংশ ধ্বসে গেছে।
পশ্চিম খোন্তাকাটা চৌমোহনা এলাকার মাস্টার ফরিদ আহমেদ জানান, কয়েকমাস আগে তার বাড়ি, তার চাচা নূরুল ইসলাম মীরের বাড়ি ও প্রতিবেশী বাচ্চু আকনের বাড়ির পেছনের খাল থেকে বালু তুলে সড়কে দেওয়া হয়। এর ফলে তাদের তিন বাড়ির নারকেল, সুপারি, আম গাছ, বাঁশ ঝাড়সহ ব্যাপক এলাকা ধসে যায়।
এ ছাড়া গতবছর রায়েন্দা-তাফালবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের খাল থেকে বালু তোলায় কদমতলা এলাকার সড়কের দুটি স্থানে ব্যাপক ফাটল ধরে দেবে যায়। এখনও তার ক্ষতচিহ্ন রয়েছে সড়কে। ওই সড়ক থেকে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রীবাহী বাসসহ ভারী সব যানবাহন।
বাধাল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ফজলুল হকের বাড়ির পেছনের খালে আত্মঘাতি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কয়েকদিন পরই খাল পারের বিশাল অংশ ধসে পড়ে। এভাবে বালু তোলায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বসত বাড়ি, রাস্তাঘাট ধসে যাচ্ছে বলে ক্ষতিগ্রস্থরা অভিযোগ করেছেন।
অপরদিকে, বলেশ্বর নদ থেকে ড্রেজার দিয়ে বছরকে বছর ধরে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এর ফলে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। পানির গতি পরিবর্তিত হয়ে তীররক্ষা বাঁধে এসে আঘাত করছে। ইতিমধ্যে সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ী লঞ্চঘাট, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর বটতলাসহ বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বাঁধসহ রাজৈর মারকাজ মসজিদ ও মাদরাসার পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবন মারাত্মক ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে।
রাজৈর গ্রামের বলেশ্বর পারের বাসিন্দা মৎস্য ব্যবসায়ী আ. জলিল হাওলাদারসহ অনেকেই অভিযোগ করে জানান, বালু ব্যবসায়ীরা বরিশাল থেকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলাধীন বলেশ্বর নদের ভোলমারা নামক স্থানের লিজ নিয়েছে। কিন্তু তারা সেখান থেকে বালু উত্তোলন না করে বলেশ্বরের শরণখোলার অংশ থেকে অবৈধভাবে বালু কাটছে। এতে পানির গতি পরিবর্তন হয়ে শরণখোলা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন ড্রেজার মালিককে জরিমানা ও তাদের ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। এখনো যারা অবৈধ ড্রেজার দিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply