নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আলোচিত যশোর পঙ্গু হাসাপাতালে কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী মফিজুর রহমানের (৬৫) ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখন পুলিশের হাতে। আঘাত জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে। প্রতিবেদনে মাথা, বুক, পেট, হাত ও পায়ে জোরালো আঘাতে তিনি মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। ফলে হত্যা মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না হাসপাতালটির মালিক ডা. আব্দুর রউফ ও তার সাঙ্গাপাঙ্গারা। মফিজুরের মৃত্যুর ঘটনা ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে দুরন্ত সত্যের সন্ধানে-দুসস সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মফিজুরকে আঘাতে হত্যার কথা উঠে এসেছে।
মফিজুর রহমানের বাড়ি ঝিনাইদাহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া গ্রামে। ২ এপ্রিল দুপুর ১২ টার পর মফিজুরএর লাশ যশোর সদর শহর মুজিব সড়কের পঙ্গু হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়। মফিজুর রহমানের মা ৯০ বছর বয়সী আছিয়া বেগমকে ২৭ই মার্চ পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হলে। মফিজুর রহমান ৩১শে মার্চ হাসপাতালর সপ্তম তলায় মাকে দেখে নিচে আসেন হাসপাতাল ফার্মসিতে ঔষধের বিলের টাকা পরিশাধের জন্য। তারপরথেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘটনায় দিন বিকেলে থানায় ডায়রি করা হয়। ২ মার্চ কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারেন পঙ্গু হাসপাতালের লিফটের নিচে এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে আছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিফটের দরজার চাবি নিয়ে মফিজুরের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশ হাসপাতালের লিফটের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে মফিজুরের ক্ষত বিক্ষত লাশ উদ্ধার করেন। লাশের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। মফিজুরের গলায় নিচে বুকে ডান পায়ে কোপানোর চিহ্ন পাওয়া যায়। পরের দিন ৩ এপ্রিল মফিজুরের ছোট ছেলে শেখ সোয়েব উদ্দীন বাদি হয়ে যশোর কোতয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি অজ্ঞাত দেখানো হয়। এ ঘটনায় পঙ্গু হাসপাতালর ম্যানেজার আতিয়ার রহমান, লিফটম্যান আব্দুর রহমানএবং জাহিদ গাজীকে ডিবি পুলিশ ও র্যাব হাসপাতালর কর্মচারী বাবু, কম্পিউটার ম্যান রনি, ইদ্রিসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজত নেয়। কিন্তু টাকা ও উপর মহলের তদবিরে পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে যানাগেছে।
নিহত মফিজুরের ভাই আলী হক ভাগ্নে অপু দাবি করেছেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের দাবি মিথ্যা বলে পঙ্গু হাসপাতালের মালিক ডা. আব্দুর রউফ অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এরপর থেকে দৈনিক কল্যাণ অনুসন্ধানে নামে। পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করেন র্যাব। আর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ডা. আব্দুর রউফ। অল্টোট পাল্টোট করে দেয়ার চেষ্টা করেন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। কিন্তু গণমাধ্যমের কারণেই শেষ পর্যন্ত সফল হননিঃ
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. বাবলু কিশোর বিশ্বাস ২রা এপ্রিল মফিজুর রহমানের ময়নাতদন্ত করেন। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট জমা দেন ৭ই এপ্রিল। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বাবলু কিশোর তার মন্তব্যে বলেছেন, রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মফিজুরের মৃত্যু হয়েছে। তিনি রক্তক্ষরণের কারণ হিসেবে বলেছেন মাথা, বুক, পেট, ও হাতে, পায়ে জোরালো আঘাতে রক্তক্ষরণ হয়। এর ফলে রক্ত শূন্যতায় মফিজুর রহমান মারা যায়। ময়না তদন্তের রিপোর্টের কোথাও বলা হয়নি পঙ্গু হাসপাতালের লিফট থেকে পড়ে আঘাতের কারণে মফিজুরের মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার বাবলু কিশোর বলেন, আঘাতজনিত কারণে রক্তক্ষরণে মফিজুরের মৃত্যু হয়েছে। তবে কিভাবে আঘাত পেয়েছে এটা আমি বলতে পারবো না। এটি বলবেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আমি মর্গে লাশ পেয়েছি। কিভাবে মারা গেছেন এ তথ্য বলতে পারি। এর বেশি আমি বলতে পারবো না। কারণ ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না তাই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই কাজী আবু জুবাইর বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে প্রত্যেকটি জিনিস আলাদা করে করে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিভিশন আছে। সাব ডিভিশন আছে। এটা আরো তদন্তের বিষয় আছে। লিফটের বিষয় নিয়ে লিফট কোম্পানির কাছে মতামত চেয়েছি। এছাড়া ঘটনার দিন ৭তম তলায় যারা ছিলো তাদের খোঁজ খবর করা হচ্ছে। তাদের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা চলছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। শেষ হলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সূত্র মতে,যশোর পঙ্গু হাসপাতালের মালিক ডা. আব্দুর রউফ। দীর্ঘদন ধরে হাসপাতাল চিকিৎসার নামে গলাকাটা ব্যবসা করছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী ও স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর সব অপকর্ম সেল্টার হিসেবে যশোর ষষ্ঠীতলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ম্যানসন, রায়পাড়া কয়লাপট্টির অনেক কে ব্যবহার করেন। ঘটনার দিন ৩১ মার্চ দুপুরে যখন মফিজুর রহমানের সাথে ডাক্তার রউফর বাকবিতন্ডা হয়। তখন ওই সন্ত্রাসীদের ডেকে আনে ডাক্তার রউফ। সজলের নেতৃত্ব বাপ্পি, আশিক, শিমুল, রমজান ও মদুলসহ একদল সন্ত্রাসী এসে মফিজুর রহমানকে হাসপাতালের গেট থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় রায়পাড়ায়। সেখানকার এক আইনজীবীর বাড়ির দ্বিতীয়তলায় আটকে রেখে মফিজুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যার পর লাশটি রাতেই যশোর পঙ্গু হাসপাতালের লিফটের নিচে ফেলে রেখে যান বলে সূত্রের দাবি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply