রাকিব হোসেন, শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধঃ শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলায় কুচাইপট্টি ইউনিয়নের মশুরগাঁও এলাকায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রী (১৫) কে অভিনব কায়দায় ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সেলিম ব্যাপারীর ছেলে জাহিদুল ব্যাপারী (২২) এর বিরুদ্ধে। গত (৬ ডিসেম্বর রোজ শনিবার) ছাত্রীর মা গোসাইরহাট থানায় মামলা করেন। ২৮ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত মামলার আসামী জাহিদুল আটক হয়নি। বর্তমানে মামলা তুলতে গুম হত্যার হুমকি দিচ্ছে আসামী জাহিদুলের পরিবার। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
থানায় অভিযোগ, ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আসামি কুচাইপট্টি ইউনিয়নের মশুরগাঁও এলাকার সেলিম ব্যাপারীর ছেলে জাহিদুল ব্যাপারী (২২) স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতেন। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে জাহিদুল স্কুল ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
শেষবারের মত গত ৪ ডিসেম্বর রাত ১১ টার দিকে আসামী জাহিদুল তার বাড়িতে নিয়ে তিন সিটের বসত ঘরে নিয়ে মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ভাবে একাধিক বার ধর্ষণ করে। ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পরলে ওলি মৃধা, সুমন মৃধা, মানসুরা বেগমসহ স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে। পরে ছাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ধর্ষণের ফলে ওই ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরে। জাহিদুল জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট খাইয়ে ছাত্রীর পেটের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলে দেয়। ধর্ষণের শিকার ছাত্রী জাহিদুল কে বিয়ের জন্য তাগিদ দিতে থাকেন। কিন্তু জাহিদুল বিয়ে করতে রাজি হয় না, বরং সে উল্টা পাল্টা কথা বলে। এদিকে গত ৬ ডিসেম্বর ছাত্রীর মা গোসাইরহাট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের পর ৭ ডিসেম্বর স্থানীয় হাসান ঘরামী, কালাম ব্যাপারী, সেলিম ব্যাপারী, আলি হোসেন মোল্লা, অলিল মৃধা, শাহ আলম মৃধা, ফিরোজ মৃধা, নারগিস বেগমসহ ২০/২৫ জন জাহিদুলের কাকি নারগিস বেগমের বাড়িতে দরবার সালিশ করেন। সালিশে দেড় লাখ টাকায় মিমাংসা হয়। টাকা দিলে ছাত্রীর পরিবার মামলা তুলে নেয়ার কথা। কিন্তু জাহিদুলের পরিবার ধর্ষণের শিকার পরিবার কে কোন প্রকার টাকা দেয়নি।
সালিশ নারগিস বেগম বলেন, ঘটনাটি নিয়ে আমার বাড়িতে দুটি পক্ষ দরবার সালিশ করে। পরে মেয়ের পক্ষ ৩ লাখ টাকা দাবি করে। প্রথমে এক লাখ টাকা দিতে রাজি হয় ছেলের পরিবার। পরে দেড় লাখ টাকায় মিমাংসা হয়। কিন্তু ছেলের পরিবার মেয়ের পরিবারকে এখনো টাকা দেয়নি।
স্থানীয় হাসান ঘরামী, কালাম মৃধাসহ অনেকেই বলেন, এরকম ঘটনায় যিনি জড়িত তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেটা আইনে রয়েছে মৃত্যু দন্ড সেটা দেওয়া হোক। এক জনের মৃত্যু দন্ড হলে পরবর্তীতে কোন ছেলে এরকম ঘটনা ঘটাতে সাহস পাবে না।
ধর্ষণের শিকার ছাত্রী বলেন, আমি স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে জাহিদুল আমার সাথে দেখা করতো। পরে এক পর্যায় আমি জাহিদুলের সাথে প্রেম করতে রাজি হয়ে যাই। জাহিদুলের সঙ্গে আমার এক বছরের সম্পর্ক । জাহিদুল আমাকে বলছিলো বিয়ে করবে,কিন্তু বিয়ে না করে সে আমাকে একাধিক বার আমাকে যোর পূরবক ভাবে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করছে। পরবর্তীতে যখন আমার পেটে বাচ্চা আসে তখন জাহিদুল ঔষধ খাইয়ে আমার পেটের বাচ্চা নষ্ট করে দেয়। আমি এর বিচার চাই।
ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে জাহিদুলের সম্পর্ক আমরা জানতাম না। আমার মেয়েকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে খারাপ কাজ করেছে জাহিদুল। তাই আমি মামলা করেছি।
অভিযুক্ত জাহিদুল ব্যাপারীর মা দিপা বেগম বলেন, গত ৪ ডিসেম্বর রাতে আমার ছেলে বাড়িতে ছিল না। মেয়ের পরিবার আমাদের বাড়িতে এসে মেয়েকে ঘরে ঢুকিয়ে তালা মারে। পরে স্থানীয়রা দরবার সালিশ করে।
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা সোহেব আলী বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার আসামী জাহিদুল পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply