এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের বাসাইলে কনা আক্তার (২৪) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার ২৭ এপ্রিল সকালে উপজেলার কাশিল পশ্চিমপাড়া এলাকায় গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই গৃহবধূকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ তার পরিবারের। বাসাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুনুর রশিদ এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে বাসাইল উপজেলার কাশিল পশ্চিমপাড়া এলাকার বাবু মিয়ার দুবাই প্রবাসী ছেলে কবির মিয়ার সাথে বিয়ে হয় কনার। সে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের দরুন গ্রামের জয়নাল মিয়ার মেয়ে। কনার মা, ভাই ও বোন এর দাবী বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য তার শাশুরী ও দুই নুনাশের (স্বামীর বড় বোন) অত্যাচার শুরু হয়। ইতোমধ্যে কনা-কবিরে সংসারে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এরমধ্যে তার শাশুরী কহিনূর বেগম ও স্বামী কবির মিয়া পুনরায় প্রবাসে চলে যান। ওই গৃহবধূ কনা আক্তার তার শিশু সন্তানকে নিয়ে বাকপ্রতিবন্ধী শ্বশুরের সাথে বসবাস করেন। এরমধ্যে নুনাশ সালমা বেগমের স্বামী অন্যত্র বিবাহ করায় ও তাসলিমা বেগমের স্বামী বিদেশে থাকায় তারা শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতেই অবস্থান নেয়। এমতাবস্থায় গৃহবধূ কনার প্রবাসী স্বামী কবির ও শাশুরী কহিনূরের পাঠানো টাকা আত্মসাতের পায়তারা করে তার দুই নুনাশ। এছাড়াও যৌতুকের টাকার জন্য নুনাশ সালমা ও তাসলিমা বেগম গৃহবধূ কনাকে বিভিন্ন সময় মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করে আসছিল। সোমবার ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায়ও ওই গৃহবধূ কনাকে তারা দুই বোন মিলে প্রচুর মারধর করে। পরে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সকালে তার বসত ঘরের ধন্নার সাথে ঝুঁলন্ত অবস্থায় থাকা গৃহবধূ কনা আক্তারের লাশ পাওয়া যায়।
নিহত গৃহবধূ কনা আক্তারের মা কহিনূর বেগম বলেন, ‘কনার স্বামী ও শাশুরী প্রবাসে থাকায় বাকপ্রতিবন্ধী শ্বশুর ও তার শিশু সন্তানকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছিল। কনার এক নুনাসের স্বামী অন্যত্র বিয়ে করায় আর অপর নুনাশের জামাই বাইরে থাকায় তারাও ওই বাড়িতে চলে আসে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক দাবিতে শাশুরী, স্বামী ও নুনাশরা কনাকে নানা ভাবে মারধর করে আসছিল। কনার স্বামী ও শাশুরী প্রবাস থেকে তার নুনাশদের কাছে টাকা পাঠায়। এ সুযোগে দুই নুনাশ মিলে তার শাশুরী ও স্বামীর পাঠানো টাকার পুরোপুরি মাতাব্বরি করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় যৌতুক দাবিতে কনাকে তার নুনাশরা কথায় কথায় মারধর করে। গতকালও আমার মেয়েকে যৌতুকের টাকার জন্য দুই নুনাশ মিলে অনেক মারধর করে। পরে রাতের কোনও এক সময় তারা আমার মেয়েকে হত্যা করে লাশ ঘরের ধন্নার সাথে ঝুলিয়ে রেখে আমাদের খবর দেয়। খবর পেয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি ঘরের বাইরে থেকে তালা লাগানো অবস্থায় রয়েছে। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’
কনার ছোট বোন ঝর্ণা আক্তার বলেন, ‘আমার বোনকে তার দুই নুনাশে মিলে লোক ভাড়া করে হত্যা করেছে। পরে লাশ ঝুঁলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমার বোনের হত্যাকারীদের কঠোর বিচার দাবি করছি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাছ মিয়া বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশকে
জানানো হয়। পরে পুলিশ এসে নিহতের লাশটি ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা কিছু বলা যাচ্ছে না।’
ওসি হারুনুর রশিদ বলেন, ‘খবর পেয়ে নিহতের লাশ ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply