রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ ৪ বছর শিক্ষা অফিসার কর্মস্থলে না থাকায় নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে পরিচালিত হচ্ছে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এতে ঝিমিয়ে পরেছে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৭৬টি বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা।
২০১৭ সালের কালুখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন সরকার রওশন আরা। যোগদানের ৬ মাস যেতে না যেতেই তিনি ডেপুটেশনে ঢাকা বিভাগীয় অফিসে চলে যান।
এ সময় থেকে কালুখালীর সহকারী শিক্ষা অফিসার আঃ রশীদ ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। তার দায়িত্বকালীন সময় স্কুল গুলোতে রমরমা গাইড বই ব্যবসা, একই শিক্ষককে বারবার প্রশিক্ষনের সুযোগ প্রদান, প্রকল্পে অনিয়ম ও ক্ষুদ্র মেরামতে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। শিক্ষক বদলীর ক্ষেত্রেও বানিজ্য করনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ।
এ নিয়ে নিজ অফিস কক্ষে লাঞ্চিতও হয়েছেন তিনি। তার পরও বদলায়নি নিয়ম। সাব ক্লাষ্টার ট্রেনিংয়ে প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য ২ শ ৮০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আঃ রশীদ ২শ ৫০ টাকা করে প্রদান করেন। শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ করলে নানা বিরম্বনার শিকার হতে হয়। তাই নিরবেই সব অনিয়ম সহ্য করে নেয়।
চলতি অর্থ বছরে রুটিন মেরামত ও প্রকল্পের টাকা অধিকাংশ স্কুলের প্রধান শিক্ষকগন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আঃ রশীদকে ম্যানেজ করে যেনতেনভাবে সম্পন্ন করেছে । শিক্ষাকে ম্যানেজ করে কোন কোন স্কুল কাজ না করেই সব টাকা আত্মসাত করেছে । ফলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড কাগজে কলমে হলেও বাস্তবে যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়নি।
গত বছর প্রকল্পের টাকায় অতি উন্নত মানের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করার জন্য ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আঃ রশীদ প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে সংগ্রহ করেন। ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে ওই মেশিন ক্রয়ের সর্বশেষ সময়সীমা শেষ হয়। কিন্তু হাজিরা মেশিন কেনা হয়নি।
কাগজে কলমে দেখানো হলেও বাস্তবে কোন স্কুল হাজিরা মেশিন পায়নি। চলতি বছর প্রত্যেক স্কুলে ১৫ আগষ্ট ও রেডিও ব্যানার তৈরির নির্দেশনা আসে। এ কাজে ৪ শ টাকা খরচ লাগলেও ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আঃ রশীদ প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৭ শ টাকা করে সংগ্রহ করে নিজেই ব্যানার প্রদানের কাজ করেছেন। এছাড়া প্রতিটি স্কুলে দেড়শত টাকার পতাকা প্রদান করে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আঃ রশীদ প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে আদায় করেন ৩ থেকে ৪ শ টাকা।
চলতি বছর করোনার কারনে কোন প্রশিক্ষন না হলেও বিগত বছরগুলোতে প্রশিক্ষনের ক্ষেত্রে অনিয়ম আর স্বজন প্রীতির অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা অফিসার আঃ রশিদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রশিক্ষনের ক্ষেত্রে অনিয়ম আর স্বজন প্রীতির আশ্রয় নেওয়া হয়। সরকারী নীতিমালা মোতাবেক ৪৫ বছরের অধিক বয়সী শিক্ষককে আইসিটি ট্রেনিং না করানোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এই নিয়ম লংঘন করে ৪৫ বছরের অধিক বয়সী শিক্ষকদের আইসিটি ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহনের সুযোগ করে দিয়েছে আঃ রশীদ।
তিনি একবার প্রশিক্ষন গ্রহনকারীকে পুনরায় প্রশিক্ষনের সুযোগ দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত বছর ডবল প্রশিক্ষন নেওয়া এক শিক্ষকের প্রশিক্ষন ভাতা বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। এদিকে সরকারের অগ্রাধিকার নীতির আওতাভুক্ত হলেও প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের ৪ টি স্কুলের কোন স্কুলে আইসিটি ট্রেনিংপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই।
এতো কিছুর মধ্যদিয়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আঃ রশীদ পাংশা,কালুখালী ও রাজবাড়ীতে নামে বেনামে গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। কালুখালীর আমবাড়ীয়া ও বোয়ালিয়া চন্দনা নদীর পারে ,রাজবাড়ীর ভবানীপুর ও পাংশার শিল্পকলা এলাকায় ক্রয় করেছে প্রায় ৫ কোটি টাকার জমি । শিক্ষকদের দাবী কর্মস্তলে থাকতে পারে এমন যোগ্যতা সম্পন্ন সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন অফিসার দিয়ে কালুখালী উপজেলা শিক্ষা অফিস পরিচালনা করা দরকার। নইলে অচিরেই ভেঙ্গে পরবে নতুন এই উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কাঠামো।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply