মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতঃ ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার সামরিক সংঘর্ষের একটি বছর পর এই প্রথম যুদ্ধ বিদ্ধস্ত ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ভারতে আসছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এমিনে ঝাপারোভা। ৪ দিনের সফরে তিনি ভারতে আসছেন। তার এই ভারত সফর যথেষ্ট তাৎপর্যময় বলে মনে করা হচ্ছে। এমনিতেই ইউক্রেনের সঙ্গে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে ভারত কোন পক্ষকেই সমর্থন করে নি সরাসরি।

যুদ্ধে ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউক্রেন। ইউরোপের দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যুদ্ধ এখনো থামেনি। এখনও ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণ চালাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী। আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়া থেকে অস্ত্র সাহায্য নিয়ে রুশ হামলা মোকাবিলার করে যাচ্ছে ইউক্রেন। এই পরিস্থিতিতেই ভারতে আসছেন ইউক্রেনের শীর্ষ এক মন্ত্রী এমিনে ঝারাপোভা। গত বছর রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে এই প্রথম সে দেশের কোনও মন্ত্রী ভারতে আসবেন। ঝাপারোভা সোমবারই আসছেন ভারতে। চার দিনের ভারত সফরে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। পাশাপাশি ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে মানবিক সাহায্যের জন্যও আবেদন জানাবেন।

ভারতে এসে ইউক্রেনের ডেপুটি বিদেশমন্ত্রী ঝাপারোভা ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মীণাক্ষী লেখি এবং জাতীয় নিরাপত্তার ডেপুটি উপদেষ্টা বিক্রম মিস্ত্রির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইউক্রেনের সঙ্গে উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও বহুমুখী সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। গত ৩০ বছর ধরে দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং প্রতিরক্ষায় দুদেশের মধ্যে আদানপ্রদান চলে। দুদেশের মধ্যে বোঝাপড়া ও সম্পর্ককে জোরদার করতে ইউক্রেনের মন্ত্রীর এই সফর।”

ভারত সফরে এসে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মানবিক সাহায্য এবং রাশিয়ান সেনার হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পুনর্নির্মাণের জন্য সাহায্য চাইতে পারেন।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের এই দ্বন্দ্বে সরাসরি কোনও পক্ষকে সমর্থণ করেনি ভারত। যুদ্ধ থামানোর আবেদন করলেও পুরনো বন্ধু রাশিয়ার বিরুদ্ধে যায়নি ভারত। এমনকি আমেরিকা সহ পশ্চিমী দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে ভারত। আবার যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে ওষুধ, খাদ্য সামগ্রী সহ বিভিন্ন সাহায্য পাঠিয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে।

ভয়ঙ্কর রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে ভারতকে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল। প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বহু চেষ্টাও করেছেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য। চিরন্তন বন্ধু রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভারত রাষ্ট্রসংঘেও নিন্দাসুচক প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। ফলে ইউক্রেনের ভিতর ভারতকে নিয়ে খানিকটা ক্ষোভ ছিল। কিন্তু তা সত্বেও বিপর্যস্ত ইউক্রেনকে ভারত যুদ্ধ চলাকালীন প্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তু ,ওষুধ সরবরাহ করে গেছে। এরফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের ছাত্র ছাত্রীরাও ইউক্রেন ছেড়ে দেশে ফিরে যেতে ভারতের গাড়ি এবং পতাকা ব্যবহার করে সীমান্ত পার হয়ে গেছে। বিবাদমান দুটি দেশই ভারতের পতাকা যুক্ত বাহনের ওপর হামলা করেনি। আগামী সোমবার ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এমিনে ঝারাপোভার সফরে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া জানা যাবে তার সফরের শেষে। ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সূত্রে জানা গেছে বিপর্যস্ত দেশের প্রতি ভারত চিরকালই মানবিকতার স্বার্থে কাজ করেছে। এই সফর রাশিয়ার বিরুদ্ধে নয়। সম্পূর্ন দুই দেশের মানবিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এই সফরকে স্বাগত জানানো হয়েছে।