নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আনোয়ার হোসেন। যশোর চলতি মাসে ৪ সেপ্টেম্বর যশোর সদর উপজেলার দাইতলা ফতেপুর এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী মুরাদ হোসেন। পারিবারিক কলহের জেরে মুরাদ আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে। স্বামীর মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা শান্তা নিজেও কীটনাশক পান করেন। পরে পরিবারের লোকজন শান্তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে সন্ধ্যার দিকে শান্তা গর্ভের আট মাসের মৃত সন্তান প্রসব করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিনেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকেরা। স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সযোগে খুলনায় নেওয়ার পথে স্থানীয় রূপদিয়া বাজারে পৌঁছালে গাড়িতে শান্তার মৃত্যু হয়।
একই দিন (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ ঝাঁপা গ্রামের নুর জাহান ইসলাম (২৭) নামে এক গৃহবধূ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে স্বজনরা তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনরা জানান, স্বামীর সাথে বাকবিতন্ডায় সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। নুর জাহানের আত্মহত্যায় মা হারা হয়েছে ৫ ও ৯ বছরের দুটি শিশু।
যশোর সম্প্রতি পারিবারিক কলহ, কর্মক্ষেত্রে হতাশাসহ নানা কারণে গলায় ফাঁস ও বিষপানে মৃত্যু বেড়েছে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এ প্রবণতায় ঝুঁকে পড়ছেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টিও হয়েছে। গত ৪ মাসে যশোর জেলায় গলায় ফাঁসি দিয়েও বিষপানে ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে আরো অনেকেই। এছাড়াও চলতি মাসের (সেপ্টেম্বর) সর্বশেষ ১৫ দিনে আরও অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বিষপান ও গলায় ফাঁস দিয়ে। সবমিলিয়ে গত সাড়ে ৪ মাসে জেলায় প্রায় দুইশ’ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকালে মানুষ নানা সংকটে দিন পার করছে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক। ফলে হতাশাগ্রস্ত মানুষ নিজেকেই হত্যা করছে।
জানা যায়, গেল ১৭ আগস্ট যশোরের শার্শা উপজেলার শুড়ারঘোপ গ্রামে মেয়ে আঁখি মনিকে (৬) বিষপানে হত্যার পর সুমি খাতুন (৩০) নামে এক নারী আত্মহত্যা করেছেন। তিন বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদের পর সুমি খাতুন তার শিশুকন্যা আঁখি মনিকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন। এ নিয়ে সুমির মায়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা কাটাকাটি হতো। মা তাকে এ নিয়ে বকাবকি করেন। এরপর তার ও মায়ের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। পারিবারিক কলহ ও মায়ের ওপর অভিমান করে মেয়েকে বিষপানে হত্যার পর সুমি আত্মহত্যা করে বলে জানান স্বজনরা। এর আগে গত ১৩ আগস্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আব্দুস সালাম সেলিম (৫৫) যশোর শহরে বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সম্প্রতি তাকে বগুড়ায় বদলি করা হয়। বদলিজনিত কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম। অপরদিকে, গত ৭ আগস্ট স্বামীর পরকীয়া নিয়ে বিবাদে তিন বছরের মেয়ে কথাকে রশিতে ঝুঁলিয়ে হত্যার পর আরেক রশিতে আত্মহত্যা করেন মণিরামপুরের গৃহবধূ পিয়া মন্ডল (২২)। এ ঘটনায় স্বামী কলেজ শিক্ষক কণার মন্ডলের বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার দায়ে মামলা হয়েছে। পুলিশ ওই দিনই স্বামী কণার মন্ডলকে আটক করে।
এ প্রসঙ্গে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (এমএম) কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহিন বলেন, নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা (অ্যানোমিক সুইসাইড) প্রবণতা বেড়েছে সমাজে। চাওয়া পাওয়া ও প্রাপ্তির মধ্যে যখন বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়, তখন মানুষের মনের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। মনে চাপ তৈরি হয়। এ নৈরাজ্য থেকে মানুষ আত্মহত্যা করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে (লকডাউনে) আমাদের সমাজের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখবেন মারাত্মক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব। মানুষ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চায়, মিশতে চায়। লকডাউনের কারণে সেটি করতে পারছে না। ফলে মানুষের বস্তুগত (চাকরি, অর্থনৈতিক সুবিধা, সম্মান) ও অবস্তুগত (গল্প, আড্ডা, মেলামেশা) চাওয়া পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বস্তু ও অস্তুগত চাওয়া পাওয়ার পার্থক্যে মনে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও ডিবির ওসি রূপন কুমার সরকার জানান, গত চার মাসে (মে-আগস্ট) যশোর জেলায় গলায় ফাঁস দিয় ও বিষপানে ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১১৬ জন গলায় ফাঁস ও ৬৬ জন বিষপানে মৃত্যু। আগস্ট মাসে ৪৭ জনের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে ২৬ জন ও বিষপানে ২১ জন, জুলাই মাসে ৬৮ জনের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে ৪৮ জন ও বিষপানে ২০ জন, জুন মাসে আত্মহত্যা করা ৩১ জনের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে ১৯ জন ও বিষপানে ১২ জন, মে মাসে ৩৬ জনের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে ২৩ জন ও বিষপানে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পারিবারিক কলহ, সামাজিক অস্থিরতা ও হতাশার কারণে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
অনুভূতিগুলো মনের মধ্যে আটকে থাকছে। মানুষ যখন জীবনের অর্থ খুঁজে পায় না, তখন আত্মহত্যা করে। কারণ মানুষের জীবনের অর্থ নিহিত হয় পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। যখন মানুষের লক্ষ্য ও প্রাপ্তির মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হয়, তখন নিজের জীবনকে মূল্যহীন মনে করে, আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
গত সাড়ে ৪ মাসে যশোর জেলায় প্রায় দুইশ’ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আনোয়ার হোসেন। যশোর চলতি মাসে ৪ সেপ্টেম্বর যশোর সদর উপজেলার দাইতলা ফতেপুর এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী মুরাদ হোসেন। পারিবারিক কলহের জেরে মুরাদ আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে। স্বামীর মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা শান্তা নিজেও কীটনাশক পান করেন। পরে পরিবারের লোকজন শান্তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে সন্ধ্যার দিকে শান্তা গর্ভের আট মাসের মৃত সন্তান প্রসব করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিনেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকেরা। স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সযোগে খুলনায় নেওয়ার পথে স্থানীয় রূপদিয়া বাজারে পৌঁছালে গাড়িতে শান্তার মৃত্যু হয়।
একই দিন (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ ঝাঁপা গ্রামের নুর জাহান ইসলাম (২৭) নামে এক গৃহবধূ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে স্বজনরা তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনরা জানান, স্বামীর সাথে বাকবিতন্ডায় সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। নুর জাহানের আত্মহত্যায় মা হারা হয়েছে ৫ ও ৯ বছরের দুটি শিশু।
যশোর সম্প্রতি পারিবারিক কলহ, কর্মক্ষেত্রে হতাশাসহ নানা কারণে গলায় ফাঁস ও বিষপানে মৃত্যু বেড়েছে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এ প্রবণতায় ঝুঁকে পড়ছেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টিও হয়েছে। গত ৪ মাসে যশোর জেলায় গলায় ফাঁসি দিয়েও বিষপানে ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে আরো অনেকেই। এছাড়াও চলতি মাসের (সেপ্টেম্বর) সর্বশেষ ১৫ দিনে আরও অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বিষপান ও গলায় ফাঁস দিয়ে। সবমিলিয়ে গত সাড়ে ৪ মাসে জেলায় প্রায় দুইশ’ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকালে মানুষ নানা সংকটে দিন পার করছে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক। ফলে হতাশাগ্রস্ত মানুষ নিজেকেই হত্যা করছে।
জানা যায়, গেল ১৭ আগস্ট যশোরের শার্শা উপজেলার শুড়ারঘোপ গ্রামে মেয়ে আঁখি মনিকে (৬) বিষপানে হত্যার পর সুমি খাতুন (৩০) নামে এক নারী আত্মহত্যা করেছেন। তিন বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদের পর সুমি খাতুন তার শিশুকন্যা আঁখি মনিকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন। এ নিয়ে সুমির মায়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা কাটাকাটি হতো। মা তাকে এ নিয়ে বকাবকি করেন। এরপর তার ও মায়ের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। পারিবারিক কলহ ও মায়ের ওপর অভিমান করে মেয়েকে বিষপানে হত্যার পর সুমি আত্মহত্যা করে বলে জানান স্বজনরা। এর আগে গত ১৩ আগস্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আব্দুস সালাম সেলিম (৫৫) যশোর শহরে বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সম্প্রতি তাকে বগুড়ায় বদলি করা হয়। বদলিজনিত কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম। অপরদিকে, গত ৭ আগস্ট স্বামীর পরকীয়া নিয়ে বিবাদে তিন বছরের মেয়ে কথাকে রশিতে ঝুঁলিয়ে হত্যার পর আরেক রশিতে আত্মহত্যা করেন মণিরামপুরের গৃহবধূ পিয়া মন্ডল (২২)। এ ঘটনায় স্বামী কলেজ শিক্ষক কণার মন্ডলের বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার দায়ে মামলা হয়েছে। পুলিশ ওই দিনই স্বামী কণার মন্ডলকে আটক করে।
এ প্রসঙ্গে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (এমএম) কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহিন বলেন, নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা (অ্যানোমিক সুইসাইড) প্রবণতা বেড়েছে সমাজে। চাওয়া পাওয়া ও প্রাপ্তির মধ্যে যখন বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়, তখন মানুষের মনের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। মনে চাপ তৈরি হয়। এ নৈরাজ্য থেকে মানুষ আত্মহত্যা করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে (লকডাউনে) আমাদের সমাজের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখবেন মারাত্মক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব। মানুষ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চায়, মিশতে চায়। লকডাউনের কারণে সেটি করতে পারছে না। ফলে মানুষের বস্তুগত (চাকরি, অর্থনৈতিক সুবিধা, সম্মান) ও অবস্তুগত (গল্প, আড্ডা, মেলামেশা) চাওয়া পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বস্তু ও অস্তুগত চাওয়া পাওয়ার পার্থক্যে মনে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও ডিবির ওসি রূপন কুমার সরকার জানান, গত চার মাসে (মে-আগস্ট) যশোর জেলায় গলায় ফাঁস দিয় ও বিষপানে ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১১৬ জন গলায় ফাঁস ও ৬৬ জন বিষপানে মৃত্যু। আগস্ট মাসে ৪৭ জনের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে ২৬ জন ও বিষপানে ২১ জন, জুলাই মাসে ৬৮ জনের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে ৪৮ জন ও বিষপানে ২০ জন, জুন মাসে আত্মহত্যা করা ৩১ জনের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে ১৯ জন ও বিষপানে ১২ জন, মে মাসে ৩৬ জনের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে ২৩ জন ও বিষপানে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পারিবারিক কলহ, সামাজিক অস্থিরতা ও হতাশার কারণে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
অনুভূতিগুলো মনের মধ্যে আটকে থাকছে। মানুষ যখন জীবনের অর্থ খুঁজে পায় না, তখন আত্মহত্যা করে। কারণ মানুষের জীবনের অর্থ নিহিত হয় পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। যখন মানুষের লক্ষ্য ও প্রাপ্তির মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হয়, তখন নিজের জীবনকে মূল্যহীন মনে করে, আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply