নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে নদী দূষণ প্রতিরোধে এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পানিসম্পদ দূষণের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপীই এটি একটি সমস্যা। এই সমস্যাটি নদীতেই কেবল নয়, সাগরেও দেখা দিচ্ছে, সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে বর্জ্য ফেলা। আমি সবাইকে বলব যে, নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। কারণ এটি একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কাজেই প্রতিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান যারা গড়ে তুলবেন তারা যেন নদী দূষণ না করেন। সেজন্য তাদের আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নির্মাণ করতে হবে, পানি শোধনাগার করতে হবে। সেইসঙ্গে রাস্তা-ঘাটে চলাচল করার সময়ও এদিক সেদিকে বর্জ্য না ফেলার প্রতি লক্ষ্য রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটা আমরা জানি। আর সেজন্যই নিজস্ব অর্থ দিয়ে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে এই জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মুক্ত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন প্রচুর বৃক্ষরোপণ করা। তিনি আরও বলেন, এজন্য আমি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে বলব, কেবল নদী ড্রেজিং করলেই হবে না, সেখানে বৃক্ষরোপণটাও করে দিতে হবে। প্রতিটি উপকূল অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনীর সৃষ্টি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় নদী ড্রেজিংয়ের মাটি আবার নদীতেই না ফেলে নদীর পাড়ে জুট জিও টেক্সটাইলের সাহায্যে পকেট সিস্টেম করে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাহলে সেখান থেকে অনেক ভূমিও উদ্ধার করা সম্ভব হবে যেখানে পরবর্তীতে কৃষি এবং শিল্পায়ন দুটি কাজই করা যাবে। নদী দূষণমুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদী সংরক্ষণের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি। শেখ হাসিনা এ সময় শহরাঞ্চলে দৈনন্দিন কাজে পানির অপচয় রোধ করা প্রত্যেকের নাগরিক কর্তব্য বলেও উল্লেখ করেন। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের দেশের পানি ব্যবস্থাপনা উজানের দেশের উপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেই জাতির পিতা আন্তঃসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৭২ সালে ‘যৌথ নদী কমিশন-জেআরসি’ গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরও বাস্তবায়ন করে। শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, চলতি মেয়াদে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ পুনর্খনন করে নৌ চলাচলের উপযোগী করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বালু মহল করা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন, এজন্য আমি ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছি এক জায়গায় বেশিদিন বালু মহাল করা যাবে না। বালু মহালগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করতে হবে যাতে করে আমাদের ওই অঞ্চলটা নদী ভাঙনের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে। তিনি এ সময় হাওর-বাঁওড় ও জলাধার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, প্রথমবার (’৯৬ সালে) সরকারে এসেই এ সংশ্লিষ্ট ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন করেছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা পানি আইন-২০১৩ করেছি এবং এর বিধিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করেছি। যা বাস্তবায়ন করা একান্তভাবে দরকার। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহিদ ফারুক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জনাব এ কে এম এনামুল হক শামীম এবং একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র সেন বক্তৃতা করেন। মন্ত্রণালয় সচিব কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। এতে বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০-এর উপর নির্মিত দুটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শত বর্ষের ব-দ্বীপ পরিকল্পনার একটি স্মারক উপহার দেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং মিশন প্রনিনিধি ও প্রধান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply