আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ১৯৫১ সালের স্বায়ত্তশাসিত তিব্বত দখল করে নেয় চীন। এরপর ১৯৫৯ সালের প্রথম থেকেই তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারীদের ওপর গণহত্যা শুরু করে দেশটি। তিব্বতে এই গণহত্যা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে চীন।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, জোর পূর্বক কাজ করানোর ফলে হাজার হাজার তিব্বতিয়ান শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও সেখানে নারীদের ধর্ষণ, কৃষি জমি ধ্বংস, ধর্ম পালনে বাধা , গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত খুঁজে পায় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের তদন্ত কমিটি।
১৯৫৯ সালে তিব্বতে গণহত্যা শুরু হওয়ার আইসিজে’র মহাসচিব জিন-ফ্লাভিয়ান লালিভ লেখেন, তিব্বতে আজ যা ঘটছে কাল তা আমাদের দেশেও ঘটতে পারে।
তিব্বতে গণহত্যা এখনো চলছে। এদিকে ২০১৪ সালে স্বায়ত্তশাসিত জিনজিয়াংয়েও একই কায়দায় উইঘুরদের বিরুদ্ধে গণহত্যা শুরু করে চীন। তিব্বত এবং জিনজিয়াং উভয় জায়গাতেই ভারী অস্ত্র, সেনা পাঠিয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে চীন। কারণ তিব্বত এবং জিনজিয়াং উভয় অঞ্চলই চীনের জন্য ভৌগলিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই চীন সরকার এ দুটি অঞ্চলকে স্বায়ত্ত্বশাসন দিতে চাইছে না।
২০১৩ সালে এক অঞ্চল, এক পথ বা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নামে একটি উন্নয়ন কৌশল গৃহীত করে চীন সরকার। এ পরিকল্পনায় থাকছে সমুদ্রপথে একগুচ্ছ আন্তর্জাতিক বন্দর, ভূমিতে আন্তসীমান্ত সড়ক, উচ্চগতির রেলপথ, বিমানবন্দর এবং ডিজিটাল যুক্ততার অবকাঠামো নির্মাণ। এর সমান্তরালে থাকবে বিদ্যুতের গ্রিড, গ্যাসের পাইপলাইন এবং বাণিজ্য–সহায়ক আর্থিক কার্যক্রম। এই বাণিজ্যপথ এশিয়ার বিস্তৃত এলাকায় জালের মতো ছড়িয়ে থাকবে, এশিয়াকে ভূমি-সমুদ্র-আকাশ ও ডিজিটাল মাধ্যমে ইউরোপ ও আফ্রিকার সঙ্গে যুক্ত করবে। চীনা রাষ্ট্রের সব স্তর, সব প্রাদেশিক সরকার এবং গণমাধ্যম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মহলকে এই মহাপরিকল্পনা তৈরি ও তার বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত করা হয়েছে। এই এই উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়ন করতেই মূলত উইঘুরে গণহত্যা চালাচ্ছে চীন সরকার। কারণ চীনের ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে তিনটি জিনজিয়াংয়ের সঙ্গে যুক্ত। আর তাই চীনের স্বায়ত্ত্বশাসনে হস্তক্ষেপ করতে চায় চীন। এছাড়া জিনজিয়াংকে আরেকটি কারণে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় চীন। আর সেটি হলো অপরিশোধিত তেল। আশা করা হচ্ছে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ৩৫ মিলিয়ন অপরিশোধিত তেল উত্তোলিত হবে জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে। এছাড়া জিনজিয়াংয়ে চীনের সবচেয়ে বড়ো কয়লার খনি রয়েছে।
এদিকে তিব্বতেও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো হিমালয়ান ইকোনমিক রিম নামে একটি উন্নয়ন কৌশল গৃহীত করেছে চীন সরকার।এর সঙ্গে যুক্ত হবে নেপাল,ভারত, ভূটান। বাংলাদেশ-চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোরের সঙ্গেও এটি যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
জিনজিয়াংয়ের মতো তিব্বতেও রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। চীনের জলবিদ্যুতের ৩০ শতাংশই আসে তিব্বত থেকে। এছাড়া তিব্বত বিশ্বের সর্বোচ্চ কপার উৎপাদনকারী অঞ্চল।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply