এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার দিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বাতাসে দুলছে সোনালি ধানের শীষ। যেদিকে যতদূর চোখ যায়, দৃস্টির সীমানায় শুধু দেখা যায়, ধান আর ধান। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই এখন প্রতিটি ইউনিয়নেই এখন বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুম। তাই তো ধান কাটার ধুম লেগেছে মাঠে মাঠে। প্রতিটা কৃষকের আঙিনাতেই এখন ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই, সিদ্ধ ও শুকানোর একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। চারদিকে বাতাসে ছড়াচ্ছে নতুন ধানের ম-ম গন্ধ। গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড়-কুটো শুকাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষানীরা। সেই কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ, জোয়ান- বুড়ো সবাই স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে নাওয়া-খাওয়া ভুলে ব্যস্ত সময় পার করছে।
এ ফসল থেকেই জোটে কৃষকের সারা বছরের খোরাকসহ সংসারের যাবতীয় খরচ পাতি। তাই কৃষকেরা যত দ্রুত সম্ভব এ ফসল ঘরে তুলতে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কালবৈশাখীর সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট হবার আতংকও রয়েছে কৃষকে চোখে মুখে। এছাড়াও কৃষকের মনে আরও বড় দুশ্চিন্তা হল সারা দেশে করোনা মহামারি রোধে কঠোর লকডাউন চলছে। এতে করে কৃষি শ্রমিকের কিছুটা সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ফলে সময় মমতো ধান কেটে ঘরে তুলার শঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকদের।
বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই ষ্রমিক দিয়ে ধান কেটে আঁটি বেঁধে রেখেছেন ক্ষেতের মাঝেই। পড়ন্ত বিকালে সেই আঁটি মাথায় কিংবা গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছেন কৃষকরা। আবার অনেকেই হারভেষ্টার দিয়েও খান কাটছে। বাড়িতে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও একই কাজে ব্যস্ত।
বাসাইল ফুলকী এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, তার নিচু জমিতে আগাম চাষ করা ধানকাটা নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছেন। যে কোনো সময় বড় ধরনের ঝড়বৃষ্টি হলে ধান পানির নিচে তলিয়ে যাবে। করোনার কারণে শ্রমিক এসে পৌছাতে না পারায় ধানকাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
উপজেলার তিরঞ্চ গ্রামের কৃষক শাহ আলম মিয়া বললেন, আমি তিন’শ শতাংশ জমিতে ২৮ ও ২৯ ধান আবাদ করেছি ফলনও হয়েছে ভাল এখন ঘরে তুলতে পারলেই চিন্তামুক্ত হতে পারি। উত্তর বঙ্গে থেকে ধান কাটার শ্রমিক এসেছে। প্রতিদিন সাত’শ টাকা করে শ্রমিকের মজুরী গুনতে হচ্ছে।
ধান মাড়াই মেশিনের মালিক জানান, কৃষকের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে ধান মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করে দিয়ে আসে। তবে ঝড় বৃষ্টির হলে বাড়ী বাড়ী তার ধান মাড়াই মেশিন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে দ্রুত সময়ে মধ্যে ধান ঘরে তুলছে পারবে এলাকার কৃষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনিন আক্তার জানান চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১১হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফসি ও স্থানীয় জাতের বোরো আবাদ হয়েছে।অনুকুল আবহাওয়া, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, উন্নত জাতের বীজ, গুণগত মান সম্পন্ন সার ও কীট নাশক প্রয়েগের ফলে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি জানান গত বছর কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্যে পাওয়ায় এবছর অনাবাদি বহু জমি বোরো চাষের আওতায় এসেছে। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগে না পড়লে উপজেলায় বোরো ধানের কাঙ্খিত লক্ষামাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে শ্রমিক সংকটের কথা চিন্তা করে উপজেলায় কৃষি যান্ত্রিকী করন কার্যক্রমের আওতায় কৃষকের ধান কেটে দ্রুত ঘরে তুলার লক্ষে সরকারি ভর্তুকিতে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নে ধানের মাঠে ২১টি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিন (ধান কাটা মেশিন) কৃষকের সাঝে প্রদান করা হয়েছে। এ মেশিন গুলো ধান কাটার মাঠে চলছে।
এদিকে চলতি বোরো মৌসুমে সরকারী ভাবে প্রান্তিক কৃষকদের অভ্যন্তরিন উৎপাদন থেকে ধান ও চাল ক্রয়ের কর্মসূচিও চলমান রয়েছে। এ ব্যপারে খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহমুদ হাসান পলাশ জানান, চলতি বোরো মমৌসুমে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি প্রতি কেজি ২৭ টাকা দরে ১ হাজার ৫’শ ১১ মেট্টিকটন ধান সংগ্রহ করা হবে। এছাড়াও প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে ১’শ ৯৪ মেট্টিকটন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ধান চাল সংগ্রহের এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply