মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারত প্রতিনিধিঃ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে পেশির লড়াই চলতে থাকায় সারা বিশ্ব এখন দুটি শক্তিতে বিভক্ত। একদিকে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স সহ ন্যাটোভুক্ত সম্মিলিত শক্তি, অপরদিকে রাশিয়া, চিন, ভারত সহ ন্যাটো বহির্ভূত দেশ গুলি।
ন্যাটো এখন বিশ্বে সম্মিলিত বৃহৎ মিলিটারি শক্তি। এটি গঠন করা হয়েছিল এই উদ্দেশ্যে যে এই শক্তির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি কোন দেশের আক্রমণের লক্ষ্য হলে সেই আক্রমণকে ন্যাটোর বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসাবে ধরা হবে। সেই আক্রমণকে প্রতিহত করতে ন্যাটো সম্মিলিত সেনা সম্ভার নিয়ে শত্রু দেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ঈগলের দৃষ্টি পড়ায় আমেরিকা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য পাদের অফার দিয়েছিল। ইউক্রেন সেই প্রস্তাব মেনে নিয়ে ন্যাটোতে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। ব্যাপক এবং বিধ্বংসী যুদ্ধে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ায় আমেরিকা, ব্রিটেন সহ সম্মিলিত ন্যাটো। এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়া থেকে মাত্র ১৩৩২ কিলোমিটার দূরে ফিনল্যান্ড ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
ভবিষ্যতে ফিনল্যান্ডে যাতে কোন রকম হামলা হলে সেটি প্রতিহত করতে সক্ষম হয় সেজন্য ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগদান করে মাত্র দুদিন আগে। ফলে রাশিয়ায় প্রেসিডেণ্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফিনল্যান্ডের ওপর বেজায় চটে গেছেন। তিনি এই ঘটনাকে রাশিয়ার ওপর আমেরিকার প্রত্যক্ষ হুমকি বলে মনে করছেন।
এরই মধ্যে সকলকেই চমকে দিয়ে ন্যাটোতে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত জুলিয়ান স্মিথ ভারতকে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ভারতের জন্য ন্যাটোর দরজা উন্মুক্ত রয়েছে। এই প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের দুটি শিবিরেই উথাল পাথাল শুরু হয়ে গেছে। ভারত কি তাহলে ন্যাটোতে যোগদান করবেন?
প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টি নিয়ে এখনো মুখ খোলেন নি। ন্যাটোতে যোগদান করলে কী হতে পারে? ভারতের ওপর কোন প্রকার আঘাত এলে আমেরিকা সহ ন্যাটো আক্রমণকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই মুহূর্তে ভারতের কাছে উদ্বেগের কারণ হলো চীন। চীন ভারতকে আক্রমণের কোন হিম্মত দেখতে পারবে না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়াও ভারতের চরম শত্রুতে পরিণত হবে। রাশিয়ায় প্রেসিডেণ্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই মুহূর্তে ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অতীতে সকল সংকটে রাশিয়া ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে রাষ্ট্র বার বার রাশিয়া ভারতের পক্ষে ভেটো দিয়ে ভারতকে অক্সিজেন যুগিয়েছে।
বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় যখন ভারতের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনার গণহত্যার ফলে ভারতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে সেনা সাহায্য করেছিলেন। তখন পাকিস্তানকে সহযোগিতা করতে আমেরিকা বিশাল সপ্তম নৌবহর নিয়ে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে এসেছিল। সেদিনও ভারতকে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল রাশিয়া। আমেরিকার সপ্তম নৌবহরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাশিয়ার ডেস্ট্রয়ার সমুদ্রে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়েছিল। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আরো ত্বরান্বিত হতে পেরেছিল। ফলে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার মিত্রতা পরীক্ষিত। বিশেষজ্ঞদের মতে ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম মহা শক্তিধর দেশ। চীন ভারতের সীমান্তে চিৎফুট হামলা চালাতে পারে কিন্তু ব্যাপক আক্রমণের ক্ষেত্রে সাহস দেখাতে পারবে না। তাছাড়া আমেরিকা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য নয়। যেকোন সময়ে বেইমানি করতে পারে। ভারত রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা আমেরিকাকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছিল না। নাটোতে যোগদানের প্রস্তাব একটি আমেরিকার চাল বলেই ধরা উচিত।
ভারতকে পাশে পেলে রাশিয়াকে দুর্বল করা সহজ হবে ভেবেই জুলিয়ান স্মিথের মাধ্যমে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ঠিক আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা বাহিনী সরিয়ে নিয়ে তালিবানদের ক্ষমতা দখলের সুযোগ করে দেওয়াটাও ছিল রাশিয়াকে আঘাত করার একটা চাল। তবে এই মুহূর্তে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ভারত এই প্রস্তাব মেনে নেবে না কোনমতেই।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply